ব্যবসা

প্রথম ছয় মাসে বাণিজ্য ঘাটতি সাড়ে ৬ বিলিয়ন ডলার

ঢাকা, ২৮ জানুয়ারি – চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (২০২০ সালের জুলাই-ডিসেম্বর) ৬৪৬ কোটি ৫০ লাখ ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। ঘাটতির এ অঙ্ক আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৭৫ কোটি ডলার কম। অর্থাৎ, ২০১৯ সালের জুলাই-ডিসেম্বরে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৮২২ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বরে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবে ভারসাম্যের (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের কারণে গত ছয় মাসে আমদানি-রফতানিতে তেমন গতি ছিল না। কিন্তু রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। আবার বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামও নিম্নমুখী ছিল। এসব কারণে বাণিজ্য ঘাটতি কম হয়েছে। একইভাবে লেনদেনের ভারসাম্যেও উদ্বৃত্ত রয়েছে। এটা বর্তমান পরিস্থিতিতে ইতিবাচক। তবে বিশ্ববাজার এখনও স্বাভাভিক হয়নি।’ ইউরোপে নতুন করে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার কারণে ভবিষ্যৎ শঙ্কা কাটছে না বলে মনে করেন তিনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যালেন্স অব পেমেন্টের তথ্য বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ইপিজেডসহ রফতানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ১ হাজার ৮৭৬ কোটি ১০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় করেছে দুই হাজার ৫২২ কোটি ৬০ লাখ ডলার। সেই হিসাবে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬৪৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার। দেশীয় মুদ্রায় ঘাটতির এ পরিমাণ ৫৪ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন : ১০০ বিঘা জমিতে প্রস্ফুটিত হবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি

উল্লিখিত সময়ে পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ এর আগের বছরের তুলনায় দশমিক ৪৪ শতাংশ কম আয় করেছে। বিপরীতে পণ্য আমদানির ব্যয় আগের বছরের চেয়ে ৬ দশমিক ৮০ শতাংশ কমে গেছে। দেশের অভ্যন্তরে বিনিয়োগের চাহিদা কম থাকায় আমদানিজনিত চাহিদাও কম ছিল। তাই আমদানি ব্যয় তেমন বাড়েনি। তবে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ চাঙ্গা থাকায় বাণিজ্য ঘাটতি কমে গেছে। প্রথম ছয় মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে প্রায় ৩৮ শতাংশ।

করোনাকালীন সময়ে মানুষ কম ভ্রমণ করেছে। অপরদিকে আমদানি-রফতানি কম হওয়ায় বিমার খরচও কমে গেছে। ফলে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতিও কমেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে এ খাতের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। গত অর্থবছর একই সময়ে তা ছিল ১৬৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

মহামারিতে বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার প্রভাব সরাসরি পড়েছে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) ওপর। গত অর্থছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ১৬৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশে। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা কমে ১৫৫ কোটি ডলারে নেমে এসেছে।

এদিকে মহামারির মধ্যে বৈশ্বিক অর্থনীতির অবস্থা যখন নাজুক, তখনও দেশের অর্থনীতির অন্যতম সূচক বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) উদ্বৃত্ত বাড়ছে।

অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে চলতি হিসাবে ৪৩২ কোটি ২০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত রয়েছে, যা আগের অর্থবছরে একই সময়ে ঋণাত্মক ছিল প্রায় ১৬৭ কোটি ডলার। সা‌র্বিক রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার কারণে ভারসাম্যেও (ওভারঅল ব্যালেন্স) ৬১৫ কোটি ডলারের বেশি উদ্বৃত্ত ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

আলোচ্য সময়ে এক হাজার ২৯৪ কোটি ৫০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত বছর একই সময়ে পাঠিয়েছিলেন ৯৪০ কোটি ৮০ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৭ দশমিক ৬০ শতাংশ।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
এন এ/ ২৮ জানুয়ারি

Back to top button