চট্টগ্রাম

একদিনের নির্বাচনে ঝরে গেলো তিন প্রাণ

হুমায়ুন মাসুদ

চট্টগ্রাম, ২৭ জানুয়ারি – চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ২৯ মার্চ। কিন্তু, ঠিক সেসময়েই দেশে করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ায় নির্বাচনের আট দিন আগে স্থগিত হয়ে যায় এই নির্বাচন। এরপর পরিস্থিতির উন্নতি বিবেচনায় আজ বুধবার (২৭ জানুয়ারি) ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে, তবে এই ভোটকে কেন্দ্র করে রক্ত ঝরেছে আগেও, ঝরলো ভোটের দিনও। এবারের নির্বাচনে এ পর্যন্ত তিনজন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন অর্ধ শতাধিক।

হিসাব বলছে, ২৭ বছর আগে ১৯৯৪ সালে নির্বাচনের দিনে প্রতিপক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষে হত্যার ঘটনা ঘটার পর ঘটেছে আজ। এদিন খুলশী থানার আমবাগান এলাকায় দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে আলা উদ্দিন (২৮) নামে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হন। সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউসেপ স্কুল কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী ওয়াসিম উদ্দিন ও বিদ্রোহী প্রার্থী মাহমুদুর রহমানের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আরও ৫ জন আহত হয়েছেন। তাদের চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে, এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী এবং বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে সংঘাতে গত ১২ জানুয়ারি মঙ্গলবার নগরীর ২৮ নম্বর পাঠানটুলি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর ও বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল কাদেরের অনুসারীদের মধ্যে গুলি ছোঁড়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আজগর আলী বাবুল নামে এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

বাবুল দলীয় প্রার্থী নজরুল ইসলামের পক্ষে ওইদিন প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন : প্রথম করোনার টিকা নিয়ে অভিজ্ঞতা জানালেন ফ্রন্টলাইনাররা

এর আগে প্রথম দফা প্রচারণার সময় ২০২০ সালের ১৮ মার্চ দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডে দুই প্রার্থীর রেষারেষিতে জাহিদ তানভির নামের এক যুবক খুন হন। জাহিদ তানভির সাবেক কাউন্সিলর বিদ্রোহী প্রার্থী মোরশেদ আকতারের সমর্থক বলে পরিচিত ছিলেন। সেসময় এ ঘটনায় দলীয় প্রার্থী মো. ইসমাইল হোসেনের অনুসারীদের দায়ী করেন বিদ্রোহী প্রার্থী মোরশেদ আকতার চৌধুরী।

ভোটের আগে ওই দুই খুনের ঘটনার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রিটার্নিং অফিসার চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগরীর বাসিন্দাদের আমরা সুষ্ঠু, সুন্দর এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটি নির্বাচন উপহার দিতে চাই। সেই লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতার যে ঘটনা ঘটছে সেই বিষয়ে আমরা কঠোর নজরদারি করছি। প্রতিটি ওয়ার্ডে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে কাজ করছি।’

এরপর ১৮ জানুয়ারি নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইনে সিএমপি কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেছেন, বহিরাগত কিংবা স্থানীয় যারাই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা সৃষ্টি করবে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা নগরীতে পুলিশি কর্মকাণ্ডের ব্যাপ্তি বাড়িয়ে দিয়েছি। পুলিশি টহল, চেকপোস্ট- এগুলো বাড়িয়ে দিয়েছি। যেসব কর্মকাণ্ড আমাদের নির্বাচনকে সহিংস করতে পারে, সেগুলো প্রতিরোধ করার জন্য আমরা আগাম পদক্ষেপ নিয়েছি।

এ ঘটনার পর নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ১৯ জানুয়ারি সিএমপির বিভিন্ন থানায় ওসি পদে রদবদল আনা হয়।

আরও পড়ুন : ৭৫ কেন্দ্রে এগিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী

তবে এত পদক্ষেপের পরও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের ভোটের দিনে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে এবং একজন নিহত হন। এদিন দুপুরের মধ্যেই নির্বাচনি সহিংসতায় আরও ২৮ জনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ভোট শেষে বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন অভিযোগ করেন, এ নির্বাচন আওয়ামী লীগের সঙ্গে নয় হয়েছে রাষ্ট্রযন্ত্রের সঙ্গে। রক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার কথা থাকলেও পুলিশ অনেক কেন্দ্র থেকে বিএনপির এজেন্টদের তাড়িয়ে দিয়েছে এবং হালিশহরে ওসি নিজে উপস্থিত থেকে কেন্দ্র দখল করেছে।

এদিকে, এই নির্বাচন মোটামুটি সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি করেছে আওয়ামী লীগ। দলটির কেন্দ্রীয় সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করা হয়েছে।

আজকের সহিংসতায় নিহত আলাউদ্দিন কুমিল্লার বুড়িচং এলাকার মৃত সুলতান আহমেদের সন্তান। নগরের আমবাগান এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি।

এদিন বিভিন্ন কেন্দ্রে ঘটা সহিংসতায় আহতরা হলেন ১৩ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের সংঘর্ষে বিএনপির প্রার্থীর এজেন্ট মো. হোসেন (৩৫), আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থক ইমরান (২৫), রাকিব মাহমুদ, মো. রাজু, বাবু (৪০), আবু তাহের (৪২), রাজু, হৃদয় (১৬), বহিরাগত জামশেদ (২৬), আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থক ফারুক (২০), মাহমুদুল হাসান।

এছাড়াও লালখান বাজার এলাকায় সংঘর্ষে আহত হন মো. হোসেন (৩৫), মহসিন (২৪), আনসার সদস কামাল (২২), বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থক সেলিনা (৫৫), আওয়ামী লীগের সমর্থিত কাউন্সিল প্রার্থীর সমর্থক তারেক (২১), মোক্তার হোসেন (৩৫), অভিজিৎ চৌধুরী অভি (৫০), লুজক লুক (৩১), রাকিব ও দেলোয়ার (২৬)।

চান্দগাঁও ওয়ার্ডে বিএনপির কর্মীদের হামলায় আহত হয়েছেন সাইফ উদ্দীন (৩৪), ইলিয়াস (২৮), আবু সাঈদ (২৮) ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মোবারক আলীর অনুসারী আলমগীর (৪০)।

৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে আহত হয়েছেন বিএনপি সমর্থক কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থক আবু তাহের (৩০), চকবাজার ওয়ার্ডের ইদ্রিস হোসেন (৪৫)।

এবার মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিএনপির দুই প্রার্থীর বাইরে আরও ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অন্য প্রার্থীরা হলেন এনপিপি’র আবুল মনজুর (আম), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এম এ মতিন (মোমবাতি), স্বতন্ত্র প্রার্থী খোকন চৌধুরী (হাতি), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ (চেয়ার) এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. জান্নাতুল ইসলাম (হাতপাখা)।

তবে নির্বাচনের মাঠে তাদের কর্মী সমর্থকও ছিল কম, কোনও ধরনের সহিংসতায় তাদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও পাওয়া যায়নি।

সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন
এন এ/ ২৭ জানুয়ারি

Back to top button