কানাডা

টরন্টো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সৌধ (OTIMLDM) কমিটি থেকে ৮ জন পরিচালকের পদত্যাগ

টরন্টো, ৮ মার্চ- অর্গেনাইজেশন ফর টরন্টো ইন্টারন্যাশানাল মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ ডে মনুমেন্ট ইনক-এর কার্যনির্বাহী কমিটি থেকে একই দিনে (সোমবার) ৮ জন পরিচালক পদত্যাগ করেছেন। কমিটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের স্বেচ্ছাচারিতা, মিথ্যাচারিতা, লুটেরা তোষণ, সর্বোপরি অগঠনতান্ত্রিক বেশকিছু কার্যকলাপ তারা তাদের পদত্যাগ পত্রে উল্লেখ করেন।

পদত্যাগকারী পরিচালকরা হচ্ছেন- OTIMLDM-র ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ফাইজুল করিম, উদীচী কানাডার সুমন সাইয়িদ, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের শাকের চৌধুরী, নাট্য ব্যক্তিত্ব হাবিবুল্লাহ দুলাল, বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী অরুণা হায়দার, সাপ্তাহিক দেশের আলো সম্পাদক সাঈদুন ফয়সাল, সাপ্তাহিক ভোরের আলোর সম্পাদক খন্দকার আহাদ ও দেশে বিদেশের প্রধান সম্পাদক নজরুল মিন্টো। এর আগে বিভিন্ন কারণে OTIMLDM-র সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন ব্যারিষ্টার রিজওয়ান আহমেদ; এছাড়া আরও যারা পদত্যাগ করেছেন তারা হলেন সৈয়দ শামসুল আলম, খোকন আব্বাস, কফিল উদ্দিন পারভেজ ও রেজাউল করিম তালুকদার। আরও বেশ ক’জন পরিচালক পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

OTIMLDM কমিটির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো হলো:

(১) OTIMLDM (অর্গেনাইজেশন ফর টরন্টো ইন্টারন্যাশানাল মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ ডে মনুমেন্ট ইনক) গঠণতন্ত্র মোতাবেক পরিচালিত হচ্ছে না।
(২) শীর্ষ নেতৃত্ব কমিউনিটির নেতৃবৃন্দের দাবী (অভিযুক্ত লুটেরাদের বহিষ্কার) -কে অশ্রদ্ধা প্রদর্শণ করতঃ মিথ্যাচারিতা এবং নানান কৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করে তাদের (লুটেরা) কমিটিতে রেখে দেয়া।
(৩) বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট তথ্য গোপন করে অগঠণতান্ত্রিক চেয়ারম্যানকে দিয়ে জনৈক শামসুল আলম রিয়াজকে বোর্ডের পরিচালক হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা।
(৪) সংগঠনের বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট ম্যাক আজাদ প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে প্রাক্তন একজন পরিচালকের সন্তান সম্পর্কিত আপত্তিকর বক্তব্য ফেসবুকে পোষ্ট করা।
(৫) সংগঠনের একজন পরিচালকের স্বামী লুটেরা বিরোধী আন্দোলনের একজন কর্মীকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি দিয়ে হুমকি প্রদর্শণ করা।
(৬) অগঠণতান্ত্রিক চেয়ারম্যানের স্বামী উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে ফেসবুকে বিতর্কিত ব্যক্তিদের সাথে ছবি প্রদর্শণ করে একজন পরিচালককে হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা করা।
(৭) বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ৩০ হাজার ডলারের একটি অনুদান OTIMLDM কমিটির শীর্ষ নেতারা পরিচালক মণ্ডলীকে না জানিয়ে অজ্ঞাত কারনে ‘লাগবেনা’ বলে ফিরিয়ে দিয়ে পরবর্তীতে ‘গো ফান্ড’-এর মাধ্যমে টাকা উত্তোলনের উদ্যোগ গ্রহণ করা।
(৮) OTIMLDM কমিটি অঙ্গীকার করেছিলো ভাষা সৌধ নির্মানের পর এ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে কিন্তু এখন তারা চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের জন্য আরও পরিচালক নিয়োগ দিয়ে কমিটির স্থায়ীত্ব দীর্ঘায়িত করে পুরো কমিটিকে বিতর্কিত করে তুলেছে।
পদত্যাগকারী পরিচালকরা মনে করেন, OTIMLDM কমিটি বৃহত্তর টরন্টোর বাংলাদেশ কমিউনিটির কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে।

গত ৩ মার্চ ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে গঠণতন্ত্র অনুসরণ করে একটি সভা আহবান করেন। সভায় ৯ জন পরিচালক উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে সংগঠনের বিতর্কিত সভাপতি ম্যাক আজাদ ও চেয়ারম্যান দাবীদার চয়নিকা দত্ত উক্ত সভায় উপস্থিত থাকেননি। উপরোন্ত অন্যান্য পরিচালকরা যাতে না আসেন তাদেরকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিরুৎসাহিত করা হয়। কমিউনিটির চলমান লুটেরা বিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে সৃষ্ট সংকটের সমাধানকল্পে উক্ত সভাটি আহবান করা হয়েছিলো। যার অপেক্ষায় প্রহর গুণছিলেন কমিউনিটির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ।

উক্ত সভায় উপস্থিত পরিচালকবৃন্দ বিতর্কিত সভাপতি ম্যাক আজাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ইমেইল মারফৎ কিছু প্রশ্নের জবাব দেয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে একটি চিঠি প্রেরণ করেন। নীচে চিঠিটি তুলে ধরা হলো:

সভাপতি
OTIMLDM Inc.

বিষয়ঃ আইএমএলডিএম’র আপত্তিকর কার্যক্রম সম্পর্কিত

এই পত্রের মাধ্যমে আমরা কয়েকটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এবং এ ব্যাপারে আপনার কাছ থেকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যথাযথ সদুত্তর প্রত্যাশা করছি।

প্রথমেই টরন্টোতে বছরের পর বছর ধরে যাঁরা মহান ভাষা দিবসের আয়োজন করে আসছেন এবং টরন্টোর ডেন্টোনিয়া পার্কে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মনুমেন্ট স্থাপনের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন তাঁদের সবার প্রতি রইলো আমাদের কৃতজ্ঞতা এবং বিনম্র শ্রদ্ধা।

এ বিষয়ে কোন দ্বিমত নেই যে, বৃহত্তর টরন্টোতে বসবাসরত আমরা এখানকার বাংলাদেশ কমিউনিটিরই অংশ, এবং কমিউনিটির আশা-আকাঙ্খা, কমিউনিটির চাওয়া-পাওয়া, কমিউনিটির দাবী-দাওয়া ইত্যাদি প্রকারান্তরে আমাদেরই মনের কথা এবং এসবের সাথে আমরা সর্বদাই একাত্মতা প্রকাশ করি।

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের কাছে এ বিষয়টি স্পষ্ট প্রতীয়মান হচ্ছে যে, আমাদের সংগঠন (OTIMLDM) বাংলাদেশী কমিউনিটির কাছ থেকে এক প্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কমিউনিটির মতামতগুলো নিয়ে আমরা কয়েকজন বারবার কথা বলার চেষ্টা করলেও আপনি নানারকম টালবাহানার আশ্রয় নিয়াছেন এবং মিথ্যাচারিতাও করেছেন। OTIMLDM এর ভিতরে এবং বাইরে যখন তীব্র অসন্তোষ, তখন আমাদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বেশ কয়েকজন মেম্বার এর অনুরোধে গঠনতন্ত্রের ধারা মোতাবেক একটি বিশেষ জরুরি সভা আহবান করেন।

গত ৩রা মার্চ ২০২১ পূর্ব নির্ধারিত OTIMLDM এর বিশেষ এ জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোরাম পূর্ণ না হওয়ায় আমরা রেজুলুশন নিতে অপারগ হই। আমরা আনুষ্ঠানিক কোরাম না করতে পারলেও সংগঠনের স্বার্থে উপস্থিত সকল সদস্যদের সম্মতিক্রমে এ পত্র লেখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।

উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, OTIMLDM এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই আপনি ম্যাক আজাদ সংগঠনের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা না করে স্বেচ্ছাচারিতার পরিচয় দিয়ে আসছেন। সংগঠনের সম্মানিত পদকে আপনি অনিয়মতান্ত্রিকভাবে একক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে অবমাননা করেছেন। শুধু তাই নয়; আজ সংগঠনটিকে কমিউনিটির মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। কমিউনিটির মধ্য বিভেদ রেখা টেনে দিয়েছেন।

আপনার অনিয়মের কিছু উদাহরণ নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

১। বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল অফিস, টরন্টো OTIMLD কে বাংলাদেশ সরকার এর অনুদান দিতে চাইলে তা বোর্ড মেম্বারদের সাথে আলোচনা না করে শুধুমাত্র কনস্ট্রাকশন সাব কমিটির সাথে কথা বলে কনস্যুলেট জেনারেল অফিসকে না করে দেয়া হয় আমাদের অর্থের প্রয়োজন নাই বলে। পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে আপনি আপনার একক সিদ্ধান্তে কমিউনিটির কয়েকটি সোশ্যাল গ্রুপ কে “গো – ফান্ড” এর মাধ্যমে ডোনেশন কালেকশন এর অনুমতি দেন যেটা OTIMLDM নিজের নামেই করতে পারতো। আমরা মনে করি বিশেষ কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থে আপনি কনস্যুলেট জেনারেল অফিসকে অর্থের প্রয়োজন নেই বলে না করা দিয়েছেন।

২। টরন্টোর কমিউনিটির আহবানে গত ১২ই ফেব্রুয়ারি জুম মিটিং-এ আপনি সহ বেশ কয়েকজন পরিচালক উপস্থিত ছিলেন। সে মিটিং-এ কমিউনিটির দাবীর প্রেক্ষিতে দু’জন পরিচালক ৩/৫ দিন সময় নিয়ে তাদের এ দাবী পূরণ করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসেন। এবং এ লক্ষ্যে গত ১৯শে ফেব্রুয়ারী OTIMLDM-এর পরিচালকদের বোর্ড মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এজেন্ডাতে ঐ বিষয়টি উল্লেখ না করে অন্যান্য বিষয় সামনে নিয়ে আসেন। এবং পরবর্তীতে একজন পরিচালক যখন এ বিষয়টি এদিনের এজেন্ডাতে অন্তর্ভূক্ত করার দাবী জানান তখন এ বিষয়টাকে ৪ নম্বরে নিয়ে আসেন। বারবার বাধা দেয়া সত্বেও ঐ সভায় OTIMLDM-এর পরিচালকদের নামের সর্বশেষ তালিকা আপনি পাঠ করার জন্য উদগ্রীব হয়ে যান। ঐ তালিকায় গাজী বেলায়েত হোসেন মিঠুর নাম ছিল না কিন্তু তার স্ত্রী নাহিদ আক্তারের নাম ছিল। আপনাকে প্রশ্ন করা হলে আপনি জবাব দেন যে, বেলায়েত হোসেন মিঠু সদস্যপদ গ্রহণ করেননি। উক্ত সভায় এজেন্ডার বাইরে গিয়ে বিতর্কিত সদস্য নাহিদ আক্তারকে আপনি বক্তব্য রাখার সুযোগ দিয়েছেন। (বেলায়েত হোসেন মিঠু যদি সদস্যপদ না-ই নিয়ে থাকেন তাহলে তাকে পূর্ববর্তী সভায় ডেকে এনে সাফাই গাওয়ার সুযোগটা কে করে দিয়েছিলো?)

অবশেষে উপস্থিত সকল পরিচালকগণ নীতিগতভাবে একমত হন যে OTIMLDM কমিটিতে কোন বিতর্কিত ব্যক্তির পরিচালক হিসেবে থাকার সুযোগ নেই এবং কমিটির বিতর্কিত সদস্য নাহিদ আক্তারের কাছে এ মর্মে শো-কোজ নোটিস পাঠানো হবে।

উক্ত সভায় অশান্ত কমিউনিটির সাথে যোগাযোগ করার জন্য শাকের মোস্তফা চৌধুরীকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে আমরা বুঝতে পারলাম যে, পুরো ব্যাপারটা ছিলো কমিউনিটিকে ধোকা দেয়ার জন্য আপনার একটা অপচেষ্টা।

৩। গত ১৯শে ফেব্রুয়ারী মিটিংয়ের গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ফায়েজুল করিম বিতর্কিত সদস্য নাহিদ আক্তারকে প্রদেয় শো-কোজ নোটিসের একটি খসড়া তৈরী করে এ ব্যাপারে আপনার সাথে কথা বলেন এবং আপনার পরামর্শ অনুযায়ী চয়নিকা দত্তের সাথে কথা বলেন। ঐ সময় ফায়েজুল করিম আপনার কাছে ২৬শে ফেব্রুয়ারির সভার এজেন্ডা নিয়েও জানতে চান। কিন্তু আপনি তাকে অবজ্ঞা করে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
ফায়েজুল করিম কর্তৃক চয়নিকা দত্তের কাছে প্রেরিত ইমেইল পাওয়ার পর চয়নিকা দত্ত শো-কোজ ড্রাফটিকে ইংরেজীতে অনুবাদ করার কথা বলেন এবং আরো জানান যে কমিটির কোন পরিচালককে অব্যাহতি প্রদান করতে গেলে রয়েছে আইনি ঝামেলা, মামলা-মোকদ্দমার বিড়ম্বনা এবং সর্বোপরি আর্থিক ক্ষতির ঝুঁকি। অথচ এসব বিষয় তিনি ১৯শে ফেব্রুয়ারীর কমিটির পরিচালকদের সভায় একবারের জন্যও উল্লেখ করেননি।
নাহিদ আক্তারকে শো-কোজ প্রদানের ব্যাপারে এহেন টালবাহানা প্রমাণ করে যে, কমিটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ তাকে বহিষ্কার করতে পুরোপুরি অনিচ্ছুক এবং এতে তাদের ব্যক্তিস্বার্থ জড়িত রয়েছে।

৪। আপনি ম্যাক আজাদ এবং চয়নিকা দত্ত কমিউনিটির মতামতকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের মতামতকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে ২৬শে ফেব্রুয়ারী তথাকথিত কমিউনিটির নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠকের আমন্ত্রণ জানিয়ে একটি ইমেইল প্রদান করলেন।

ইমেইলের বার্তাটি ছিল নিম্নরূপ-

“সুধী,অর্গানাইজেশন ফর টরন্টো ইন্টারন্যাশনাল মাদার ল্যাংগুয়েজ ডে মনুমেন্ট ইনক (OTIMLDM Inc.) নির্মাণ কাজের অগ্রগতি এবং বিস্তারিত বিষয় নিয়ে আপনাদের সামনে অনলাইনে উপস্থিত হবো.”

উক্ত ই-মেইল প্রমান করেছে যে ওই বৈঠকটি ছিল আপনাদের একটা সাজানো নাটক এবং OTIMLDM-র অধিকাংশ সদস্য ছিলেন অনুপস্থিত। উক্ত বৈঠকে আপনাদের ডাকে কমিউনিটির প্রধান কোনো সংগঠন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী কোনো সংগঠনের কোনো প্রতিনিধি আসেননি। উপরোন্ত তারা আপনাদের আহবান প্রত্যাখ্যান করেছেন বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিবৃতি প্রদান করেন।

আপনার ভুল তথ্য সম্বলিত রিপোর্ট পরিবেশন এবং পরপরই কথিত লুটেরার সহযোগী, কমিউনিটির বিতর্কিত বোর্ড মেম্বার নাহিদ আক্তারের সাফাই গেয়ে বক্তব্য রাখা শুরু করেন রুমানা চৌধুরী, মির্জা শহীদুর রহমান সহ আরো কয়েকজন বোর্ড মেম্বার যা আমাদের কমিউনিটির সর্বস্তরের মানুষকে চরম ভাবে বিক্ষুব্ধ করে এবং OTIMLDM এর পুরো কমিটির প্রতি অনাস্থার সৃষ্টি করেছে।

৫। আপনার বিরুদ্ধে আরও একটি অভিযোগ রয়েছে যে, আপনি BOD এর অনুমতি না নিয়ে জনৈক শামসুল আলম রিয়াজ এর নাম বোর্ড মেম্বার হিসাবে চেয়ারম্যান এর কাছে প্রেরণ করেন এবং চেয়ারম্যান ওই নাম বোর্ড মেম্বার হিসাবে রেজিস্টার করেন যা অগঠতান্ত্রিক এবং সম্পূর্ণ অবৈধ।

আমরা লক্ষ্য করছি যে উপরোক্ত ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও বোর্ডের অনেক পরিচালক কমিটির অনিয়ম, অনৈতিক কার্যকলাপ দেখে নীরব ভূমিকা পালন করছেন যা প্রকারন্তে লুটেরাদের সমর্থক হিসাবে তাদেরকে প্রমাণ করে। আমরা মনে করি টরন্টোর এই স্মৃতিস্তম্ভ সৃষ্টির ইতিহাসে এসব ব্যক্তিবর্গ লুটেরাদের সহযোগী হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

এ চিঠির মাধ্যমে OTIMLDM এর সামগ্রিক পরিস্থিতি, সংগঠনের চরম অব্যবস্থা, নেতৃত্বের স্বেচ্ছাচারিতা এবং অনৈতিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে আমরা তীব্র ঘৃণা এবং প্রতিবাদ করছি।

আগামী শনিবার ৬ মার্চ, ২০২১ (সর্বশেষ সময় রাত ১২টা) এর মধ্যে অভিযুক্ত লুটেরাকে বহিষ্কার এবং আপনার অনৈতিক, সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপের জবাব দেয়ার জন্য এ চিঠি প্রেরণ করা হলো। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জবাব না পেলে আমরা নিম্নে বর্ণিত বোর্ড মেম্বারগণ আপনার প্রতি ও OTIMLDM বর্তমান কমিটির লুটেরাদের রক্ষক যারা রয়েছেন তাদের প্রতি অনাস্থা, কমিউনিটির কাছে তাদের মুখোশ উন্মোচন সহ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হবো।

অবশেষে চিঠির কোনো উত্তর না পেয়ে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী উল্লিখিত পরিচালকগণ গত সোমবার পদত্যাগ করেন।

উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে শহীদ মিনার নির্মাণ নিয়ে একদিকে সিটির সাথে দেনদরবার, অন্যদিকে নিজেদের মধ্যে বিস্তর কলহ শুরু হলে দেশে বিদেশে’র সম্পাদক, ভোরের আলো সম্পাদকসহ কমিউনিটির নেতৃস্থানীয় বেশ কিছু ব্যক্তিবর্গ OTIMLDM কমিটি পুনর্গঠন করার দাবী জানিয়ে ৫২ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করার পরামর্শ দিয়েছিলেন; যাতে কমিউনিটির সামাজিক, সাংস্কৃতিক, আঞ্চলিক, পেশাজীবী সংগঠনগুলোর শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিবর্গকে এ মহান উদ্যোগের অংশীদার করা যায়। এদিকে কেবল অর্থ দিয়ে ডাইরেক্টর হওয়া অনেকেই পছন্দ করছিলেন না। আবার কেউ কেউ মনে করেন, একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তিও ডাইরেক্টর থাকা সমীচীন নয়। তাদের মতে প্রত্যেক ডাইরেক্টরকে তাদের জীবন বৃত্তান্ত জমা দেয়া উচিত যেখানে অন্যান্য যোগ্যতার সাথে কমিউনিটিতে তাঁর অবদানের কথা উল্লেখ থাকবে; আবার কে কোন সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব করেন তাও জানা যাবে। অনেকে মনে করেন, যারা এই মহৎ কাজের সাথে জড়িত থাকবেন কমিউনিটিতে তাদের যেন গ্রহণযোগ্যতা থাকে। কয়েকজন সংগঠক তাদের অভিমত ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, কমিটিতে যেন কোন লুটেরা, কনভিকটেড কিংবা দেউলিয়া ঘোষিত (ব্যাঙ্কক্রাপটেড) লোক না থাকেন। মহৎ কাজটি সঠিকভাবে সুসম্পন্ন করার জন্য তারা ক্লিন ইমেজের লোকজনকে কমিটিতে স্থান দেয়ার দাবী জানিয়ে আসছিলেন।

লুটেরা বিরোধী আন্দোলন

গত বছরের শুরুতে পত্র-পত্রিকায় খবর আসে বাংলাদেশ থেকে কতিপয় লোক শত শত কোটি টাকা বিভিন্ন পন্থায় লুট করে নিয়ে কানাডায় বসতি স্থাপন করেছে। এদের মধ্যে পরিচিত দু’জনের নাম এবং ছবি ছাপা হয় মিডিয়ায়। অতঃপর নগরীতে লুটেরা বিরোধী আন্দোলন দানা বাঁধতে থাকে। এসময় আরও জানা যায়, অভিযুক্ত এ দু’জন লুটেরা OTIMLDM কমিটিতে পরিচালক হিসেবে রয়েছেন। ক্ষোভে-নিন্দায় ফোঁসে ওঠে নগরীর বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা। এ দু’জন অভিযুক্তকে বহিষ্কারে দাবীতে আন্দোলন শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তারা OTIMLDM কমিটির সাথে বৈঠক করে এদেরকে বহিষ্কার করার জোর দাবী জানায়। কিন্তু কমিটির বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট ও চেয়ারম্যান এবং তাদের দোসর কতিপয় পরিচালক নানান টালবাহানা করে অভিযুক্তদের পক্ষ অবলম্বন করে। OTIMLDM কমিটির সচেতন পরিচালকগণ বার বার শীর্ষ নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করার পরও তারা অনড় অবস্থান গ্রহণ করে। অতঃপর কমিউনিটির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের প্রতি সহমত পোষণ করে ৮ জন পরিচালক পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

লুটেরা বিরোধী সামাজিক আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরেছেন আন্দোলনকারীরা। কমিউনিটির সদস্যদের আহবান জানিয়ে তারা বলেছেন, স্বদেশের শপথে বলুন, আপনি লুটেরাদের ঘৃণা করেন এবং এখন থেকে আপনি-
১। তাদের অংশগ্রহনের কোন অনুষ্ঠান-আয়োজন-উদযাপনে যাবেন না, বর্জন করবেন।
২। তাদের কাছ থেকে কোন ধরণের আর্থিক ও অন্যান্য সহযোগিতা নেবেন না, দেবেন না।
৩। যারা তাদের কাছে থেকে দান-অনুদান-সহযোগিতা নিয়ে কিছু করবে তাকে বর্জন করবেন, সেখানে যাবেন না।
৪। লুটেরাদের সহযোগীদের দ্বারা আয়োজিত কোন অনুষ্ঠান উদযাপনে যাবেন না, বর্জন করবেন। লুটেরাদের সহযোগীদের কাছ থেকে কোন ধরণের আর্থিক ও অন্যান্য সহযোগিতা নেবেন না, দেবেন না।
৫। লুটপাট-দূর্ণীতি-পাচার সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য, মতামত, দেশের আর্থিক-সামাজিক ক্ষতির বিষয়গুলো সামাজিক মাধ্যম ও গ্রুপগুলোতে গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরবেন, অন্যদের শেয়ার করবেন।
লুটেরা বিরোধী আন্দোলনের লক্ষ্য এখন কেবল লুটেরারা নয়; লুটেরাদের সহযোগীদের চিহ্নিত করে এদেরকে বয়কটের ডাক দিয়েছেন তারা।

Back to top button