টরন্টো, ৩০ এপ্রিল – অন্যস্বর এর আয়োজনে ২৬ এপ্রিল শনিবার ড্যানফোর্থের হোপ ইউনাইটেড চার্চ মিলনায়তনে দ্বিতীয় বার অনুষ্ঠিত হলো বৈশাথে পঙক্তিমালা। গত বছর থেকে এ আয়োজন করছে অন্যস্বর।
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় হলের গেট খোলার কথা থাকলেও তার আগেই দর্শকরা হলে ভিড় জমাতে শুরু করে। তবে মঞ্চের পর্দা উঠে ঠিক রাত আটটায়। আর তখনই দুজন শিশুশিল্পী মন্ত্র আর মুগ্ধ নিয়ে মঞ্চে উঠেন রনি মজুমদার। কৃতজ্ঞতা জানান এই আয়োজনের পেছনের কারিগর আর দর্শকদের। শিশু দুটি প্রথমে কোন কিছু রাজি না হলেও পরে দুজনই বাংলার ছড়া শোনান দর্শকদের।
কানাডায় বেড়ে উঠা শিশুদের এমন পরিবেশনা মুগ্ধ করে দর্শকদের। তখন শুরু হয়নি মূল অনুষ্ঠান। মঞ্চ ছেড়ে দেন রনি মজুমদার। এবার মঞ্চে মাইক্রোফোন হাতে ইলোরা সাঈদ আর আব্দুল বাসিত। বৈশাখের আগমনের নানা ইতিহাস আর নানা কথা বলেন। তবে দর্শকদের বিরক্তির কথা ভেবে দ্রুতই দুজন মঞ্চ থেকে ছেড়ে দেন। আর ঠিক তখনি আসিফ এর কণ্ঠে “এসো”, সমস্বরে তখন মঞ্চে উপাস্থিত সকলেই বলে উঠে “এসো”।
বৈশাখের আগমনের নতুন ধারার গান অচেনা বৈশাখ। আর এরপর আবৃত্তি নিয়ে আসেন উর্মী। সুললিত কণ্ঠে আবৃত্তি করে তিনি। পিনপতন নিরাবতায় মিলনায়তন তখন শান্ত। আবৃত্তি শেষ হতেই রিক্তা মজুমদার রবি ঠাকুরের গান নিয়ে হাজির। রবি ঠাকুরের গান শেষ হতেই বৃন্দ কবিতা।
কবিতার রেশ কাটতে না কাটতেই সুকণ্ঠি গায়িকা শিরিন যখন গেয়ে উঠেন বাউলা কে বানাইলোরে হাসন রাজারে বাউলা কে বানাইলো রে । দর্শক তখন শিরিনের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে গাইছে হাসন রাজার গান। রবি ঠাকুর তো সব সময় ভর করেই থাকে অন্যস্বর এর আয়োজনে। তাই রবি ঠাকুরের কবিতা এক গায়ে নিয়ে হাজিরে ইলোরা সাঈদ। সবাই যখন এক সাথে বলে রঞ্জনা। তখন মনে থাকেনা কোন যন্ত্রনা।
কিন্তু শুধু আবৃত্তিতে তো চলবেনা। তাই মেহজাবিন গেয়ে উঠেন কল কল ছল ছল নদী করে টলমল। দর্শক আবারো সুরেলা কণ্ঠে পুরনো গান শুনে গেয়ে উঠৈ একসাথে। ঠিক এরপরই ফারিয়া আর লাকি মজার আবৃত্তিতে মিলনায়তনে তখন অন্যধারা চলছে। কিন্তু অন্যস্বর তো থামবার পাত্র নয়। তাইতো সদ্য দলে যুক্ত হওয়া মাসুদ পারভেজ “বকুল ফুল ” গাইতে গাইতে চলে যান দর্শকদের কাছে। পুরো হল তখন বকুল ফুলে মাতোযারা।
কিন্তু হিরা আর হাসিও ছাড়বার পাত্র নয়। তিনি আবৃত্তি করেন তিনটি কবিতা। কিন্তু ঐ যে বললাম রবি ঠাকুর। তাইতো আবার সকলের কণ্ঠে ওগো শেফালি বনের মনের কামনা। দর্শক যখন ভিন্ন আমেজে বসে আছে। তখন ফারিহা, মুনিমা, জনি আর বেবি চারজনে মিলে পুরো মঞ্চ দখল করে নিয়েছে।
নানা ঢঙ্গে কবিতা, গান পুথি আর চলছে খানিকটা অভিনয়ও। দর্শক তখন এক দৃষ্টে চেয়ে তাদের দিকে তখন আসিফ গেয়ে উঠে আচ্ছা কেন মানুষগুলো কেন এমন হয় যায়। কিন্তু অন্যস্বর আবার ফেরে কবিতায় দিলারা নাহার বাবু অনবদ্য কবিতা আবৃত্তিতে। রুপক ভিন্ন ধারার আবৃত্তি নিয়ে হাজির হয়ে দর্শকশ্রোতাদের মন জয় করেন।
গায়ক গায়িকারাও কম যান না। এবার গেয়ে উঠে তোরা সব জ্বয়ধ্বনি কর। শেষ হতেই নয়া বাইদা নিয়ে হাজির সকলেই। শেষ হতে না হতেই অনেক গানের ডালি দিয়ে শেষ প্রান্তে পৌছে অনুষ্ঠান। কিন্তু মানবী তৈরী হয়েই বসেছিলো বাঙ্গালী ছন্দ কবিতা নিয়ে। তার পুত্রদ্বয় শুরু করেছে অনুষ্ঠান। আর মা করছে শেষ। বেশ বেশ।
সমাপনী বক্তব্য রাখলেন অন্যস্বর এর কর্ণধার এবং বৈশাখী পঙক্তিমালার নির্দেশক আহমেদ হোসেন।
আর বরাবরের মতো জাতীয় সংগীতের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় এবারের বৈশাখের পঙক্তিমালা।
গত বছর থেকে অন্যস্বর আয়োজন করেছে বৈশাখের পঙক্তিমালা , এই ধারাবাহিকতায় তারা আবার এসেছেন ফিরে এবছর নতুনভাবে নতুন কিছু নিয়ে।বাঙলীর ঐতিহ্য তুলে ধরতে অন্যস্বর বদ্ধপরিকর। আগামীর প্রজন্মের কাছে বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য তুলে ধরতে সব সময়ই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তারা । অন্যস্বর ও অন্য থিয়েটার বাংলা, বাঙালী আর বাংলাদেশের কথা বলে।
পরিবেশনায় ছিলেন ইলোরা সাইদ,রিক্তা মজুমদার ,জনি ফ্রান্সিস গোমেজ,ফারিহা রহমান,ফারজানা হক, মুনিমা শারমিন,জান্নাতুল ফেরদৌস,কাজী বাসিত,মেহজাবিন চৌধুরী,শিরিন চৌধুরী,আসিফ চৌধুরী,রওশন জাহান উর্মি,ভুইয়াঁ সাদমান সাকিব,নার্গিস রূপক,দিলারা নাহার বাবু,হাসি রহমান,ফারিয়া সেহেলী,আনিসা লাকি,মানবী মৃধা,মাসুদ পারভেজ।
কীবোর্ড এ রূপতনু শর্মা , সাউন্ড সিস্টেম এ সহায়তা করেছেন মামুনুর রশীদ , মঞ্চসজ্জায় সকল সহযোগিতা করেছেন বদরুদোজা সিদ্দিকী। নির্দেশনায় আহমেদ হোসেন।
অন্যস্বর টরন্টো এবং অন্যথিয়েটার টরন্টো এইভাবে বাংলার কৃষ্টি, সংস্কৃতি, বাঙালির ঐতিহ্যের কথা মনে রেখে সযতনে অনুষ্ঠান আয়োজনের যাত্রা অব্যহত রাখবেন বলে দর্শকশ্রোতা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।