এশিয়া

মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানে লাভের চাইতে ক্ষতিই বেশি হবে চীনের

২০২০ সালের ১৮ জানুয়ারি; সফররত চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংকে স্বাগত জানাতে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে অপেক্ষা করছেন মিয়ানমারের সদ্য-সাবেক স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি। ছবি: নিয়েন চ্যান নায়েং/ রয়টার্স
প্রতিবেশী মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর হাতে নির্বাচিত সরকার উৎখাতের ঘটনায় অন্যান্য বিশ্ব নেতার মতো নিন্দা জানাননি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। গত সোমবারের সামরিক অভ্যুত্থানে দেশটির উপর চীনের প্রভাব বাড়বে নিঃসন্দেহে। তবুও তা নিয়ে উৎফুল্ল হওয়ার অবকাশ নেই চীনের। বরং এটি পারতপক্ষে ক্ষতির কারণ হবে।

ইতোপূর্বে, পাঁচ দশকের সামরিক শাসনকালে চীনা পুঁজিই ছিল সামরিক সরকারের প্রধান অর্থের উৎস। তবে বেশিরভাগ বিনিয়োগ আসে খনিজ সম্পদ উত্তোলন এবং জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের নানা প্রকল্পে। ২০১১ সালে যখন সামরিক জান্তা নির্বাচনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে গণতান্ত্রিক দলের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, ওই সময় দেশটিতে চীনের বিনিয়োগও বাড়তে থাকে। এমনকি ২০১৯ সাল নাগাদ বিদেশি পুঁজির মাত্রা দেশটির মোট জিডিপি’র এক-তৃতীয়াংশে উন্নীত হয়। এর ২৫ শতাংশ আবার করে চীন।

বিনিয়োগের স্ফীতি দেশটিতে চীনা পণ্যের চাহিদাও বৃদ্ধি করে। ২০১৫ সালে সু চি’র নেতৃত্বাধীন এনএলডি ক্ষমতায় আসার পর শুরু হয় অর্থনীতির আংশিক উন্মুক্তকরণ। ওই সময় থেকে চীন-মিয়ানমার মাসিক বাণিজ্যের পরিমাণ বেড়ে ১৬০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। যা পূর্বের তুলনায় আটগুণ বেশি। বলাই বাহুল্য, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পাল্লা চীনের দিকেই ভারি হয়। ফলে দেশটির গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় সবচেয়ে লাভবান হয় বেইজিং। এছাড়া, প্রেসিডেন্ট শি’র উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগে গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ ক্ষেত্র হিসেবে স্থান পায় মিয়ানমার।

আরও পড়ুন : থমথমে মিয়ানমার, সু চি কোথায়?

সামরিক শাসনের আমলে এই ধারাবাহিক উন্নতির চিত্র দেখা যায়নি। বরং সেনা শাসকেরা নিজেদের ইচ্ছেনুসারে অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। ১৯৮৭ সালে স্বৈরশাসক নে উইন জ্যোতিষবিদ্যার অন্ধ-কুসংস্কার মেনে মুদ্রার বিনিময় মূল্য পরিবর্তন করেন। ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে তার উত্তরসূরীরাই ক্ষমতায় এসেছেন। জারি করেছেন এক বছরের জরুরি অবস্থা।

তাছাড়া, সীমান্ত প্রদেশগুলোর জাতিগত সংখ্যালঘুদের মদদ দেওয়ায় চীনকে অবিশ্বাসের চোখেই দেখে সেনাবাহিনী। বিদেশি বিনিয়োগ নীতি উদারীকরণে জান্তার অঙ্গীকারেও আস্থা রাখার উপায় নেই। অক্সফোর্ড ইকোনমিক্স সূত্র জানায়, অভ্যুত্থানের ফলে চলতি অর্থবছরে মিয়ানমারের বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্ধেক কমে ২ শতাংশে নামতে পারে।

অর্থনীতির এই সংকোচন চীনা ভোক্তাপণ্যের চাহিদায় তীব্র নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে বাধ্য।

সেনা শাসকদের সঙ্গে গোপন আলোচনার মাধ্যমে শি’র প্রশাসন নেপিডোকে চীনা বিনিয়োগ সচল রাখতে চাপ প্রয়োগ করতে পারে। এমনকি ৩৬০ কোটি ডলার মূল্যের মিস্টোন জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাঁধ পুনরায় নির্মাণ শুরুও হতে পারে। তাছাড়া, প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্যে নিজেদের নিরাপত্তা প্রযুক্তি রপ্তানি করতে পারবে বেইজিং।

তবে চীনা অর্থনীতির নতুন খাতের নির্বাহীরা মিয়ানমারে স্মার্টফোন অ্যাপ, ই-কমার্স এবং আর্থিক সেবার উদ্যোগে বিনিয়োগ করতে চাইবেন না। আউটসোর্সিং ধরনের উৎপাদনের জন্যেও আদর্শ স্থান হবে না সেনা শাসিত দেশটি।

চীনা সমাজতন্ত্রী দলের বিশ্বাস, কর্তৃত্ববাদী শাসন অর্থনীতির শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি আনতে পারে। কিন্তু, মিয়ানমারে তেমন শাসন পদ্ধতি থাকলেও তা ত্রুটি ও দুর্নীতিতে ভরপুর। তাছাড়া, জাতিসংঘের তরফ থেকে দেশটির বিরুদ্ধে ‘গনহত্যার’ অভিযোগও আনা হয়েছে। এনিয়ে আন্তর্জাতিক মহল থেকেও নানা রকম নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়বে মিয়ানমার।

পরিশেষে বলা যায়, চীন হয়তো মিয়ানমারের সদ্য তিরোহিত গণতন্ত্রের অভাব ভালো করেই অনুধাবন করবে।

সূত্র: রয়টার্স
এন এ/ ০২ ফেব্রুয়ারি

Back to top button