জাতীয়

দলে ‘তার জন্য’ তর্ক হোক চান না রেজা কিবরিয়া

ঢাকা, ০৮ ফেব্রুয়ারি – গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া দলীয় ও সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। গতকাল রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রেজা কিবরিয়া এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি গণফোরামের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করেছি এবং আমার পদত্যাগপত্র দলের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের কাছে ইতিমধ্যেই জমা দিয়েছি। এ ছাড়া আমি গণফোরামের দলীয় সদস্যপদ থেকেও ইস্তফা দিয়েছি।’

আজ সোমবার পদের প্রতি কোনো লোভ নেই বলে জানান এই রাজনৈতিক। তার কারণে দলে কোনো তর্ক হোক, তিনি চান না বলেও জানান। দলের ভেতরের বিরোধের কারণে তিনি গণফোরাম ছেড়েছেন বলে রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জানান তিনি।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপের সময় রেজা আরও বলেন, ‘দলের কোনো পদের প্রতি আমার কোনো লোভ নেই। আমি চাচ্ছিলাম না আমার কারণে দলের মধ্যে কোনো তর্ক হোক। দল ভালো করবে, তা আমি সব সময় চাই। কোনো পদ–পদবি নিয়ে দলে অসন্তোষ থাকবে, আমি এটা চাই না। তারা ২৫ বছর কাজ করেছেন, দলকে অনেক ঊর্ধ্বে নিয়ে গেছেন, আমি দেড় বছরে হয়তো সেটা পারিনি। ওনারা হয়তো সামনে আরও অনেক কিছু করবেন। আমি দলের ভালো চাই। আমার মনে হয়, এখন একটা জাতীয় ঐক্য তৈরি করা প্রয়োজন।’

রোববার পদত্যাগ করে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পেরে রেজা কিবরিয়া ড. কামাল হোসেন ও গণফোরামের নেতৃবৃন্দের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বিজ্ঞপ্তিতে রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশে যারা গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করছেন, তিনি তাদের সঙ্গে কাজ করে যাবেন।’

আরও পড়ুন : সুন্দরবনে ফের আগুন, পুড়ছে গাছ

আজ সোমবার তিনি গণমাধ্যমকে জানান, দলের জন্য, দেশের জন্য গণফোরামের কয়েকজন নেতার যে আকাঙ্ক্ষা, তার সঙ্গে রেজার কোনো মিল নেই। দল ও পদ ছাড়ার বিষয়ে তিনি গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে আলোচনা করেই নিয়েছেন বলে জানান তিনি। এ সময় কামাল হোসেনের সঙ্গে তার সম্পর্ক আগের মতোই আছে বলেও জানান রেজা।

রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘গণফোরামের অন্তর্দ্বন্দ্ব একাদশ জাতীয় সংসদে দলীয় নেতা মোকাব্বির খানের যোগ দেওয়া নিয়ে শুরু হয়। মোকাব্বির খানের সংসদে যাওয়া নিয়ে দলে দুটি ভাগ হয়ে যায়। মোকাব্বির খান নির্বাচিত হয়েছেন এবং দলের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য। কিন্তু ওনার সম্পর্কে যে কথাগুলো বলা হয়েছে, বহিষ্কার করা হবে এবং যে আচরণ করা হয়েছে, তা আমার পছন্দ হয়নি।’

মোকাব্বির খানের সংসদে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার জন্য গণফোরামের দুজন নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও তারা দায়িত্ব পালন করেননি বলে জানান রেজা কিবরিয়া। মোকাব্বির খানকে সংসদে যোগ দেওয়ার জন্য বলার পর থেকেই ঝামেলা শুরু হয় জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এই রাগে সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু গণফোরামের কাউন্সিলে অংশ নেননি।’ যে কারণে তাকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয় বলে জানান রেজা কিবরিয়া।

গণফোরামের সদ্য সাবেক এই নেতা আরও বলেন, ‘এ দেশে কোনো কিছু নিয়ে বিরোধিতা করার সুযোগ খুব কম। সেখান থেকে দলের একজন প্রথমবারের মতো সংসদে যাওয়ার সুযোগ পেলে সেই সুযোগ নিতে হবে। মোকাব্বির খানের সংসদে যোগ দেওয়াকে সমর্থন করেছিলাম।’

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক হওয়া এবং ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে কাজ করতে পারাকে জীবনের অন্যতম বড় অর্জন বলে উল্লেখ করেন রেজা কিবরিয়া। তিনি বলেন, কামাল হোসেন কী মাপের মানুষ, তা আন্দাজ করার ক্ষমতা তার দলের অনেকের নেই। এই দলের আরও অনেক দূর যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা হয়নি। দলের লোকজনও কামাল হোসেনকে যে মূল্যায়ন করার কথা, তা করেনি।

বিএনপি বা অন্য কোনো দলে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেননি জানিয়ে রেজা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি কী করব। পরিস্থিতি কী দাঁড়ায় তা দেখব।’ এ সময় নিজের বাবা ও আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত শাহ এ এম এস কিবরিয়া প্রসঙ্গ টেনে রেজা বলেন, বাবা আওয়ামী লীগে ছিলেন বলে সেখানে যেতে হবে এমন কোনো কথা নেই। আওয়ামী লীগের এখন অনেক পরিবর্তন। তাদের যে মনোভাব, তা আগে ছিল না। তারা এখন নিশ্চিন্তে মিথ্যা বলে। তারা মানুষকে তোয়াক্কা করে না। আগে আওয়ামী লীগের জন্য এবং বাবার জন্য জনমত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এখন তা নেই। এই দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে দেশেই থাকবেন না কী করবেন ঠিক করেননি বলে জানান এই রাজনৈতিক। তবে রাজনীতির সঙ্গে থাকবেন বলে জানান রেজা কিবরিয়া।

সূত্র : আমাদের সময়
এন এ/ ০৮ ফেব্রুয়ারি

Back to top button