চট্টগ্রাম

বঙ্গোপসাগরে বিলাসবহুল প্রমোদতরী

তানভীর আহমেদ

চট্টগ্রাম, ১৭ জানুয়ারি- বঙ্গোপসাগরে টানা সাত ঘণ্টার রোমাঞ্চকর ভ্রমণ শুরু করল বিলাসবহুল প্রমোদতরী বে ওয়ান ক্রুজ। প্রথম যাত্রায় পতেঙ্গা ওয়াটার বাস টার্মিনাল থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ শ যাত্রী নিয়ে সেন্টমার্টিনে পৌঁছায় এটি। সেন্টমার্টিনে যাত্রীদের চার ঘণ্টার ভ্রমণ বিরতি দিয়ে চট্টগ্রামে ফিরে আসে।

জাহাজটি মূল সেন্টমার্টিন দ্বীপের অদূরে নোঙরের পর সেখানে অপেক্ষমাণ ছোট জাহাজে যাত্রীদের মূল দ্বীপে নেওয়া হয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড বিলাসবহুল এ প্রমোদতরীটি বাণিজ্যিকভাবে পরিচালনা করছে। অত্যাধুনিক এ প্রমোদতরী বঙ্গোপসাগর ভ্রমণে নতুন মাত্রা যোগ করল।

একসঙ্গে ২ হাজার যাত্রী নিয়ে জাহাজটির সপ্তাহে তিন দিন যাত্রা করার কথা। প্রমোদতরীটি সেন্টমার্টিনে এক দিন অবস্থান করবে যেন যাত্রীরা পুরো দ্বীপের সৌন্দর্য ভালোভাবে উপভোগ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে যাত্রীরা জাহাজেই রাতযাপন করবেন। জাহাজটির আবহাওয়া সতর্কসংকেত ৬ পর্যন্ত সহনশীল। পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট, তাৎক্ষণিক চিকিৎসাসেবা ও যাত্রী নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মোট ৮০ জন ক্রু নিয়ে জাহাজটি যাত্রা করলেও ধীরে ধীরে এ সংখ্যা বাড়ানো হবে।

প্রমোদতরীটির ক্যাপ্টেন আলমগীর বলেন, ‘জাহাজটিতে বিশেষ দুটি ফিন বা ডানা রয়েছে। মাছের পাখনার মতো এ ফিন দুটি জাহাজের ভারসাম্য রক্ষায় বাড়তি সাহায্য করে। দেশে আর কোনো প্রমোদতরীতে এমন অত্যাধুনিক সংযোজন নেই। জাহাজটিতে রয়েছে মোট ১১ হাজার ২০০ বিএইচপিসম্পন্ন মেইন প্রপালশন ইঞ্জিন।

প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ১৮ থেকে ২০ নটিক্যাল মাইল বেগে চলতে পারবে জাহাজটি।’ জাপানের কোবেই শহরের মিতসুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজে তৈরি হয়েছে সাত তলাবিশিষ্ট এ ক্রুজ জাহাজ। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে এটি যাত্রীসেবা শুরু করল। প্রমোদতরীটির দৈর্ঘ্য ৪০০ ফুট, প্রস্থ ৫৫ ফুট, প্রায় ১৮ ফুট ড্রাফট রয়েছে। এর গভীরতা ৫ দশমিক ৪ মিটার। রয়েছে বিলাসবহুল রয়েল স্যুট, প্রেসিডেন্ট স্যুট, ফার্স্ট ক্লাস কেবিন, বাংকার বেড কেবিন, টুইন বেড কেবিন, আরামদায়ক চেয়ারসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির আসন। সর্বনিম্ন ৩ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা ভাড়ায় এ প্রমোদতরীতে ভ্রমণ করা যাবে।

আরও পড়ুন :  পৌরসভা নির্বাচনে ৪৬টিতে আ.লীগ ও চারটিতে বিএনপির জয়

এ প্যাকেজের আওতায় জাহাজে রাতযাপন, সমুদ্র বিনোদনের সুযোগ আছে। একমুখী ভাড়া, রাতযাপনসহ খরচ আরও কম পড়বে। বিভিন্ন ফ্লোরে স্বয়ংক্রিয় ভেন্ডিং মেশিনগুলো নজরে পড়বে। রয়েছে নিজস্ব ক্যাটারিং সার্ভিস ও ক্যান্টিন, রেস্টুরেন্ট। জাহাজটির সপ্তম তলায় রয়েছে খোলা আসন। এখানে কনসার্ট ও বিভিন্ন বিনোদন আয়োজন যাত্রীদের প্রত্যাশা পূরণ করেছে। সমুদ্রদর্শনের জন্য প্রমোদতরীর ছাদ সবুজ ঘাসের কার্পেটে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সমুদ্রে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অপূর্ব দৃশ্য এখান থেকে দেখা যায়।

কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ রশিদ বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে এ ধরনের যাত্রীবাহী প্রমোদতরী এটিই দেশে প্রথম। প্রায় ১০৫ কোটি টাকা এ প্রমোদতরীর জন্য বিনিয়োগ করা হয়েছে। যারা নাগরিক ক্লান্তি দূর করতে চান তাদের সমুদ্রদর্শন ও সেন্টমার্টিনের রূপ উপভোগের আয়োজন করতে পেরে আমি খুশি। যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা ও ভ্রমণ নিরাপত্তা প্রদান আমাদের লক্ষ্য। এখনো কিছু ক্ষেত্রে উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে, সেসব নিয়ে আমরা কাজ করছি। ভ্রমণপ্রিয়দের বলব আপনারা আসুন, বিলাসবহুল এ জাহাজে সমুদ্রদর্শনের প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করবেন সেটাই প্রত্যাশা করি।’

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

আর/০৮:১৪/১৭ জানুয়ারি

Back to top button