জাতীয়

মাত্র ৩% মানুষ কর দিচ্ছে

ফারজানা লাবনী

ঢাকা, ২৩ জানুয়ারি- ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে আয়কর সীমায় আছে মাত্র তিন শতাংশ মানুষ। সক্ষমতা থাকলেও জনগোষ্ঠীর বড় অংশই কর দিচ্ছে না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন হিসাব পাওয়া যায়। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এনবিআর চিঠি পাঠিয়ে করজালের আওতা বাড়াতে জোরালো পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছে। এনবিআর সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, করদাতার সংখ্যা বাড়াতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

করদাতার সংখ্যা বাড়াতে অর্থনীতিবিদরা শহর অঞ্চলের পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়েও নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। এ ছাড়া ইটিআইএন না থাকলে সব নাগরিক সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া এবং রিটার্নে মিথ্যা তথ্য প্রদানকারীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার সুপারিশ জানিয়েছেন।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে তথ্য সংগ্রহ করে দেখা যায়, দেশে পাঁচ কোটির বেশি মানুষ কর আদায়ের যোগ্য। এনবিআরের সক্ষমতা বাড়িয়ে এই জনসংখ্যা করজালে আনতে হবে। এতে কর আদায়ের পরিমাণ কয়েক গুণ বাড়বে।’

একই মত বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের। তিনি বলেন, ‘ভিয়েতনাম, তাইওয়ান সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সচেতনতা বাড়িয়ে করদাতার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশে ইটিআইএনধারীর সংখ্যা পাঁচ কোটির বেশি হওয়া উচিত। এসব মানুষকে করসীমায় আনতে বিভিন্ন সরকারি সেবা ও সুবিধা নিতে ইটিআইএন ব্যবহারে কঠোরতা আনা প্রয়োজন। এ ছাড়া মিথ্যা তথ্যে করসীমায় না এলেও কঠোর শাস্তির আওতায় আনা উচিত।’

আরও পড়ুন :  নিয়ন্ত্রণে আসছে সংক্রমণ, চিন্তা বাড়াচ্ছে অসতর্কতা

এনবিআরের করনীতি শাখার সদস্য আলমগীর হোসেন বলেন, ‘১৬ কোটি মানুষের এই দেশে করযোগ্য মানুষ চিহ্নিত করতে এনবিআর জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আশা করি সুফল পাওয়া যাবে।’

চলতি করবর্ষের নিয়মিত আয়কর রিটার্ন জমার শেষ সময় ছিল ৩০ নভেম্বর। করোনাকালীন সংকট বিবেচনায় নিয়ে এই সময়সীমা বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর করা হয়। গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত (২০২০-২০২১) ২৪ লাখ ৯ হাজার ৩৫৭ জন করদাতার আয়কর রিটার্ন জমা পড়েছে এবং আদায় হয়েছে ৩৪ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা। এনবিআর ২০১৩ সাল থেকে পুরনো ১০ ডিজিটের টিআইএন বাতিল করে ১২ ডিজিটের ইটিআইএন গ্রহণ বাধ্যতামূলক করে। এনবিআরের সর্বশেষ হিসাবে ২০১৩ থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ইটিআইএনধারীর সংখ্যা ৫৪ লাখ ছাড়িয়েছে। এই হিসাবে প্রায় অর্ধেক করদাতা চলতিবারে রিটার্ন জমা দেয়নি। করদাতার সংখ্যা বাড়াতে নতুন বছরের (২০২১) শুরু থেকে এনবিআর কয়েকটি ক্ষেত্রে কঠোরতা আরোপ করেছে। বিশেষভাবে তরুণ করদাতা সংগ্রহে জোর দিয়েছে। ১৮ বছর হলেই প্রত্যেক নাগরিককে ইটিআইএন গ্রহণ করতে বলা হলেও এনবিআর বাধ্যতামূলক করেনি। এ বিষয়ে এনবিআর নজরদারি বাড়িয়েছে।

২০১২ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত শহরের পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ের সম্পদশালীদের চিহ্নিত করতে দেশের চার শতাধিক উপজেলায় রাজস্ব দপ্তর স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। দুই শতাধিক উপজেলায় রাজস্ব দপ্তর স্থাপন করা হলেও বাকিগুলোতে এখনো হয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে উপজেলা পর্যায়ে নতুন করদাতা সংগ্রহের হার বাড়াতে জোর দিয়েছে।

পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘উপজেলার বড় বড় বাজারে উপস্থিত হয়ে কে বা কারা বড় অঙ্কের বাণিজ্য করে তার খোঁজ করা যেতে পারে। এ ছাড়া উপজেলা পর্যায়ের ব্যাংকগুলোতে কে বা কারা বেশি টাকার হিসাবধারী তা চিহ্নিত করা সম্ভব।’

একই মত জানিয়ে এনবিআর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বলেন, ‘উপজেলায় বসবাসরত কোন কোন পরিবারের সদস্য বিদেশে থাকেন, তাঁরা কোন চ্যানেলে কত পাঠান তা চিহ্নিত করতে হবে। এসব সূত্র ধরে করদাতার সংখ্যা বাড়ানোর সঙ্গে সঠিক হিসাবে রাজস্ব আদায়েরও সুযোগ আছে।’ এ ক্ষেত্রে উপজেলা পর্যায়ে রাজস্ব দপ্তর স্থাপন করে নিয়মিত এনবিআর কর্মকর্তাদের উপস্থিত থেকে নজরদারির প্রয়োজন বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

অনেক ব্যবসায়ী মোটা অঙ্কের অর্থ আয় করলেও নিকটাত্মীয়, বিশ্বস্ত কর্মচারী বা বন্ধুর নামেও লেনদেন করে থাকে। এসব ক্ষেত্রে এনবিআর নজরদারি বাড়িয়েছে।

সূত্র: কালের কণ্ঠ

আর/০৮:১৪/২৩ জানুয়ারি

Back to top button