জাতীয়

অভিবাসীদের সুরক্ষায় সচেষ্ট রয়েছে সরকার : পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

ঢাকা, ২৯ জানুয়ারি – পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশি অভিবাসীদের সুরক্ষায় সরকার সচেষ্ট রয়েছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে জর্ডানের বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত ‘বেটারিং লেবার মোবিলিটি ফর বেটারিং ইন্টারকানেক্টিং ইকনমিস’ শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন।

আজ শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, অভিবাসন বিষয়ে কোনো দেশ একা কাজ করতে পারে না। দায়িত্ব ভাগাভাগি এবং পারস্পরিক সহযোগিতা অভিবাসন পরিচালনার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শাহরিয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশ সরকার অভিবাসীদের মর্যাদার উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়। একটি দক্ষ অভিবাসন প্রক্রিয়া অভিবাসী এবং স্থানীয় জনগণ প্রত্যেকের জন্যই সুযোগ তৈরি করতে পারে। এটি যেকোনো সীমানা অতিক্রম করে দেশ এবং মহাদেশগুলোর মানুষকে বিভিন্ন আঙ্গিকে সংযুক্ত হতে সহায়তা করে। তা সত্ত্বেও অনেক সময় বিশ্বব্যাপী ভীতি, নিয়ন্ত্রণ এবং সার্বভৌমত্বের শঙ্কার কথা বলে মানব গতিশীলতাকে বিতর্কিত বিষয়ে পরিণত করার চেষ্টা করা হয়। গ্লোবাল মাইগ্রেশন প্রশাসনের শক্তিশালী প্রবক্তা হিসাবে গ্লোবাল কম্প্যাক্ট ফর মাইগ্রেশন (জিসিএম) বাস্তবায়নের মাধ্যমে নিরাপদ, সুশৃঙ্খল এবং সুষ্ঠু মানব গতিশীলতার জন্য একটি কার্যকর কাঠামো স্থাপনের ওপর বাংলাদেশ সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়। বাংলাদেশের গৃহীত কর্মসূচি বাস্তবায়নে জাতিসংঘের সংস্থা এবং সুশীল সমাজ সক্রিয় ভুমিকা পালন করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

জর্ডানে বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত নাহিদা সোবহান সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে যুক্ত হন বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ডক্টর আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন এবং জর্ডান সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারুক আল হাদিদি। এ ছাড়া বিশেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মধ্য প্রাচ্য ও পশ্চিম এশিয়া বিষয়ক অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এফ এম বোরহান উদ্দিন, জর্ডানে নিযুক্ত আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মিশন প্রধান তাজমা কুর্ট, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও-এর দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক শ্রম অভিবাসন বিশেষজ্ঞ শাবারিনাথ নায়ের এবং জর্ডানের আন্তর্জাতিক সংস্থা, মেডার (এম-ই-ডি-এ) কান্ট্রি ডিরেক্টর আহসান উল হক হেলাল।

আরও পড়ুন : ইসি মাহবুবকে পদত্যাগ করতে বললেন ডা. জাফরুল্লাহ

রাষ্ট্রদূত নাহিদা সোবহান তাঁর স্বাগত বক্তব্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক নির্দেশনায় একটি নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল অভিবাসন বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিকল্পনার একটি অগ্রাধিকার বিষয়। তিনি আরো বলেন, শ্রম অভিবাসন অভিবাসীদের জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি অভিবাসীর নিজের দেশ ও গন্তব্য রাষ্ট্রে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভুমিকা রাখে। তাই অভিবাসী শ্রমিকদের সুরক্ষা ও মানসম্মত জীবন নিশ্চিত করার মাধ্যমে সকলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব। পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশই একাধারে অভিবাসী প্রেরণকারী ও গন্তব্য রাষ্ট্রের ভুমিকা পালন করে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ডক্টর আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, নিরাপদ ও নৈতিক অভিবাসন নিশ্চিত করার জন্য সরকার এককভাবে চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জন করতে পারে না। বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশ থেকে ফিরে আসা অভিবাসী পুনরায় সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার মানসম্মত অভিবাসন নিশ্চিত করতে বদ্ধ পরিকর। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবিলার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল তৈরিতে সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তিনি নিরাপদ এবং সুষ্ঠু অভিবাসন নিশ্চিত করার জন্য সকল অংশীজনের সহযোগিতার আহ্বান জানান।

জর্ডানের শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারুক আল হাদিদি বলেন, জর্ডান সব সময়ই অভিবাসীদের জর্ডানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করে। পেশাগত প্রয়োজনে ও শরণার্থী হিসেবে অবস্থান করা সব অভিবাসীর ক্ষেত্রেই জর্ডান সরকারের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। জর্ডানে বাংলাদেশি শ্রমিকের চাহিদার কারণে পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকের প্রায় অর্ধেকের বেশিই বাংলাদেশি। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার একটি মুসলিম দেশের নারীর ক্ষমতায়ন ও বিভিন্ন সুচকে অগ্রগতি নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবীদার। জর্ডানের প্রবাসী শ্রমিকদের স্বার্থ সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক বলে তিনি উল্লেখ করেন। অভিবাসন বিষয়ে এই ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য তিনি বাংলাদেশ দূতাবাসকে আন্তরিকভাবে অভিনন্দন জানান।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্য প্রাচ্য ও পশ্চিম এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এফ এম বোরহান উদ্দিন বলেন, অভিবাসন একটি স্বাভাবিক ও প্রয়োজন সাপেক্ষ বিষয়। মানুষ তার নিজেদের প্রয়োজনেই এই প্রক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করে। এই বিষয়টির সঙ্গে অর্থনৈতিক বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। নিরাপদ ও পরিকল্পিত অভিবাসন প্রক্রিয়া অর্থনীতির জন্য সুফল বয়ে আনে। তবে অভিবাসীদের গন্তব্য রাষ্ট্রে তাদের জন্য সুরক্ষা ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। অভিবাসী শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গন্তব্য রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব। অভিবাসীদের যেন কোনো ধরনের নির্মম ও অমানবিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে না হয়, সে বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত। তিনি এই বিষয়ে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থার আলোকে কিছু উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবনা রাখেন।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক শ্রম অভিবাসন বিশেষজ্ঞ শাবারিনাথ নায়ের বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রবাসীদের ভুমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশ শুরু থেকেই নিরাপদ অভিবাসন ব্যবস্থার স্বপক্ষে জাতিসংঘসহ সব আন্তর্জাতিক ফোরামে প্রচার চালিয়ে আসছে। তিনি এসডিজিতে অভিবাসন অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ডের ভুমিকার প্রশংসা করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে গ্লোবাল কমপ্যাক্ট ফর মাইগ্রেশনের প্রস্তাব জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত হয় বলে উল্লেখ করেন। তিনি আরো বলেন, অভিবাসনকে শুধু অভিবাসীর নিজেদের দেশ এবং গন্তব্য রাষ্ট্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ বিবেচনা না করে এটিকে বৈশ্বিক প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। কারণ এই সময়ে পৃথিবীর কোনো ক্ষুদ্র বিষয়ও শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ বিষয় নয়, তাই অভিবাসনের মতো একটি ব্যাপক বিস্তৃত বিষয়কে আরো বেশি মানবিক ও গঠনমূলকভাবে পর্যালোচনা করতে হবে।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) জর্ডানে নিযুক্ত মিশন প্রধান তাজমা কুর্ট বৈশ্বিক অভিবাসন প্রক্রিয়ায় তাঁর সংস্থার কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন এবং জর্ডানে প্রবাসী, বিশেষত বাংলাদেশি প্রবাসীদের জন্য আইওএমর বিভিন্ন চলমান সহায়তার কথা বলেন। তিনি আরো বলেন অভিবাসন ব্যবস্থার একটি বৈশ্বিক বৈচিত্র্য রয়েছে। সীমানা অতিক্রম করে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও মানুষের মধ্যে যে নতুন ধরনের সম্পর্ক তৈরি করে তা মোকবিলার জন্য রাষ্ট্রগুলো কতটা কার্যকরভাবে নিজেকে তৈরি করতে পারছে তার ওপরই নির্ভর করে অভিবাসীদের গন্তব্যস্থলের পরিণতি কতটা সুখকর হবে।

জর্ডানের আন্তর্জাতিক সংস্থা, মেডার (এমইডিএ) কান্ট্রি ডিরেক্টর আহসান উল হক হেলাল বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ তরুণ নতুনভাবে কর্ম ক্ষেত্রের জন্য তৈরি হন। তাঁদের মধ্যে মাত্র দশ ভাগ ফরমাল সেক্টরে এবং অবশিষ্ট জনশক্তি নিজের প্রচেষ্টায় দেশের ভেতর অথবা বাইরে নিজের কর্মসংস্থান খুজে নেয়। বাংলাদেশ দক্ষ কর্মী তৈরির দিকে আরো বেশি মনোযোগী হলে তা বর্তমানের চেয়েও দশগুণ বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে।

জর্ডানের পোশাককারখানা মালিকদের সংগঠন জেগেইট-এর ভাইস চেয়ারম্যান দীনা জ্যাক খাইয়াত বলেন, জর্ডানের সব দেশের অভিবাসী শ্রমিকদের জন্যই একটি একীভূত চুক্তি করা হয়েছে যেখানে তাদের প্রাপ্য সুবিধাদি এবং তাদের অধিকারগুলো সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। প্রতিটি দেশের নাগরিকদের জন্য তাদের নিজস্ব ভাষায়ও তা অনুবাদ করা হয়েছে। জর্ডানের বাংলাদেশি শ্রমিকদের স্বার্থ সুরক্ষায় জেগেইট বাংলাদেশ সরকার ও জর্ডান সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই বাংলাদেশ থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা জর্ডানের নাগরিক ডাক্তার ইউসুফ আব্দেল ফাত্তাহর বাংলাদেশ সম্পর্কে অনুভুতি ও অভিজ্ঞতা বিষয়ে একটি ভিডিও বার্তা প্রচার করা হয়। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে শ্রম অভিবাসন সংক্রান্ত একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।

সূত্র : এনটিভি
এন এইচ, ২৯ জানুয়ারি

Back to top button