ইসলাম

ইসলামে বর্ণবাদের কোনো স্থান নেই!

মাওলানা মিরাজ রহমান

কোনো জনগোষ্ঠীর প্রতি গাত্রবর্ণের কারণে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে বৈষম্যমূলক আচরণের নীতিকেই বর্ণবাদ বলে। হাল জমানায় শুধু গাত্রবর্ণের মধ্যেই বর্ণবাদ সীমাবদ্ধ নয়; বরং শ্রেণী, জাতি, দেশ ও ধর্ম বিশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতেও এমনটি পরিলক্ষিত হয়। বর্ণবাদ সমাজ শোষণের এক অন্যতম হাতিয়ার। ইসলামে বর্ণবাদের কোনো স্থান নেই। ইসলাম বর্ণবাদকে নির্মূল করে আদর্শ রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠা করে এর উদাহরণ বিশ্ববাসীর সামনে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাই তো আমরা দেখতে পাই হাবশার হজরত বিলালকে [রা.] ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিনরূপে।

কোরানে কারিমের অসংখ্য আয়াতে এবং হজরত রাসুলুল্লাহ [সা.] অনেক হাদিসে বর্ণবাদিতাকে নিষেধ করেছেন। এমনকি হজরত রাসুলুল্লাহ [সা.] বিদায় হজের ভাষণে বলেছেন, হে লোক সকল, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে অধিকতর সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী, যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া অবলম্বন করে, সব বিষয়ে আল্লাহর কথা অধিক খেয়াল রাখে।

আরও পড়ুন: সন্তান-সন্তুতির ওপর বাবা-মায়ের অধিকার কি?

ধর্ম বিশ্বাস, গাত্রবর্ণ, শক্তি ও বংশের অহংকারবশত কোনো ব্যক্তি বা জাতি কর্তৃক নিজেদের শ্রেষ্ঠ বলে দাবি করাকে ইসলাম প্রত্যাখ্যান করে। সাম্প্রদায়িকতা ও বর্ণবাদকে ইসলাম সমর্থন দেয় না। কোরান কঠোরভাবে মানুষের মধ্যকার সমতাকে নিশ্চিত করেছে। কোরানে কারিমে ইরশাদ হচ্ছে হে মানবমণ্ডলী, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের একজন নারী ও একজন পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি এবং বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিত হও।

নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালার কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত, যে সর্বাধিক পরহেজগার। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সর্বজ্ঞ ও সবকিছুর খবর রাখেন। সুরা হুজরাত: ১৩। বর্তমান বিশ্বে অন্যতম সমস্যা হচ্ছে বর্ণবাদ ও সাম্প্র্রদায়িকতা। আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, বৈষম্য ও বর্ণবাদ দূরীকরণের ব্যাপারে জোর প্রচেষ্টা চালানো সত্ত্বেও বিশ্ব থেকে এখনো বৈষম্য ও বর্ণবাদের অবসান হয়নি। এমনকি এই বর্ণবাদের কারণেই বিশ্বব্যাপী অনেক মানুষকে প্রাণ হারাতে হচ্ছে। বিশ্ববাসীকে আজ এমন এক সমঝোতায় আসতে হবে, যাতে করে দুনিয়ায় আর বর্ণবাদ নামের কোনো কিছুর অস্তিত্ব না থাকে। আর এ ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই উত্তম সময়। ইসলামের কোনো বিধানই বর্ণবাদের দায়ে দুষ্ট নয়। আমরা আশা করব, এবারের বিশ্ব বর্ণবৈষম্য নির্মূল দিবসে বিশ্ববাসী নতুন করে ভাববে এই ঘৃণ্য তৎপরতা নিয়ে। বর্ণবাদী আচরণ বন্ধে সবাইকে আন্তরিক হতে হবে।

এন এইচ, ১২ অক্টোবর

Back to top button