মিডিয়া

বার বার ভুয়া খবর প্রচারে সমালোচনায় আলজাজিরা

ভুয়া উস্কানিমূলক সংবাদ প্রচার করে বার বার সমালোচনার মুখে পড়েছে কাতারভিত্তিক মিডিয়া নেটওয়ার্ক আল-জাজিরা। ভুয়া খবর প্রচারের অভিযোগে কয়েকবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সম্প্রচার বন্ধ করে দেয় এই সংবাদ মাধ্যমকে।

এটি সর্বপ্রথম আলোচনায় আসে ওসামা বিন লাদেনের সাক্ষাৎকার ও আল কায়েদা সম্পর্কিত খবর প্রচারের মাধ্যমে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবসহ বেশ কয়েকটি দেশ আল-জাজিরার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়ার অভিযোগও তুলেছে। ২০০৭ সালের ৭ জুলাই-এ লন্ডনে আত্মঘাতী বোমা হামলা ঘটনা একমাত্র আল জাজিরায় প্রচারিত হয়েছিল। এই চ্যানেলটি উগ্রবাদী মতাদর্শে পরিচালিত ও সেই রাজনৈতিক মতাদর্শের মুখপত্র। যুক্তরাষ্ট্র আল-জাজিরার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে এভাবে, এই মিডিয়া নারীর ক্ষমতায়নের বিরোধী, জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক, ধর্মীয় উস্কানি ও হলুদ

এছাড়া, ভারত-বিরোধী সংবাদ ও তথ্য উপস্থাপনের অভিযোগে ২০১৫ সালে দেশটিতে বন্ধ করে দেওয়া হয় আল-জাজিরার সম্প্রচার। ১৯৯৬ সালে সম্প্রচার শুরুর পর থেকেই নানা সময় বিতর্কিত ও ভিত্তিহীন খবর প্রকাশের অভিযোগ ওঠে কাতারভিত্তিক টেলিভিশন নেটওয়ার্ক আল-জাজিরার বিরুদ্ধে। আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার ও আরব দেশগুলোতে সরকার পরিবর্তনের জন্য চ্যানেলটিকে ব্যবহার করতো কাতার সরকার।

বিশেষ করে আরব বসন্তের সময় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে বিক্ষোভকারীদের উস্কে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে আল-জাজিরার বিরুদ্ধে। মিশরের উগ্ররাজনৈতিক দল মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে সম্পৃক্তর খবরও প্রকাশ হয়েছে বিভিন্ন সময়।

এর আগে, ভুয়া সংবাদ প্রচারের অভিযোগে মিশরে আটক হন টেলিভিশন নেটওয়ার্কটির বেশ কয়েকজন সংবাদিক। ইরাক যুদ্ধের সময় বিতর্কিত সংবাদ প্রচারের অভিযোগে সাংবাদিকদের বহিষ্কার ও সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়। জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়দাকে সমর্থনের অভিযোগে ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরে স্পেনে আটক হন চ্যানেলটির এক সাংবাদিক।

প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, সাংবাদিকদের হলুদ সাংবাদিকতায় বাধ্য করা, জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ করার নির্দেশ এবং অনৈতিকভাবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা ইত্যাদি অভিযোগ এনে আল জাজিরার ব্যুরো প্রধান মোহাম্মদ ফাহমিসহ মিশরে ২২ জন সাংবাদিক পদত্যাগ করেন। একই অভিযোগ এনে এবং জাজিরাকে অপপ্রচারের মেশিন হিসেবে অভিহিত করে পদত্যাগ করেন লিবিয়া প্রতিনিধি আলী হাশেম, বার্লিন প্রতিনিধি আখতাম সুলেমান।

২০০৯ সালের পর শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বাংলাদেশের নানা ঘটনা নিয়ে অপপ্রচার করে চলেছে আল জাজিরা। তাদের সংবাদ পরিবেশনায় বর্তমান সরকার সম্পর্কে নেতিবাচক খবর সবসময় স্থান জুড়ে বসেছে। একই বছর তিনজন ব্যক্তির গুম হওয়ার সাথে বাংলাদেশের একজন উর্দ্ধতন নিরাপত্তা ও সামরিক কর্মকর্তার যোগসাজশ নিয়ে মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করে এই ওয়েবসাইটটি। আসলে এই মিডিয়ার বিরুদ্ধে ক্রমাগত সন্ত্রাসবাদে পৃষ্ঠপোষকতা ও মদদ দানের অভিযোগ রয়েছে আলজাজিরার বিরুদ্ধে।

আল-জাজিরাকে জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র হিসেবে কাজ করতে দেখা গেছে। যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়েছিল। এমনকি যুদ্ধাপরাধী মো. কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায়ের পর ‘বাংলাদেশ পার্টি চিফ টু হ্যাং ফর ওয়ার ক্রাইমস’ শিরোনামে এক সম্প্রচারে ৩০ লক্ষ মানুষের শহীদ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে ব্যঙ্গ করে বলা হয় ইতিহাসবিদদের হিসাবে মুক্তিযুদ্ধে ৩ থেকে ৫ লাখ মানুষ মারা গেছে।

বাংলাদেশ সম্পর্কে আল জাজিরা নিউজ চ্যানেলে নেতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ করায় আজ মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আল জাজিরা নিউজ চ্যানেলের প্রচারিত প্রতিবেদনটি মিথ্যা ও মানহানিকর। এটি বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিভ্রান্তিকর সিরিজ, যা উগ্রবাদী সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কুখ্যাত ব্যক্তিদের যোগসাজশে রাজনৈতিক মদতপুষ্ট অপপ্রচার বলে স্পষ্ট। একাত্তরে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রগতিশীল এবং ধর্মনিরপেক্ষ নীতির বিরোধিতা করছে চ্যানেলটি।’

সূত্র: ইত্তেফাক
এন এ/ ০২ ফেব্রুয়ারি

Back to top button