জাতীয়

পদ্মা সেতুর যে বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন প্রকৌশলীরা

ঢাকা, ০২ ফেব্রুয়ারি – কারিগরি দিক থেকে নিখুঁতভাবে নির্মাণ হয়েছে পদ্মা সেতু। এখন চলছে এর ভেতরে স্লাব বসানোসহ নানা ধরনের কাজ। তবে নকশা অনুযায়ী বাকি সব সমস্যা দূর হলেও ঘন কুয়াশায় যান চলাচলের বিষয়টি এবার ভাবাচ্ছে প্রকৌশলীদের। বিশেষ করে যমুনা নদীর ওপরে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু সেতুতে ঘন কুয়াশায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্যা এই সেতুতেও থাকুক তা চান না প্রকৌশলীরা। তবে সেতু নির্মাণের অন্য সব জটিল দিক দেখতে গিয়ে এ বিষয়টিতে আগে তেমন আলোকপাত সম্ভব হয়নি। এবার বিষয়টি ভাবাচ্ছে প্রকৌশলীদের।

ঘন কুয়াশার কারণে বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতুতে যান চলাচল বন্ধ থাকে। পদ্মা সেতুতে ভবিষ্যতে যাতে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয় সেজন্য আলো নাকি রঙ নাকি দুটোরই ব্যবহার করতে হবে এবং কী উপায়ে করতে হবে তা নিয়ে কারিগরি পর্যায়ে শুরু হয়েছে নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এখন পর্যন্ত ঘন কুয়াশা দূর করতে বাড়তি আলো ব্যবহারের কোনও পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। তবে আলো ব্যবহার না করে নদীবক্ষের ঘন কুয়াশা এড়ানো সম্ভব হবে কিনা তা যথেষ্টই বিবেচনার দাবি রাখে।

আরও পড়ুন : জানুয়ারিতে দেশে রেমিটেন্স এসেছে ১৯৬ কোটি ডলার

গণমাধ্যমের তথ্য এবং বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শীতের মৌসুমে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে মাঝে মাঝে ঘন কুয়াশার কারণে যমুনা নদীর ওপর নির্মিত দক্ষিণ এশিয়ার ষষ্ঠ বৃহত্তম এই সেতুতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তখন দুই পাড়ে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। এই যানজট দীর্ঘ ৪০ কিলোমিটার ছাড়িয়ে গেছে এমন রেকর্ডও আছে। এমন দুর্ভোগের মূল কারণ, এই সেতুতে ব্যবহার করা হয়েছে সোডিয়াম আলো, যা রাতের ঘন কুয়াশা ভেদ করে দূরের পথ দেখার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে না। ফলে যমুনা নদীবক্ষে যখন কুয়াশা অত্যন্ত তীব্র ও ঘন হয়ে ওঠে তখন সেতুর আলো তেমন কাজ করে না। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হওয়ায় সেতুতে যান চলাচল বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় সেতু কর্তৃপক্ষ। আর সেতুতে যান চলাচল বন্ধ রাখা মানেই সব পক্ষের ভোগান্তি এবং সময় নষ্টসহ আর্থিক ক্ষতি সৃষ্টি। পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীসহ সারাদেশের যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক সেতুবন্ধন তৈরি করবে বলেই সরকারিভাবে ভাবা হচ্ছে। যমুনা সেতুর দুই যুগ পরে নির্মিত পদ্মা সেতুতেও যদি একই সংকট থেকে যায় তাহলে সেটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। আর এ বিষয়টিই এখন ভাবাচ্ছে প্রকৌশলীদের।

তবে, বঙ্গবন্ধু সেতুর মতো পদ্মা সেতুতেও যেন কুয়াশার কারণে যান চলাচল বন্ধ না থাকে তার উপায় খুঁজছেন প্রকৌশলীরা। কোনও বিশেষ ধরনের লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করে ঘন কুয়াশাতেও যান চলাচলের ব্যবস্থা রাখার উপায় খুঁজছেন তারা। তবে এখনি তা নিয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না প্রকৌশলীরা। এ বিষয়ে মাসখানেক আগে যোগাযোগ করা হলে পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের বলেন, ভালো একটি বিষয় আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। খোঁজ-খবর নিয়ে দেখি এ বিষয়ে কী করার আছে।

তবে, সম্প্রতি তিনি জানিয়েছেন, আমরা বঙ্গবন্ধু সেতু পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। সেখানে দেখেছি সেতুর টোলপ্লাজায় ডিজিটাল ওয়েদার স্কেল রয়েছে। স্কেলে কুয়াশার ঘনত্ব ৪০ রিখটারের নিচে নেমে এলে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়। তবে পদ্মা সেতুতে ঘন কুয়াশার মধ্যেও যেন গাড়ি চলতে পারে তার জন্য ‘হেভি লাইটের’ ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। অপারেশন মেইনটেনেন্সের সময় অনেক কিছু সংযোজন হয়। এটা তেমন জটিল কিছু নয়।

তবে, বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোনের মতো ঘন কুয়াশাও একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ঘন কুয়াশার সময় চীনসহ সারা পৃথিবীতে যান চলাচল বন্ধ থাকে। বঙ্গবন্ধু সেতুতেও যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে আমরা চেষ্টা করছি বিশেষ লাইটিং ব্যবহারের মাধ্যমে এমন কোনও ব্যবস্থা করার, যাতে আগামী বছর থেকে জনগণের দুর্ভোগ কিছুটা হলেও কমে।

এদিকে, পদ্মা সেতুর লাইটিংয়ের ডিজাইন এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে জানা গেছে। প্রক্রিয়া অনুযায়ী, এইকম-এর করা মূল নকশাকে ভিত্তি করে ‘পার্ট বাই পার্ট’ আরও অনেক নকশা করা হয়ে থাকে। সেসব নকশা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান যাচাই করার পর বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) অনুমোদন করে। এরপরই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেটা বাস্তবায়ন করে বলে জানা গেছে। তবে, পদ্মা সেতুর মূল কাজ অর্থাৎ ‘সিভিল কন্সট্রাকশন’-এর কাজ শেষ হওয়ার পর লাইটিংয়ের কাজ শুরু হবে।

সহকারী প্রকৌশলী (মূল সেতু) আহসান উল্লাহ মজুমদার শাওন জানান, এইকম-এর সঙ্গে আমাদের চুক্তি স্বাক্ষর করা আছে। তারাই পদ্মা সেতুর মূল নকশা করেছে। তবে মূল নকশাকে ভিত্তি করে আরও কিছু নকশা হয়। সেতুর রেলিং ও লাইটিংয়ের মূল নকশা আগেই পাস করা আছে। তবে, কাজের ক্ষেত্রে সামান্য পরিবর্তন করতে হয়। মূল নকশাকে ভিত্তি করে লাইটিংয়ের আরও কিছু নকশা হবে।

তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক মান কোড মেনেই পদ্মা সেতুতে লাইটিং ব্যবহার করা হচ্ছে। আর্কিটেকচার লাইট ও স্ট্রিট লাইট ব্যবহার করা হচ্ছে। ৩৭.৫০ মিটার পর পর ১২ মিটার উচ্চতার প্রতিটি ল্যাম্পপোস্ট বসানো হবে।

তবে ঘন কুয়াশা প্রতিরোধ করার জন্য বিশেষ কোনও লাইটিং ব্যবহার করার ব্যাপারটি প্রস্তাবিত নকশায় নেই।

সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন
এন এইচ, ০২ ফেব্রুয়ারি

Back to top button