জাতীয়

একযোগে টিকা নেবেন মন্ত্রী-এমপিরা

ঢাকা, ০৫ ফেব্রুয়ারি – দেশব্যাপী টিকাদান শুরুর প্রথম দিন সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সচিবসহ সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা টিকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এসব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি একযোগে প্রথম দিন টিকা নেবেন। তাদের টিকাদানের জন্য রাজধানীর মহাখালীর শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটসহ কয়েকটি হাসাপাতাল নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে তাদের পাশাপাশি অন্য সম্মুখসারির করোনাযোদ্ধারাও এসব হাসপাতালে টিকা নিতে পারবেন।

রাজধানীর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলায় সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও প্রথম দিন টিকা নেবেন। এজন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিভিন্ন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের আহ্বান জানিয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সব মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হতে যাচ্ছে। সেদিন থেকে ঢাকাসহ দেশে ১৯ শ্রেণির করোনার সম্মুখযোদ্ধারা এবং ৫৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষ টিকা নিতে পারবেন। আগে প্রথম দফায় ৬০ লাখ মানুষের টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও এখন প্রথম দফায় ৩৫ লাখ মানুষকে টিকা দেবে সরকার। কারণ ইতিমধ্যেই দেশে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৭০ লাখ টিকা দেশে এসে পৌঁছেছে। এর মধ্যে ২০ লাখ টিকা ভারত সরকার উপহার হিসেবে দিয়েছে এবং বাংলাদেশ সরকারের কেনা ৩ কোটি ৪০ লাখ টিকার মধ্যে ৫০ লাখ টিকা রয়েছে।

আরও পড়ুন : হাঙ্গেরিকে ৫ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন দিতে চেয়েছিল বাংলাদেশ

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, টিকার প্রতি মানুষকে আগ্রহী করতে এবং টিকার জন্য নিবন্ধন বাড়াতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রথম দিনই টিকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ সারা দেশে টিকা শুরুর তারিখ নির্ধারণ হলেও সে অনুপাতে মানুষের মধ্যে এখনো টিকা নিতে অতটা আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। বিশেষ করে ২৭ জানুয়ারি থেকে টিকার জন্য নিবন্ধন শুরু হলেও গতকাল পর্র্যন্ত মাত্র ১ লাখ ৮৬ হাজার মানুষ নিবন্ধন করেছেন। অথচ প্রথম দফায় ৩৫ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এমন অবস্থায় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রথম দিনই টিকা নিলে অন্য শ্রেণির মানুষ টিকা নিতে ও টিকার নিবন্ধন করতে উৎসাহ পাবে।

অবশ্য মন্ত্রী-এমপিদের টিকা নেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে কোনো হাসপাতাল নির্দিষ্ট করা হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয় নিজে গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে টিকা নিতে চেয়েছেন। তার সঙ্গে ওই হাসপাতালে টিকা নিতে তিনি অন্য মন্ত্রীদেরও আহ্বান জানিয়েছেন। সেজন্যই চিন্তা করা হচ্ছে ওই হাসপাতালসহ আরও কয়েকটি হাসপাতালে তাদের টিকা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। তবে এসব হাসপাতালে অগ্রাধিকার ক্যাটাগরির অন্য মানুষও টিকা নিতে পারবেন।

এর আগে গত ২৮ জানুয়ারি ঢাকায় দেশে করোনার টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হিসেবে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সচিব, অর্থনীতিবিদ ও উপাচার্যসহ অন্তত আটজন গুরুত্বপূর্ণ (ভিআইপি) ব্যক্তি টিকা নেন। এর আগের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভার্চুয়ালি টিকা কর্মসূচির উদ্বোধন করে প্রথম পাঁচজনকে টিকা নেওয়া দেখেন। পরে ওই হাসপাতালে আরও ২১ জন টিকা নেন। টিকাগ্রহণকারী কারও মধ্যে এখনো মারাত্মক বা জটিল কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এসব টিকাগ্রহীতা বলেছেন, তারা সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন, ন্যূনতম শারীরিক কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি। এমনকি টিকা নেওয়ার পর তারা পুনরায় তাদের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড শুরু করেছেন। এসব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে দেশের মানুষকে নির্দ্বিধায় করোনার টিকা নিতে আহ্বান জানান। তারা টিকাকে ঘিরে কোনো ধরনের গুজবে কান না দেওয়ারও পরামর্শ দেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও গত দুদিন আগপর্যন্ত টিকার জন্য নিবন্ধনে তেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না মানুষের। যদিও বৃহস্পতিবার থেকে নিবন্ধনের গতি কিছুটা বেড়েছে। তাই নিবন্ধন বাড়াতে ও টিকা নিতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে দেশব্যাপী টিকাদানের প্রথম দিন সরকারের মন্ত্রী-এমপিসহ সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা টিকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী টিকা নেবেন। উনি সব মন্ত্রীকে আহ্বান করেছেন ওখানে নিতে। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে আলাদা কোনো কেন্দ্র করা হয়নি। ৭ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্যমন্ত্রী নেবেন। উনি নিজের থেকেই গ্যাস্ট্রোলিভারে নিতে চেয়েছেন। তাই সেখানেই সব মন্ত্রী ও কর্মকর্তা টিকা নেবেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, অতিরিক্ত মহাপরিচালকসহ অন্য কর্মকর্তারাও প্রথম দিনই টিকা নেবেন। তাদের নিবন্ধন করে টিকা দেওয়া হবে। তাদের তালিকা আছে। অসুবিধা হবে না।

৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হচ্ছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও অধিদপ্তরের এনসিডিসিআর বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয় যেহেতু গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে টিকা নিতে চেয়েছেন এবং অন্য মন্ত্রীদেরও সেখানেই টিকা নিতে বলেছেন, তাই আমরা ভাবছি সেখানে তাদের জন্য টিকাদানের ব্যবস্থা করব। তবে কোনো বিশেষ কারও জন্য কোনো বিশেষ হাসপাতাল বা কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়নি। ঢাকার সব সরকারি জেনারেল ও বিশেষায়িত হাসপাতালে টিকাদানের জন্য বুথ থাকবে। সেখানে সবাই টিকা নিতে পারবেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাজধানীর এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক অবশ্য মন্ত্রীদের টিকার জন্য গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল নির্ধারণ করা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। ক্যানসার হাসপাতালে এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন হবে। ঢাকায় প্রায় ৩০০টি স্থান থেকে টিকা দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য বিভাগ বিভিন্ন শ্রেণির জন্য বিভিন্ন হাসপাতাল ঠিক করে দিয়েছে। যারা কোর্টের লোকজন, তারা যেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকা দিতে পারেন। আবার সচিবরা আছেন, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আছেন, তাদের জন্যও হাসপাতাল ভাগ করে দেওয়া আছে।

এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের কিছু মন্ত্রী, এমপিরা আছেন উনাদের আহ্বান করেছি যেন তারা যার যার এলাকায় টিকা নেন। এছাড়া তাদের জন্য গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল নির্ধারণ করেছি।

সূত্র : পূর্বপশ্চিম
এন এ/ ০৫ ফেব্রুয়ারি

Back to top button