যূক্তরাষ্ট্র

নিউ ইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে চার বাংলাদেশির লড়াই

শামীম আল আমিন

নিউ ইয়র্ক, ২৬ জানুয়ারি – নিউ ইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের একটি আসনে চার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীর লড়াই বেশ জমে উঠেছে। কুইন্সের ডিস্ট্রিক্ট ২৪-এর কাউন্সিলম্যান ররি ল্যাঙ্কম্যান স্টেট গভর্নর অফিসে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পাওয়ায় পদটি শুন্য হয়। ফলে ২ ফেব্রুয়ারি বিশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আর এতে চার বাংলাদেশিসহ মোট ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

নির্বাচনে এরই মধ্যে গত ২৩ জানুয়ারি থেকে অগ্রিম ভোট নেওয়া শুরু হয়ে গেছে; যা চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। করোনা মহামারির মধ্যেও সামাজিক দূরত্ব মেনে প্রার্থীরা প্রাণপণ প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতিহাসে এবারই প্রথম নিউ ইয়র্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর থেকে কোনো বাংলাদেশির কাউন্সিলম্যান হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়েছে। যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একই আসনে চার বাংলাদেশি থাকায় ভোট ভাগাভাগি হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রবল সম্ভাবনা থাকার পরও তা হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। ফলে অনেকে আক্ষেপ করে বলছেন, সবাই মিলে যদি একজন যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া যেত তাহলে এবারই হয়তো ইতিহাস তৈরি হতো।

কুইন্সের বাংলাদেশি অধ্যুষিত জ্যামাইকার কিউ গার্ডেন্স হিলস, ফ্রেশ মেডোজ, হিলক্রেস্ট, পমোনক, জ্যামাইকা হিলস এবং ব্রায়ারউড নিয়ে গঠিত এই নির্বাচনী এলাকার ৩৩ শতাংশের বেশি ভোটার হচ্ছেন বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশীয়। এই এলাকায় বাংলাদেশিদের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে।

তবে এবারই প্রথম সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে পছন্দের ক্রমানুসারে পাঁচজন প্রার্থীকে ভোট দেওয়া যাবে। নিয়ম অনুযায়ী, প্রথম পছন্দের ব্যক্তি যদি ৫১ শতাংশ ভোট না পান, তাহলে অংকের হিসাব হবে ভিন্ন। চতুর্থ, তৃতীয়, দ্বিতীয় প্রার্থীর ভোট থেকে নির্দিষ্ট একটি অংশ ভোট চলে যাবে প্রথম পছন্দের ঘরে। ফলে ভোটারদেরকে পছন্দের ক্রম অনুসারে পাঁচজনকে ভোট দেওয়ার আহবান জানানো হয়েছে। নতুন এই ব্যবস্থা নিউ ইয়র্কের স্থানীয় ও প্রাইমারি নির্বাচনে এবারই প্রথম চালু হলো। এতে করে এখনো কোনো একজন বাংলাদেশির জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন।

আরও পড়ুন : বাংলাদেশি-আমেরিকান রুমানা আহমেদ আবার হোয়াইটহাউজে ফিরেছেন

নির্বাচনে ৯ জন প্রার্থীর মধ্যে চার বাংলাদেশি হলেন- এটর্নি সোমা সাঈদ, মৌমিতা আহমেদ, ড. দীলিপ নাথ এবং মুজিব উর রহমান। স্থানীয় টেলিভিশনগুলোতে টকশো করে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন এটর্নি সোমা সাঈদ। নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি এবং কুইন্স কাউন্টি উইমেন বারের প্রেসিডেন্ট এটর্নি সোমা গত কয়েকটি নির্বাচনে মিজান রহমানের পক্ষে মাঠে ছিলেন। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি এগিয়ে যেতে চাইছেন।

তিনি বলেন, ‘অনেক দিন ধরে নিজেকে তৈরি করেছি। মানুষের জন্যে কাজ করেছি। বিশেষ করে করোনা মহামারির মধ্যেও মাঠ ছেড়ে যাইনি। প্রয়োজনে মানুষ আমাকে পাশে পেয়েছে। আশা করছি তারা আমাকে বিজয়ী করবে’।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে সাড়া জাগানো ডেমোক্রেটিক কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্টেজের অনুসারী হিসেবে মৌমিতা আহমেদের একটি জোড়ালো অবস্থান তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে একদল উদ্যোমী তরুণ কাজ করছে তার পক্ষে। এর আগে অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট ২৪ এর ডেমোক্রেটিক ডিসট্রিক্ট লিডার পদে লড়াই করেছিলেন মৌমিতা। তখন ফ্ল্যাশিংয়ের অ্যাসেম্বলিম্যান রন কিম, ব্রুকলিনের স্টেট সিনেটর জুলিয়া সালাজার এবং স্টেট গভর্নর পদে লড়া সিনথিয়া নিক্সনের সমর্থন পেয়েছিলেন তিনি।

মৌমিতা আহমেদ বলেন, ‘বিপুলসংখ্যক মানুষ আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। বাংলাদেশিসহ সব দেশের মানুষ আছেন। মূলধারার রাজনীতিকদের অনেকে সমর্থন জানিয়েছেন। আশা করছি এবার নতুন ইতিহাস তৈরি হবে’।

হেলথ কেয়ার এক্সিকিউটিভ ড. দীলিপ নাথ আগেও এই আসনে নির্বাচন করেছেন। এবারো শক্তভাবেই মাঠে আছেন তিনি। ড. দীলিপ জানান, কংগ্রেসম্যান টম সাওজি, স্টেট সিনেটর রক্সেন পরসডসহ গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদরা তার পাশে আছেন। জয়ের ব্যাপারে তিনিও আশাবাদী।

অন্যদিকে বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি মুজিব উর রহমানও একজন শক্ত প্রার্থী। কেননা বাংলাদেশিদের সবচেয়ে বড় সংগঠনে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। নির্বাচন করা এবং এ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়েও তিনি অভিজ্ঞ। ফলে বাংলাদেশিসহ অন্য ভোটারদের কাছে টানতে পারলে তিনিও জয়লাভ করতে পারেন।

তবে অবস্থা এমন ভোট ভাগ হবে চার বাংলাদেশি প্রার্থীর মধ্যে। সেই সঙ্গে যদি আমেরিকানসহ অন্যান্য দেশ থেকে আসা মানুষের ভোট টানা না যায় তাহলে হয়তো এই সুযোগে এই আসনের সাবেক কাউন্সিলম্যান জেমস জিনারো আবারো জয়ী হতে পারেন।

সূত্র : কালের কন্ঠ
এন এ/ ২৬ জানুয়ারি

Back to top button