অপরাধ

অনাথ রোজিনা যেভাবে হয়ে ওঠে মোবাইল ফোন চুরি সিন্ডিকেটের প্রধান

ইমন রহমান

ঢাকা, ২৭ জানুয়ারি – ছোটবেলায় মা-বাবার কাছ থেকে হারিয়ে যাওয়া রুনা ওরফে রেজিনাকে (৩২) নরসিংদির এক দম্পতি লালন-পালন করেন। রোজিনাকে ওই দম্পতি সুমন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়েও দেন। অনেক আশা নিয় ঘর-সংসার শুরু করে রোজিনা। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই তার সব স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। সে বুঝতে পারে স্বামী সুমন একজন চোর ও মাদকাসক্ত। এর আগে সাতটি বিয়ে করেছে সুমন। একাধিক নারীর সঙ্গে রয়েছে সুমনের মেলামেশা। মাদকের পেছনে সুমনের নিয়মিত অনেক টাকা খরচ হতো। চুরি, ছিনতাই করে একার পক্ষে সেই টাকার ব্যবস্থা করা সুমনের পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না।

স্ত্রী রোজিনার সঙ্গে সুমন একই বাসায় থাকত। ঘরে দুটি বাচ্চাও আছে তাদের। একজনের বয়স ১১ বছর অন্যজনের মাত্র ৩৩ দিন। সুমন প্রতিনিয়ত রোজিনাকে নির্যাতন করত। মাদকের টাকার জন্য চাপ দিত। পরে একপ্রকার বাধ্য হয়েই রোজিনা চুরি বিদ্যার কৌশল আয়ত্ব করে।

গত ২০ জানুয়ারী রাজধানীর একটি বাসায় মোবাইল চুরির পর করা জিডির তদন্ত করতে গিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মতিঝিল বিভাগের অবৈধ মাদক উদ্ধার টিম রোজিনা ও তার তিন সহযোগী রুবেল, মনোয়ার ও আল আমিনকে গ্রেপ্তার করে।

এর পরই উঠে আসে রোজিনার ‘চোর’ হয়ে ওঠার নেপথ্যের ঘটনা। গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে ৩০টি চোরাই মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।

আরও পড়ুন : ভুয়া এমপি, ডিআইজি পরিচয়দানকারী প্রতারক রনি গ্রেপ্তার

ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাসা-বাড়ি, ব্যাচেলর মেসে বেশি চুরি করত রোজিনা। চুরি করা মোবাইল-ল্যাপটপ বিক্রি করে যা আয় হতো সেটি দিয়েই স্বামীর নেশার খরচ ও সংসার চালাত। রোজিনা তার তিন সহযোগীকে নিয়ে বড় ধরনের একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিল। দামি-কম দামি সব মোবাইল ফোনই চুরি করতো রুনা। আর সেগুলো রুবেল, মনোয়ার ও আল আমিনের মাধ্যমে বিক্রি করত। মূলত রুনা এই তিনজনকে নিয়ে একটি ও তার স্বামী রাসেলকে নিয়ে আরেকটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। তার সহযোগী রাসেল গুলিস্তানের পাতাল মার্কেট এলাকায় চুরি ও ছিনতাই করা মোবাইল বিক্রি করতো। পলাতক থাকায় রাসেলকে এবং নিরাময় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় সুমনকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি ডিবি।

ডিবি জানায়, রাজধানীর পশ্চিম রামপুরা এলাকায় রুনা স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে থাকতেন। ভোর ৫টা থেকে সকাল ৮টার মধ্যে চুরি করতেন তিনি। বিশেষ করে যে সব মেসে ভোরবেলা বুয়া রান্না করে ওসব বাসা টার্গেট করতেন। সকাল বেলা ঘুমন্ত মেস বাসিন্দাদের মোবাইল, ল্যাপটপ নিয়ে চলে যেতেন। এ ছাড়া যেসব বাসার নারীরা সকাল বেলা সন্তানদের নিয়ে স্কুলে যান, ওই বাসায় প্রবেশ করতেন। দরজা খোলা না থাকলে নকল চাবি ব্যবহার করে বাসায় প্রবেশ করতেন। রুনা ও তার সহযোগীরা সাত রাস্তা, বেগুনবাড়ি, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, রামপুরাসহ আরো কিছু এলাকার বাসা বাড়িতে চুরি করতো।

ডিবির মতিঝিল বিভাগের সহকারি কমিশনার (এসি) আব্দুলাহ আল মামুন বলেন, গ্রেপ্তার সবাই পেশাদার চোর ও ছিনতাইকারী। রোজিনা ছোট বেলায় তার মা-বাবাকে হারায়। বিয়ের পর সে জানতে পারে স্বামী সুমন ছিল চোর ও মাদকাসক্ত। এ ছাড়া একাধিক বিয়ে করেছে। আর বিয়ের পরে মাদক ও যৌনতার পেছনে খরচ করার টাকার জন্য রুনাকে মারধর করতো। তবে স্বামী ছাড়া আর কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকায় সে চুরি করা শুরু করে।

তিনি বলেন, কারওয়ান বাজারের চক্রটি যানজটে থেমে থাকা বাসের যাত্রীদের মোবাইল ব্যাগ টান দিয়ে নিয়ে যেত।

সূত্র : দেশ রূপান্তর
এন এ/ ২৭ জানুয়ারি

Back to top button