অপরাধ

সেই গৃহপরিচারিকা রেখার লোমহর্ষক বর্ণনা

রুদ্র মিজান

ঢাকা, ০৫ ফেব্রুয়ারি – দীর্ঘ এক বছর পর হঠাৎ করেই প্রকাশ পায় তার আসল রূপ। হিংস্র হয়ে ওঠে গৃহপরিচারিকা রেখা আকতার। রাজধানীর মালিবাগের একটি ফাঁকা বাসায় ৭০ বছর বয়সী গৃহকর্ত্রী বিলকিস বেগমকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে রেখা। ৮ দিনের রিমান্ড শেষে গত ৩১শে জানুয়ারি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দিতে রেখা জানিয়েছে, তার স্বামী ফরহাদ হোসেন এরশাদ একটি টং দোকান দিতে প্রায়ই তার কাছে টাকা দাবি করতো। দীর্ঘ এক বছর ধরে মালিবাগের ২৬৫ মুন ভিলায় মেহবুবা জাহানের বাসায় গৃহপরিচারিকা হিসেবে কর্মরত ছিল। ঘটনার দিন ১৮ই জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টা। বাসায় তখন ৭০ বছর বয়সী বিলকিস বেগম ও রেখা ছাড়া আর কেউ ছিলেন না।

অসুস্থতা ও বয়সের কারণে বিলকিস বেগম বিছানায় মল ত্যাগ করেন প্রায়ই। ওই দিন সকালে এমনটি ঘটলে বিলকিস বেগমকে বাথরুমে নিয়ে যায় রেখা। শীতের সকালে বিলকিস বেগমের শরীরে ঠাণ্ডা পানি ঢেলে দিলে তিনি রেগে যান। রেগে গিয়ে রেখাকে গালমন্দ করেন। ওই সময়ে বাথরুমের ভেতরেই বিলকিস বেগমকে মারধর করে রেখা।

রেখা জানায়, মারধরের ফলে বিলকিস বেগমের শরীরের কাপড় খুলে যায়। এ অবস্থায় বাথরুম থেকে বের হলে লাঠি হাতে নিয়ে তার ওপর হামলা চালায়। তারপর বিলকিস বেগমকে নিচে ফেলে মারতে থাকে রেখা। বিলকিস বেগম দুর্বল হয়ে যান। তাকে না মারার জন্য অনুনয় করেন। এ সময় আলমারির চাবি খুঁজতে থাকে রেখা। একপর্যায়ে মারের ভয়ে বিলকিস বেগম নিজেই আলমারি খুলে দেন। সেখান থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও বাসায় থাকা টিভি নিয়ে পালিয়ে যায় রেখা।

আরও পড়ুন : ১৭০ টাকার ইঞ্জেকশন কেনা ২২১০ টাকায়

শাহজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল হক বলেন, আদালতে নিজের অপরাধ স্বীকার করেছে রেখা। রেখার স্বামী এরশাদ তার কাছে টাকা খুঁজতো। হঠাৎ সুযোগ পেয়ে বৃদ্ধাকে অমানবিকভাবে নির্যাতন করে অর্থ, স্বর্ণ লুটে নিয়ে যায় বলে আদালতে সে স্বীকার করেছে। তবে এর আগে গৃহপরিচারিকা রেখা এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটিয়েছে এমন তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানান ওসি।

ঘটনার পর তাকে গ্রেপ্তার করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে পুলিশের। ওসি জানান, বাসা পরিবর্তনের কথা বলে যাত্রাবাড়ী এলাকায় ননদের বাসায় টেলিভিশন রেখে ঠাকুরগাঁও চলে যায় রেখা। ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল থানার কাশিপুর চিকনমাটি মধ্যপাড়ায় মামা কফিল উদ্দিনের বাড়িতে আত্মগোপনে ছিল সে। এরমধ্যে মোবাইলফোনের তিনটি সিম পরিবর্তন করে। তারপর প্রযুক্তির সহায়তায় ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ২১শে জানুয়ারি সকালে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের সময় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে পরনের জামার ভেতর থেকে একটি হ্যান্ড পার্স বের করে দেয় রেখা। ওই পার্সে চার ভরি আট আনা স্বর্ণের গহনা ও নগদ ৪৯ হাজার ৭শ’ টাকা পাওয়া যায়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহজাহানপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) মো. রেজাউল করিম জানান, ওই দিন সন্ধ্যায় রাজধানীর সবুজবাগের উত্তর বাসাবোর ভাড়া বাসা থেকে রেখার স্বামী ফরহাদ হোসেন এরশাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে বাসা থেকে নিয়ে যাওয়া মোবাইলফোন ও এক জোড়া স্বর্ণের দুল জব্দ করা হয়। পরদিন আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত তাদের প্রত্যেকের ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

সূত্র: মানবজমিন
এন এ/ ০৫ ফেব্রুয়ারি

Back to top button