সিলেট, ২১ জানুয়ারি- এক সময়ের প্রমত্তা নদী কুশিয়ারায় এখন নেই আগের মতো রূপ-যৌবন। নদীর বুকে পালতোলা বাহারি নৌকারও দেখা মেলে না সচরাচর। সড়কপথের ব্যাপক উন্নতির ফলে নৌপথের প্রয়োজনীয়তা দিন দিন কমে আসছে এবং নদীর তলদেশ স্থানে স্থানে ভরাট হওয়ায় নৌচলাচলও কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
একইভাবে সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার সিমান্তবর্তী কুশিয়ারার শেরপুর নদীবন্দরটি কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে ২০১৭ সাল থেকে। এতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে প্রতিবছর ১৫-২০ লাখ টাকার।
স্থানীয় প্রবীন ব্যক্তির জানান, প্রায় দুই শতাধিক বছর পূর্বে শেরপুর স্টিমার ঘাটে বড় বড় স্টিমার ভিড়ত। জনতা, সইপট, লার্ক নামক পণ্যবাহী স্টিমার সুদূর কলকাতা থেকে ফেঞ্চুগঞ্জ, সিলেট সদর, আসামের করিমগঞ্জ, বদরপুরে যাতায়াত করত। ফলে শেরপুর স্টিমার স্টেশনের কদর ছিল তৎকালীন আসাম প্রদেশজুড়ে। ব্রিটিশ আমলে ছাতকের চুনাপাথর বোঝাই অনেক জাহাজ এই নৌপথ দিয়ে কলকাতা যেত। অনেকদূর থেকে শুনাযেত জাহাজের সাইরেন।
কালের পরিবর্তনে খরস্রোতা কুশিয়ারা নদীর বিধ্বংসী ভাঙণে ক্রমেই পাল্টে গেছে নদীর ভৌগলিক গতিপথও। তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় অনেক পূর্ব থেকে এ ঘাটে বন্ধ হয়ে গেছে স্টিমারের আনাগোনা।
আরও পড়ুন : সিলেটে বিচারককে ঘুষ দেয়ার চেষ্টা, এসআই ক্লোজড
শেরপুরের লঞ্চযোগে সুনামগঞ্জের দিরাই, শাল্লা, জগন্নাথপুর, হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ, মার্কুলী, নবীগঞ্জ, বানিয়াচং এলাকার মানুষের যাতায়াত ছিলো। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭৩ সালে নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ ভাটি অঞ্চলের যাত্রীদের সুবিধার্থে দ্রুত যাতায়াতের জন্য শেরপুর উত্তরপাড়ে লঞ্চঘাটের অনুমোদন দিয়ে একটি জেটি স্থাপন করে। ফলে নৌপথে যাত্রীসাধারণের চাপ বেড়ে যায়। পরে ১৯৯৪ সালে শেরপুর দক্ষিণপাড়ে আরও একটি জেটি স্থাপন করে নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ।
ফলে নৌকা, লঞ্চ, মালবাহী কার্গো আর যাত্রী সমাগমে সবসময় কর্মচঞ্চল থাকত শেরপুর নদীবন্দর। তৎকালীন জেটিঘাট দু\’টির ইজারামূল্যে ছিলো ২০ লাখ টাকা তবে, বর্তমানে নৌকন্দও না থাকায় এবং নৌ চলাচল না থাকায় ৭৫ হাজার টাকায় ইজারা নিচ্ছেন ইজাদাররা।
শেরপুর লঞ্চঘাটের ইজারাদার ইমরান হোসেন জানান, একসময় ২০ লাখ টাকার ইজারামূল্যের জেটিঘাট দু\’টি এখন নানা কারণে ৭৫ হাজার টাকায় ইজারা দিতে বাধ্য হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে এতো কম টাকায় ইজারা নিয়েও লোকশান গুনতে হচ্ছে ইজারাদের।
তিনি বলেন, সিলেট বিভাগের চার জেলার মিলনস্থল শেরপুর হওয়ায় যোগাযোগের ক্ষেত্রে যান ও নৌ পথের যাতায়েতের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু কুশিয়ারার তলদেশে চর জেগে ওঠায় ২০১৭ সাল থেকে ভাটি এলাকা আজমিরীগঞ্জ কিংবা উজানের ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে যাত্রীবাহী লঞ্চ ও নৌকা শেরপুর জেটিঘাট থেকে যাতায়াত করছে না। এতে নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ বিপুল অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
লঞ্চ মাস্টার আমিনুল হোসেন জানান, শেরপুর লঞ্চঘাট থেকে আগে প্রতিদিন প্রায় ২০/২৫টি লঞ্চ ভাটির পথে যাতায়াত করলেও বর্তমানে তা কমে ৩/৪টিতে দাঁড়িয়েছে। কুশিয়ারার তলদেশ স্থানে স্থানে ভরাট ও মানবসৃষ্ট নানা জঞ্জাল পাশ কাটিয়ে লঞ্চযাত্রীদের দ্রুতসময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হয় না।
এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি হরমুজ আলী বলেন, ‘সড়ক পথ সহজলভ্য হওয়ার আগে এ অঞ্চলের মানুষের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌপথ। আজ সবধরনের যান আধুনিক হয়েছে, কিন্তু শেরপুর-মার্কুলি-আজমিরী রুটের লঞ্চগুলো সেই আগের মতো থাকলেও নদী ভরাট না করায় নৌচলাচল ভোগান্তি থাকায় দিন দিন কমে যাচ্ছে লঞ্চযাত্রীর সংখ্যা।
সূত্র: সিলেটভিউ২৪
আর/০৮:১৪/২১ জানুয়ারি