আইসিইউতে মুক্তিযোদ্ধা-অভিনেতা দিলু
ঢাকা, ১৮ জানুয়ারি- মুক্তিযোদ্ধা, অভিনেতা, নাট্য নির্দেশক ও নাট্যকার মুজিবুর রহমান দিলু গুরুতর অসুস্থ। গত ১২ জানুয়ারি তার শরীরের অবস্থার অবনতি ঘটে। পরে তাকে জরুরি ভিত্তিতে উত্তরার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেখান থেকে পরে ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে। বর্তমানে ডা. ওমর ফারুকের অধীনে আইসিইউতে চলছে তার চিকিৎসা।
অভিনেতার পুত্র অয়ন রহমান জানান, তার বাবার ফুসফুসের সমস্যা দেখা দিয়েছে। ফুসফুসের ৭০ ভাগই আক্রান্ত হয়েছে। করোনা নেগেটিভ হলেও তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। অবস্থা বেশ সংকটাপন্ন। শরীরে প্লাজমাও দেওয়া হয়েছে।
জনপ্রিয় মঞ্চ ও নাট্যাভিনেতা মুজিবুর রহমান দিলুর চিকিৎসা বাবদ প্রতিদিন প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। পুরো চিকিৎসা চালিয়ে নিতে অনেক টাকার প্রয়োজন। দীর্ঘদিন অভিনয় থেকে দূরে থাকা এই অভিনেতার পক্ষে এত টাকা দেওয়ার সামর্থ্য নেই। এই ব্যয় মেটাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে তার পরিবার।
সেজন্য তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে অয়ন বলেন, ‘আব্বুর অবস্থা সংকটাপন্ন। চিকিৎসকরা আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু এই চিকিৎসা শেষ করতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন, যা মেটাতে ব্যর্থ হচ্ছি আমরা। আব্বুর জন্য প্রতিদিন দেড় লাখ টাকার উপরে খরচ লাগছে। বেশ কিছু দামি ইঞ্জেকশন দিতে হচ্ছে। এসব জোগাড় করতে গিয়ে চিকিৎসক থেকে শুরু করে অরিয়ন গ্রুপের মতো ওষুধ কোম্পানির মালিকের পক্ষ থেকেও সুবিধা পাচ্ছি। কিন্তু আর্থিক জোগান দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। উনার কার্যালয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ চিঠি পাঠানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সাড়া পাবো। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও যোগাযোগ হয়েছে। আব্বুর অসুস্থতার বিষয়টি জেনেছেন মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সাহেব। তিনি ফোনে ওষুধপত্রের দাম সরকারি দামে রাখার জন্য কর্তৃপক্ষকে বলে দিয়েছেন। এতে অনেকটাই উপকার হয়েছে।
জাপানি একটা ফিল্টার রয়েছে, যার দাম ২ লাখ টাকা। এ ফিল্টার দুটি ব্যবহার করতে হবে আব্বুর জন্য। একটা আগেই দিয়েছি। আরেকটা আজ দেয়া হবে। মন্ত্রী মহোদয় ফোন করে বলে দেয়ায় মূল্য অনেক কমেছে। আত্মীয়স্বজনরা মিলে টাকার ব্যবস্থা করেছি। দ্রুত আব্বুর চিকিৎসার জন্য বেশ মোটা অংকের সাহায্য প্রয়োজন।’
এর আগে ২০০৫ সালে হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন মুজিবুর রহমান দিলু। তখন দীর্ঘদিন হাসপাতালে ছিলেন। সেই সময় গুলেন বারি সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়ে অনেক দিন কোমায় ছিলেন। পরে সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনও করেন।
এরপর ২০১৫ সালেও তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেবার তার রক্তে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়েছিল। যার নাম সেপ্টিসিমিয়া (সিডিমোনাস)। এছাড়া কিডনিতে দুটো পাথরও দেখা দিয়েছিল। চিকিৎসা শেষে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছিলেন তিনি। সম্প্রতি আবার তিনি ফুসফুসের অসুখে ভুগছেন।
প্রসঙ্গত, এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা মুজিবুর রহমান দিলু স্ত্রী, দুই পুত্র এবং এক কন্যাকে নিয়ে রাজধানীর উত্তরায় বসবাস করেন। দীর্ঘদিন নিয়মিতই কাজ করেছেন। একাধারে তাকে দেখা যেত মঞ্চ ও টেলিভিশন নাটকে। মঞ্চে তার অভিনীত আলোচিত কিছু নাটক হলো- ‘আমি গাধা বলছি’, ‘জনতার রঙ্গশালা’, ‘আরেক ফাল্গুন’, ‘ওমা কি তামাশা’, ‘নানা রঙের দিনগুলি’ ইত্যাদি।
১৯৭২ সালে তিনি বিটিভিতে অভিনেতা হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। বিটিভিতে সংশপ্তক নাটক করেই তিনি আলোচনায় আসেন। এ নাটকে মালু চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের মাঝে সাড়া ফেলেছিলেন। এখনো অনেকের কাছে তিনি মালু নামেই পরিচিত।
আরও পড়ুন : নায়ক জসিমের পরিবার কেমন আছে?
এছাড়া তথাপি, সময় অসময় নামের দুটি ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করে বেশ পরিচিতি পান। বিটিভির অসংখ্য এক ঘণ্টার নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন।
ছোটদের সংগঠন টুনটুনির সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করেছেন। মুজিবুর রহমান দিলু একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। এ ছাড়া নাট্যকার ও নাট্যপরিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন।
অভিনয় থেকে দূরে আছেন বেশকিছু দিন ধরে। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে কর্মরত তিনি।
উল্লেখ্য, নাট্যব্যক্তিত্ব ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আতাউর রহমানের ছোট ভাই মুজিবুর রহমান দিলু। পরিবারের পক্ষ থেকে তার রোগমুক্তির জন্য সবার কাছে দোয়া চাওয়া হয়েছে।
সূত্র: জাগোনিউজ
আর/০৮:১৪/১৮ জানুয়ারি