সিলেট

হোস্টেল সুপার ও প্রহরীদের অবহেলায় এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণ

সিলেট, ২৬ জানুয়ারি – সিলেটের মুরারী চাঁদ (এমসি) কলেজ ছাত্রাবাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পেছনে মূলত হোস্টেল সুপার ও প্রহরীদের দায়িত্বে অবহেলা ছিল। প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে ওই কলেজের অধ্যক্ষও কোনোভাবে ওই ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না।

এমসি কলেজে তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের অবহেলা ও দায় অনুসন্ধানে গঠিত কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশ অংশে মতামতে এসব কথা বলা হয়।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘটনার সময় কলেজ বন্ধ থাকার পরও কয়েকজন ছাত্র ও প্রাক্তন ছাত্র হোস্টেলে অবস্থান করেন। একজন প্রাক্তন ছাত্র ৫ নম্বর ব্লকের হোস্টেল সুপারের বাসভবন দখল করে থাকেন। প্রাক্তন ওই ছাত্ররা অবৈধভাবে কলেজে হোস্টেলের সিট দখল করে থাকার কারণে এবং প্রাক্তন ছাত্র সাইফুর রহমান কর্তৃক হোস্টেল সুপারের বাসভবন জোর করে দখল করে থাকার কারণেই তারা কলেজের হোস্টেল এলাকায় গণধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ করার সাহস পান। ফলে ঘটনার তারিখে হোস্টেল ক্যাম্পাসে ওই ঘটনার নেপথ্যে মূলত হোস্টেল সুপারদের তদারকির ঘাটতি ও দায়িত্বে অবহেলাই দায়ী। তবে প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে কলেজের অধ্যক্ষের ওপরও এ দায়ভার চলে আসে।

চার সদস্যের কমিটিতে ছিলেন সিলেটের জেলা ও দায়রা জজ মো. বজলুর রহমান, অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মমিনুন নেসা, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবুল কাশেম ও সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শারমিন সুলতানা।

আরও পড়ুন : দেশের সব জেলা রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আসছে

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সাক্ষী, পরীক্ষা ও সামগ্রিক বক্তব্য পর্যালোচনা করে কমিটির সর্বসম্মত মতামত হলো, গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের পেছনে মূলত হোস্টেলের বর্তমান তত্ত্বাবধায়কেরা, হোস্টেলের মূল গেটের ডে গার্ড, ৫ নম্বর ব্লকের ডে গার্ড ও নাইট গার্ড (নৈশপ্রহরী) এবং ৭ নম্বর ব্লকের ডে গার্ড ও নাইট গার্ডের দায়িত্বে অবহেলা ছিল।

এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে, সে জন্য ১৫ দফা সুপারিশ করেছে চার সদস্যের ওই কমিটি। যেখানে কলেজের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের চাহিদার ভিত্তিতে হোস্টেলে আসন নিশ্চিত করতে হবে এবং অছাত্র বা প্রাক্তন ছাত্রদের হোস্টেলে বসবাস কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে ২৮ জানুয়ারি এ বিষয়ে শুনানি হতে পারে।

ধর্ষণের ওই ঘটনার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর গত সেপ্টেম্বরে আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ মিসবাহ উদ্দিন।

শুনানি নিয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়ার নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন। এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষের অবহেলা নিরূপণে চার সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়ে তা অনুসন্ধান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। গত ২০ অক্টোবর ওই কমিটি আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়।

আরও পড়ুন : জন্মদিনে বাবাকে নিয়ে আবেগঘন স্ট্যাটাস মির্জা ফখরুলের মেয়ের

প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়, একজন শিক্ষককে একাধিক হোস্টেলের দায়িত্ব দেওয়ার পরিবর্তে একক দায়িত্ব দিতে হবে, হোস্টেলের তত্ত্বাবধায়কদের দায়দায়িত্ব সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করতে হবে, কলেজের হোস্টেলগুলোতে বহিরাগত প্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, হোস্টেলের মূল গেটে এবং প্রতিটি ব্লকে পর্যাপ্তসংখ্যক ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার (সিসি ক্যামেরা) ব্যবস্থা করতে হবে, হোস্টেলের যেসব স্থানে সীমানাপ্রাচীর নেই, সেসব স্থানে সুউচ্চ দেয়াল নির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে, পুরো হোস্টেল এলাকায় প্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা নিতে হবে বলে সুপারিশ করেছে কমিটি।

গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে সিলেট নগরীর টিলাগড় এলাকা থেকে স্বামীসহ এক তরুণীকে তুলে নিয়ে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের একদল কর্মীর বিরুদ্ধে। ওই তরুণীর স্বামী এ ঘটনায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে মোট নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রাবাস দখল করে জঘন্য এ ঘটনায় দেশে ও বিদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। পরে একে একে আসামিরা গ্রেপ্তার হন।

সূত্র : প্রথম আলো
এন এ/ ২৬ জানুয়ারি

Back to top button