জাতীয়

বিদেশে বাড়ি-ফ্ল্যাট কেনা বাংলাদেশিদের পরিচয় চেয়ে পররাষ্ট্রকে দুদকের চিঠি

ঢাকা, ১৪ জানুয়ারি- কানাডা, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে যেসব বাংলাদেশি নাগরিক বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন, তাদের তালিকা চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক মহাপরিচালক (মানি লন্ডারিং) আ ন ম আল ফিরোজের সই করা চিঠিটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বরাবর পাঠানো হয়েছে।

হাইকোর্টের নির্দেশনায় দুদক থেকে গত ১১ জানুয়ারি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর ওই চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে সংস্থাটির জানিয়েছেন ‍দুদক সচিব ড. মো. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার।

তিনি জানান, ‘সেকেন্ড হোম’ নামে বিদেশে বিনিয়োগ কিংবা বহুল আলোচিত পানামা পেপার্স ও প্যারাডাইস পেপার্সসহ বিভিন্ন কেলেঙ্কারিতে যেসব বাংলাদেশিদের নাম উঠে এসেছে, তাদের বিষয়েও ‍দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় ওই চিঠিতে।

বিভিন্ন দেশে পাচার করে অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব থাকা বাংলাদেশিদের তালিকা চেয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের গবেষণা ও পত্রিকায় প্রকাশিত আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে মিস-ইনভয়েসিং, হুন্ডি, ব্যাংক ক্যাশ ট্রান্সফারের মতো পদ্ধতির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অর্থ বিভিন্ন দেশে পাচার হয়ে থাকে। এর ফলে বাংলাদেশ প্রতিনিয়ত মূলধন হারাচ্ছে, যাতে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

বাংলাদেশকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার জন্য যে পরিমাণ দেশীয় বিনিয়োগ প্রয়োজন, তা নিশ্চিত করতে হলে অর্থ পাচার রোধ করা একান্ত দরকার।

চিঠিতে উদাহরণ উল্লেখ করে বলা হয়, বাংলাদেশের নাগরিকদের একাংশ এ দেশ থেকে অর্থ পাচার করে বিদেশে বিনিয়োগের (Investment Quota) মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। বহুল আলোচিত পানামা পেপার্স, প্যারাডাইস পেপার্স ইত্যাদি কেলেঙ্কারিতে বিভিন্ন বাংলাদেশি নাগরিকের নাম উঠে এসেছে। এই ধারা রোধ করা সম্ভব না হলে আমাদের অর্থনৈতিক গতিশীলতা ভবিষ্যতে থমকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অর্থ পাচারের মাধ্যমে নাগরিকত্ব গ্রহণ রোধের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিয়ে সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনার বিকল্প নেই।

দুদক মনে করছে, এতে একদিকে অপরাধীদের সাজা নিশ্চিত হবে, অন্যদিকে দেশীয় সম্পদ ফেরত আনার পাশাপাশি অন্যান্যদের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে, যা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবেও কাজ করবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পাশাপাশি রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া এই কাজ করা শেষ হবে না বলেও মন্তব্য করেছে দুদক।

আরও পড়ুন :  পি কে হালদারের প্রায় এক হাজার ৬০ কোটি টাকা জব্দ

চিঠিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সহায়তা গ্রহণের ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রাথমিক পর্যায়ে বিভিন্ন দেশে পাচার করা সম্পদ বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব গ্রহণকারী বাংলাদেশিদের তথ্য কূটনৈতিক চ্যানেলে সংগ্রহ করে দিলে দুদক দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী হতে পারবে। এ অবস্থায় ইনভেস্টমেন্ট কোটায় যেসব বাংলাদেশি নাগরিক পৃথিবীর অন্যান্য দেশের নাগরিকত্ব নিয়েছে, তাদের সম্পর্কে তথ্য বা তালিকা দূতাবাসের মাধ্যমে বা অন্য কোনো উপায়ে পাওয়া যাবে কি না, চিঠিতে তা জানাতে অনুরোধ করেছে দুদক।

দুদক সচিব জানিয়েছেন, পানামা পেপারস সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে দুদকের উপপরিচালক এস এম এম আখতার হামিদ ভূঁঞার নেতৃত্বে তিন সদস্যের অনুসন্ধান টিম কাজ করছে। আর প্যারাডাইস পেপারস ফাঁস সংশ্লিষ্টদের নিয়ে দুদক পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলীর তত্ত্বাবধানে ওই টিম অনুসন্ধান কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

সূত্র: সারাবাংলা

আর/০৮:১৪/১৪ জানুয়ারি

Back to top button