দক্ষিণ এশিয়া

এবার ভারতীয় জাহাজের জন্য সকল বন্দর বন্ধ!

ইসলামবাদ, ০৪ মে – ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলাকে ঘিরে তলানিতে এসে ঠেকেছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক। পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আর হুমকি-ধমকিতে ক্রমেই বাড়ছে উত্তেজনা। ঘটনার পর থেকে এরইমধ্যে পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে দুদেশ। বাণিজ্যিক সব চুক্তি স্থগিতের পাশাপাশি একে অন্যের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে তারা।

সবশেষ গতকাল শনিবার (৩ মে) অন্য দেশ হয়ে প্রবেশ করা পাকিস্তানি পণ্যের ব্যাপারেও কড়াকড়ি আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। এক তিল পরিমাণ কোনও পাকিস্তানি পণ্যও যেন ভারতে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া, ভারতের বন্দরে যেন পাকিস্তানি কোনো জাহাজ নোঙর করতে না পারে, সেজন্যও দেওয়া হয়েছে নির্দেশনা। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে এবার ভারতীয় জাহাজগুলোর জন্যও নিজেদের বন্দর বন্ধ করে দিয়ে পাকিস্তান।

রোববার (৪ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, কাশ্মীরের পেহেলগামে প্রাণঘাতী হামলার পর ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও খারাপ হওয়ায় পাকিস্তান শনিবার ভারতের পতাকাবাহী জাহাজের জন্য নিজ দেশের বন্দর ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

পাকিস্তানের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রণালয়ের পোর্টস অ্যান্ড শিপিং শাখা থেকে এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে সাম্প্রতিক সমুদ্র পরিস্থিতি বিবেচনায়, পাকিস্তানের সমুদ্রসীমা, অর্থনৈতিক স্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় অবিলম্বে ভারতীয় পতাকাবাহী জাহাজের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হলো। পাকিস্তানি পতাকাবাহী জাহাজও ভারতের কোনও বন্দরে যাবে না। বিশেষ ক্ষেত্রে অনুমতির বিষয়টি আলাদাভাবে বিবেচনা করা হবে।

এর আগে, শনিবার সকালে ভারতীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পাকিস্তানে তৈরি কোনো পণ্য সরাসরি বা ঘুরপথে আমদানি অবিলম্বে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। জাতীয় নিরাপত্তা এবং সরকারি নীতির স্বার্থে এই নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশিকা জারি না হওয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে। এই নির্দেশিকার কোনও ব্যতিক্রমের জন্য অবশ্যই ভারত সরকারের আগাম অনুমতি নিতে হবে।

একইদিন ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব শিপিং এক বিবৃতিতে জানায়, পাকিস্তানি পতাকাবাহী জাহাজকে ভারতের কোনও বন্দরে ঢুকতে দেওয়া হবে না, একইভাবে ভারতের পতাকাবাহী জাহাজও পাকিস্তানের কোনও বন্দরে যাবে না। ভারতীয় সম্পদ, পণ্য ও সম্পর্কিত অবকাঠামোর নিরাপত্তার জন্য, জনস্বার্থে এই নির্দেশনা জারি করা হলো।

প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মীরে এটিই সবচেয়ে বড় হামলা। পরোক্ষভাবে পাকিস্তান এ হামলায় জড়িত, এমন অভিযোগ তুলে বুধবার দেশটির সঙ্গে ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে ভারত। পাশাপাশি আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় দেশটি। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান। স্থগিত করে দেওয়া হয় ভারতের সঙ্গে সবরকম বাণিজ্যও।

এরপর থেকে দুদেশের পাল্টাপাল্টি হুমকি-ধমকিতে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পরিস্থিতি। এরইমধ্যে বেশ কয়েক দফায় কাশ্মীরের সীমান্ত রেখায় (এলওসি) গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে। সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করে মহড়া তো চলছেই, ইসলামাবাদকে সতর্কবার্তা দিতে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে ভারত। প্রতিক্রিয়াস্বরূপ গতকাল শনিবার পাকিস্তানও  ‘আবদালি’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করেছে। ৪৫০ কিমি রেঞ্জের এই ক্ষেপণাস্ত্র ‘সিন্ধু মহড়ার’ অংশ হিসেবে পরীক্ষা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসলামাবাদ।

সূত্র: আরটিভি নিউজ
আইএ/ ০৪ মে ২০২৫


Back to top button