জাতীয়

৯৮১ কোটি টাকায় দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠবে রাজধানীর ৪ খাল

ঢাকা, ১৬ ফেব্রুয়ারি – রাজধানীর চারটি খাল উদ্ধার করে সেগুলোকে দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তুলতে ৯৮১ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ঢাকা ওয়াসা থেকে খালের দায়িত্ব পাওয়ার পর এ প্রকল্প নেওয়া হয়। খাল উদ্ধার করে দুই পাড়ে বানানো হবে ওয়াকওয়ে, বাইসাইকেল লেন, মাছ ধরার শেড, বাগান, ফোয়ারা, ফুটওভার ব্রিজ, ইকোপার্ক, পাবলিক টয়লেট, খেলার মাঠ।

প্রকল্পটি এরইমধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে ডিএসসিসি। প্রকল্পের নাম রাখা হয়েছে ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল পুনঃরুদ্ধার, সংস্কার ও নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি’।

এ ছাড়া ধোলাইখালের বক্স কালভার্ট, পান্থপথের বক্স কালভার্ট ও সেগুনবাগিচা বক্স কালভার্ট পরিষ্কার ও পলি অপসারণের জন্য নিজস্ব অর্থায়নে ২৫-৩০ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্পও নেওয়া হচ্ছে। খাল থেকে আবর্জনা অপসারণের জন্য রয়েছে ১০০ কোটি টাকার প্রকল্প।

কেন এ প্রকল্প?

আরও পড়ুন : বংশ পরম্পরায় ভারত তোষণ করে আসছে আওয়ামী লীগ: গয়েশ্বর

ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে, বড়সড় এ প্রকল্পের উদ্দেশ্যগুলো হচ্ছে- পরিবেশের উন্নয়নে দক্ষিণ সিটি এলাকার খালগুলোর পানি প্রবাহ ঠিক রাখা, খালে ময়লা-আবর্জনা না ফেলার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ, পানির প্রবাহ ঠিক রাখার মাধ্যমে মশার প্রজনন বন্ধ করা, ওয়াকওয়ে নির্মাণ, গ্রিনবেল্ট ও বসার স্থান বানিয়ে বিনোদনমূলক ও জনসেবা ত্বরান্বিত করা, জলাশয়ে মাছ চাষের পাশাপাশি নৌ-চলাচলের ব্যবস্থা করা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ডিএসসিসির ৫০ লাখ লোক জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা পাবে বলে জানিয়েছে ডিএসসিসি।

বদলে যাবে যে চারটি খাল

ডিএসসিসির কালুনগর, জিরানি, মান্ডা ও শ্যামপুর খালের জন্য প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। এরমধ্যে অঞ্চল ৩-এর কালুনগর খালটি শহীদ বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিব সরকারি মহাবিদ্যালয় হতে রায়ের বাজার স্লুইচ গেট পর্যন্ত বিস্তৃত। এর দৈর্ঘ্য ৩ কিলোমিটার ও গড় প্রস্থ ১২ মিটার। এটি ডিএসসিসির ২২ ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে।

অঞ্চল ৬-এর জিরানী খালের (নন্দিপাড়া ব্রিজ ত্রিমহোনী) দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ২০ মিটার। এটি ৭৫, ৭৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডে পড়েছে। অঞ্চল ৭-এর মান্ডা খালের দৈর্ঘ্য ৮ দশমিক ২ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ২৫ মিটার। এটি ডিএসসিসির ৭১, ৭২, ৭৩, ৭৫ ও ৭ নং ওয়ার্ডে। অঞ্চল ১০-এর শ্যামপুর খালের দৈর্ঘ্য ৫ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১২ মিটার। এটি পড়েছে ৫৮ ও ৫৯ নং ওয়ার্ডে।

কোন খালে কত ব্যয়?

প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৮০ কোটি ৯১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। রাজস্ব খাত হতে আসবে ২৫ কোটি ৯৮ লাখ। যা মোট ব্যয়ের ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ। বাকিটা আসবে মূলধন খাত হতে।

আরও পড়ুন : অভিজিৎ হত্যা মামলা: আদালত প্রাঙ্গণে কড়া নিরাপত্তা

কালুনগর খালের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭১ কোটি ১ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। জিরানী খালের ব্যয় ২১৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা। মান্ডা খালের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা। শ্যামপুর খালের জন্য ২৩০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। কনসালটেন্সি ফার্মের জন্য রাখা হয়েছে ১৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।

বিদ্যমান রাজস্ব খাতের জনবল নিজ দায়িত্বসহ প্রকল্পের দায়িত্বও পালন করবে। এ ছাড়া একজন সহকারী স্থপতি ও ৬ জন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পুর) প্রকল্প মেয়াদকাল পর্যন্ত অস্থায়ী নিয়োগ পাবেন।

কোন খালে কী থাকবে

কালুনগর খাল উন্নয়ন পরিকল্পনায় থাকছে- নান্দনিক ৫০০টি বাতি, ২৫০টি সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল, ২ কিলোমিটার ড্রেনেজ স্ট্রাকচার, ড্রেনেজ লাইনসহ সুয়ারেজ ফিলটারিং সিস্টেম, ৮ হাজার ঘনমিটার জলাশয়, খালের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা, ৪০ হাজার ঘনমিটার জলাশয় ও খালের নিচের পলি অপসারণ, প্রকল্প চলাকালীন ২৫০ মিটার নিকটবর্তী স্থাপনার সুরক্ষা, ৪০ হাজার ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন কাজ, ৩০ হাজার বর্গমিটার এলাকা সবুজায়ন ও ল্যান্ডস্কেপিং।

আরও থাকছে ১০ হাজার বর্গমিটার বাগান, ১০ হাজার বৃক্ষরোপণ, ৫ কিলোমিটার দৃষ্টিগোচর সুরক্ষা বেষ্টনী (৮ ফুট উঁচু), ২০ হাজার বর্গমিটার ওয়াকওয়ে, বাইসাইকেল লেন, ২টি ফুডকোর্ট ও কফিশপ, ২টি প্লাজা, ৮০টি বসার বেঞ্চ ও শেড, ২০০টি স্থানে ওয়েস্টবিন স্থাপন, ২টি সাইট দর্শনের স্থান, ৫ হাজার বর্গমিটার ইকোপার্ক ও শিশুদের খেলার জায়গা।

এ ছাড়া ২টি পাবলিক টয়লেট, ২টি পার্কিং ব্যবস্থা, ২টি ব্যায়াম করার শেড, ৩০ হাজার বর্গমিটার সুরক্ষা দেয়াল, ৫০০ ঘনমিটার আরসিসি রিটেনিং ওয়া, ৩০০ বর্গমিটার শোর প্রোটেকশন সবুজায়ন, ১টি পথচারী সেতু, অর্ধ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ রোড (৫ মিটারের বেশি), ২টি স্লুইচ গেট, ২টি পাম্প হাউস ও ১টি ফোয়ারাও থাকবে।

জিরানি খালে থাকবে নান্দনিক এক হাজার বাতি, ৫০০টি সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল, ৩ কিলোমিটার ড্রেনেজ স্ট্রাকচার, ড্রেনেজ লাইনসহ সুয়ারেজ ফিলটারিং সিস্টেম, ৬ হাজার ঘনমিটার জলাশয়। কালুনগরের মতো এ খালেও আবর্জনাঅপসারণ, পলি অপসারণ, ভূমি উন্নয়ন, সবুজায়ন ও ল্যান্ড-স্কেপিং করাসহ বাদবাকি সুযোগসুবিধা রাখা হবে।

আরও পড়ুন : কাউকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে দেয়া হবে না : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

মান্ডা খালে থাকবে এক হাজার ৮০০টি নান্দনিক বাতি ও ৮০০টি সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল। এ ছাড়া কালুনগর খালের মতো এখানেও সমস্ত সুযোগসুবিধা রাখা হবে।

শ্যামপুর খাল নিয়েও পরিকল্পনা প্রায় একই। তবে এখানে সবুজায়ন হবে ২০ হাজার বর্গমিটার এলাকাজুড়ে। যথারীতি থাকছে ওয়াকওয়ে, ফুডকোর্ট, প্লাজা বেঞ্চ-শেড, ইকো পার্ক ও শিশুদের খেলার স্থানসহ বাকি সব সুবিধা।

মেয়র যা বললেন

ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন এবং প্রাকৃতিক খালের ব্যবস্থাপনা নিয়ে গত ২৪ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার বিভাগে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘ওয়াসা থেকে খালের দায়িত্ব নেওয়ার পর খাল সংস্কার ও আধুনিকায়নে প্রায় ১১টি দীর্ঘমেয়াদী কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ৪টি খাল ও ২টি বক্স কালভার্ট চিহ্নিত করা হয়েছে। এ খাল ও বক্স কালভার্টগুলো সংস্কারের জন্য আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি খালের অবৈধ স্থাপনা ও বর্জ্য অপসারণ কাজ চলমান রয়েছে। গত বছরের জলাবদ্ধতার কারণ চিহ্নিত করে ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে জরুরিভিত্তিতে অবকাঠামো উন্নয়নের কার্যক্রমও নেওয়া হয়েছে।’

জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ও ডিএসসিসির প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ঢাকার জলাবদ্ধতা তো যাবেই, শহরের চেহারাও বদলে যাবে।’

সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন
এন এইচ, ১৬ ফেব্রুয়ারি

Back to top button