কক্সবাজার

ভাসানচর দেখে ‘খুব সন্তুষ্ট’ জাতিসংঘ প্রতিনিধি দল

কক্সবাজার, ২০ মার্চ – নোয়াখালী ভাসানচরে পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল। টানা তিন দিন এই দ্বীপ চর পরিদর্শন, নিবিড় পর্যবেক্ষণ এবং সেখানে যাওয়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলার পর এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দলটির প্রতিনিধিরা। গত ১৮ মার্চ দুপুরে ভাসানচর পৌঁছে আজ শনিবার দলটির কর্মকর্তারা ভাসানচর থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকায় ফেরেন।

জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলটি ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের মুখোমুখি করে বারেবারে জানার চেষ্টা করেন,তাদের কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলো থেকে জোর করে এখানে পাঠানো হয়েছে কিনা। তবে রোহিঙ্গারা তাদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, তারা স্বেচ্ছায় ভাসানচরে এসেছেন,কেউ তাদের জোর করেনি। কেন এসেছেন এখানে এমন প্রশ্নের উত্তরে রোহিঙ্গারা তাদের জানিয়েছেন,তাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল কক্সবাজারের ঘিঞ্জি শরণার্থী শিবির থেকে উন্নত জীবন,বর্তমানে তা ভাসানচরে উপভোগ করছেন তারা।

(২০ মার্চ) শনিবার বিকেলে জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলের পরিদর্শনে বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে নোয়াখালী ভাসানচরে অবস্থানরত রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ মুঠোফোনে এমন মন্তব্য করেছেন।

গত বুধবার চট্টগ্রাম থেকে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশের সহকারী প্রতিনিধি ফুমিকো কাশিওয়ার নেতৃত্বে ১৮ জনের প্রতিনিধি দলটি ভাসানচর পৌঁছেছিল।

আরও পড়ুন : আওয়ামী লীগ করতে না পারলে যা করবেন কাদের মির্জা

রোহিঙ্গা নেতা ফয়েজ জানান,‘ভাসানচরে আবাসন, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রসহ বেড়িবাঁধ ঘুরে ঘুরে দেখেছেন প্রতিনিধি দলটির কর্মকর্তারা। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বৈঠকে সেখানে তারা জানতে চান ভাসানচরে কেন গেছেন? পাশপাশি কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির থেকে ভাসানচরে সুযোগ-সুবিধা কেমন? সেখানে কেমন ছিল, এখানে কেমন আছেন? তাদের আর কী কী সুযোগ-সুবিধা দরকার সেটিও জানতে চাওয়া হয়েছিল জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে। এর উত্তর দিয়েছেন সেখানে যাওয়া রোহিঙ্গারা। তাদের জবাবে প্রতিনিধিদল সন্তুষ্ট হয়েছেন।

পরিদর্শনকালে ভাসাননচরে রোহিঙ্গাদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এবং খেলাধুলার পরিবেশ দেখে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেন।

ভাসানচর প্রকল্পের (আশ্রয়ন প্রকল্প-৩) উপ-প্রকল্পের পরিচালক কমান্ডার এম আনোয়ারুল কবির জানান, ‘শনিবার দুপুর ২ টার পর জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল ভাসানচর ত্যাগ করেন। প্রতিনিধি দল টানা তিন দিন ভাসানচরের পরিবেশ আবাসন, ঘুর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রসহ বেড়িবাঁধ ঘুরে দেখেছেন। এছাড়া সেখানে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের দেওয়া সুযোগ-সুবিধা পর্যবেক্ষণ করে দেখেন।’

তিনি বলেন, আমরা যা জেনেছি সব মিলিয়ে ভাসানচরের প্রকল্পটি দেখে ‘যথেষ্ট সন্তুষ্ট’ হয়েছে জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল।

তিনি জানান, ‘ভাসানচরে যেসব এনজিও কার্যক্রম চালাচ্ছে তাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছে প্রতিনিধি দলটি। এমনকি ভাসানচরে যেসব খাপড় বানানো হচ্ছে, সেগুলোর মান দেখে সন্তেুাষ প্রকাশ করেন তাঁরা।’

এর আগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে সর্বশেষ চলতি মার্চের শুরুতে ভাসানচর পরিদর্শন করেছিল মুসলিম দেশগুলোর জোট ওআইসি’র একটি প্রতিনিধিদল।

আরআরআরসি কার্যালয়ের তথ্যমতে, গত ডিসেম্বর থেকে পাঁচ দফায় ভাসানচরে গেছেন মোট ১৩ হাজার ৭২৩ জন রোহিঙ্গা। এর আগে গত বছরের মে মাসে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করা ৩০৬ রোহিঙ্গাকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে সেখানে নিয়ে রাখা হয়। এছাড়া এরও আগে অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়া যেতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা ৩০৬ জন রোহিঙ্গাকে গত বছরের মে মাসে ভাসানচর নেওয়া হয়।

ভাসানচরে অবস্থানরত নুরুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, ‘প্রথমবারের মতো পরিদর্শনে আসা জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল ভাগ করে হয়ে প্রত্যেক ক্লাস্টারে গিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় রোহিঙ্গাদের খোঁজ খবর নেন। এছাড়া ক্যাম্প থেকে এখানকার জীবন মান কেমন এবং সুযোগ-সুবিধা কেমন পাচ্ছি, আর আমরা স্বেচ্ছায় এখানে এসেছি কিনা বিস্তারিত জানতে চান।’

এ ব্যাপারে নোয়াখালীর ভাসানচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মাহে আলম জানান, ‘তিন দিন ঘুরে দেখার পর জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল শনিবার দুপুরে ভাসানচর ত্যাগ করেন। প্রতিনিধি দলটি ভাসানচরে অবস্থানরত আবাসনে গিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন। এছাড়া সেখানকার পরিবেশ, পরিস্থিতি ঘুরে দেখেন এবং রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছিল। এমনকি হাতিয়ার সঙ্গে ভাসানচরের চলাচল রুটসহ সেখানকান ভৌগোলিক অবস্থাও পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন তারা।’

প্রসঙ্গত, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা ও নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। আগে আশ্রয় নেওয়াসহ বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে ঘিঞ্জি পরিবেশে বসবাস করছেন। শরণার্থীদের চাপ কমাতে দুই বছর আগে অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর হাতিয়ার কাছে মেঘনা মোহনার দ্বীপ ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ভাসানচরের পুরো আবাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
অভি/ ২০ মার্চ

Back to top button