ইসলাম

পৃথিবীর আকার-আকৃতি সম্পর্কে আল-কোরানে কী বলা হয়েছে?

মাওলানা মিরাজ রহমান

‘অতঃপর তিনি (আল্লাহ) পৃথিবীকে দান করেছেন ডিম্ব আকৃতি।’ (নাজিয়াত, ৭৯ : ৩০)

এই আয়াতে যে আরবি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে তা হল ‘দাহাহা’ ‘دحها’। পুরনো অনুবাদগুলিতে এই আয়াতের অর্থ রয়েছে- ‘অতঃপর তিনি পৃথিবীকে বিছিয়ে দিয়েছেন।’ যেহেতু তারা পৃথিবীর আকৃতি-প্রকৃতি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না তাই তারা দাহাহা (دحها) শব্দটিকে ‘দাহবুন’ (دحو) এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছিলেন এবং তার অর্থ করেছিলেন ‘প্রসারিত করা বা বিছিয়ে দেওয়া।’ ‘দাহা’ শব্দের প্রকৃত অর্থ ‘উটের ডিম’। নিম্নে তার কিছু সাধিত শব্দ দেওয়া হল-

আল-উদহিয়্যু (الأدحي) ! উটপাখির ডিম।
আল-উদহুয়্যাতু (الأدحوة) ! উটপাখির ডিমের স্থান।
তাদাহহিয়ান (تدحيا) : গর্তের মধ্যে একটি পাথর পতিত হওয়া।

আয়াতটি এভাবে পৃথিবীর গোলাকৃতি হওয়ার কথা পরিষ্কারভাবে নির্দেশ করে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীর উত্তর-দক্ষিণের ব্যাসের তুলনায় নিরক্ষীয় ব্যাসের আপেক্ষিক পার্থক্য এটিকে একটি বর্তুল আকৃতি কিংবা ডিম্ব আকৃতি দান করেছে। আরও পরিষ্কারভাবে বলতে গেলে, পৃথিবীর প্রকৃত আকৃতি গঠনে এই আকৃতিটি কিছুটা বিকৃত হয়েছে, যাকে বলা হয় ‘Geoid’, যা একটি নাশপাতির অনুরূপ। পৃথিবীর নিরক্ষীয় ব্যাসার্ধ্য হল ৬৩৭৮ কিলোমিটার, যেখানে তার মেরু অঞ্চলীয় ব্যাসার্ধ্য হল ৬৩৫৬ কিলোমিটার।

আরও পড়ুন: মহাশূন্য বিজয়ের বিস্ময়কর ভবিষ্যতবাণী করা হয়েছে পবিত্র কোরানে

এই আয়াত থেকে একথাও বুঝা যায়, আদিকালে পৃথিবী এই আকৃতির ছিল না। পরবর্তীতেই এই আকৃতি প্রাপ্ত হয়। মহাকাশ বিজ্ঞানে পৃথিবীর বর্তমান আকার সম্পর্কে দুটি মতবাদ রয়েছে। প্রথম মতানুসারে, পৃথিবী ছিল সূর্য থেকে ছিটকে পড়া একটি টুকরো। দ্বিতীয় মতানুসারে, সূর্য ও পৃথিবী উভয়টিই একটি নীহারিকা থেকে গঠিত হয়েছে। উভয় মতই স্বীকার করে, প্রথম যখন পৃথিবী সৃষ্টি হয় তখন তার বর্তমান আকার ছিল না। পরবর্তী সময়েই এটি ডিম্বাকার লাভ করেছে। এই আয়াতটি উভয় মতের সঙ্গে পরিপূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ।

এই আয়াতের অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, এটি সুরা ‘আন নাযিয়াত’-এরই একটি অংশ, যাকে ‘Extractors’ বা উৎপাটনকারীগণ শব্দে ভাষান্তরিত করা যেতে পারে। এই সুরায় সৃষ্টি সম্পর্কিত আরো কিছু রহস্য বর্ণিত হয়েছে। ২৮ থেকে ৩২ নং আয়াত পর্যন্ত আছে পৃথিবী সৃষ্টি সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত তথ্য।

৩১ নং আয়াতে আছে, ‘আর তিনি তা থেকে নির্গত করেছেন পানি ও চারণভূমি।’ অন্য কথায়, এই আয়াত বলে, পৃথিবী তার ডিম্ব আকৃতি লাভ করার পর তাতে পানি প্রদান করা হয়েছিল। ফলে তা পৃথিবীর প্রথম শ্রেণীর উদ্ভিদ, যেমন- তৃণ বা ঘাস উৎপন্ন করেছিল। আধুনিককালের ভূতত্ত্ববিদরাও এখন এ কথা বিশ্বাস করেন যে, পৃথিবী বর্তুলাকৃতি লাভ করার পর বারিমন্ডল গঠিত হয়। সৃষ্টি হয় সাগর-মহাসাগর। অতঃপর ক্রমান্বয়ে উদ্ভিদরাজি উদ্গত হয়।

৩২ নং আয়াতে আছে, ‘আর পর্বতমালা, তিনি স্থাপন করেছেন সুদৃঢ়ভাবে।’ মহাবিশ্ব সৃষ্টির যে ক্রম পর্যায় কোরান মাজিদে বর্ণিত হয়েছে ভূবিদ্যাসংক্রান্ত অধুনা ধারণাসমূহ তার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত।

এন এইচ, ১৩ অক্টোবর

Back to top button