সাহিত্য সংবাদ

সালমান রুশদিকে অন্ধ করে দেওয়া আততায়ীর বিচার শুরু

ওয়াশিংটন, ১১ ফেব্রুয়ারি – ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক ও বিতর্কিত লেখক সালমান রুশদিকে হত্যাচেষ্টার দায়ে যুক্তরাষ্ট্রে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিচার শুরু হয়েছে। ২০২২ সালে পশ্চিম নিউইয়র্কে বক্তৃতা প্রদানকালে দর্শকদের সামনে বিতর্কিত এই লেখককে মারাত্মকভাবে ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল।

মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, সালমান রুশদিকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তির সোমবার বিচার শুরু হয়েছে। এদিন আইনজীবীরা সূচনা বক্তব্য রাখেন। অভিযুক্ত হাদি মাতারের বিচারের সময় ৭৭ বছর বয়সী রুশদি সাক্ষ্য দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে দুই বছরের বেশি সময়ের মধ্যে প্রথমবারের মতো রুশদি তার হামলাকারীর মুখোমুখি হবেন।

বুকার পুরস্কার বিজয়ী লেখক রুশদি ২০২২ সালের আগস্টে লেখকদের নিরাপদ রাখার বিষয়ে কথা বলতে যাচ্ছিলেন। এমন সময় হাদি মাতার চৌতাউকুয়া ইন্সটিটিউশন অ্যাম্ফিথিয়েটারে মঞ্চে তার দিকে ছুটে যান। মাতার রুশদিকে ঘাড়ে, পেটে, বুকে, হাতে এবং ডান চোখে ১২ বারের বেশি ছুরিকাঘাত করেন। এতে তিনি আংশিকভাবে অন্ধ হয়ে যান এবং তার একটি হাত স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ-আমেরিকান এই লেখক গত বছর প্রকাশিত তার ‘নাইফ: মেডিটেশন আফটার অ্যান মার্ডার’ নামে এক স্মৃতিকথায় এই হামলা এবং তার দীর্ঘ, বেদনাদায়ক অবস্থার বিস্তারিত বিবরণ দেন। ১৯৮৯ সাল থেকেই রুশদি তার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। সে বছর প্রকাশিত তার উপন্যাস “দ্য স্যাটানিক ভার্সেস”-এর কারণে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়।

মূলত ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত রুশদির চতুর্থ উপন্যাস ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ বিশ্বজুড়ে বিতর্কের জন্ম দেয়। এর পরের বছর অর্থাৎ ১৯৮৯ সালে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি এই লেখকের মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া ঘোষণা করেন। সেসময় রুশদির মাথার দাম ঘোষণা করা হয় ৩০ লাখ ডলার। ইরানের সেই ঘোষণা এখনও বহাল আছে। এরপর রুশদি বছরের পর বছর আত্মগোপনে ছিলেন। কিন্তু ইরান এই আদেশ কার্যকর করবে না বলে ঘোষণা দেওয়ার পর তিনি বাধাহীনভাবে চলাচল করেছেন।

নিউ জার্সির ফেয়ারভিউয়ের বাসিন্দা ২৭ বছর বয়সী মাতারের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা এবং হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে। যদিও তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।

উল্লেখ্য, আহমেদ সালমান রুশদির জন্ম ১৯৪৭ সালে মুম্বাইয়ে এক কাশ্মিরি মুসলিম পরিবারে, ভারত ভাগের ঠিক আগে আগে। ১৯৮১ সালে তার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ প্রকাশিত হলে লেখক হিসেবে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। শুধু যুক্তরাজ্যেই বইটির ১০ লাখ কপি বিক্রি হয়।

১৯৮৮ সালে প্রকাশিত রুশদির চতুর্থ উপন্যাস ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ বিশ্বজুড়ে বিতর্কের জন্ম দেয়। বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভ আর সহিংসতার মধ্যে বহু দেশে বইটি নিষিদ্ধ হয়, রুশদির জন্মস্থান ভারতের সরকারই প্রথম সেই সিদ্ধান্ত নেয়। এ বই প্রকাশের পর প্রায় ১০ বছর তাকে আত্মগোপনে থাকতে হয়।

আইএ/ ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

 


Back to top button