পশ্চিমবঙ্গ

‘কুকথা’ সহ্য করেও দলে আছেন শিশির, গেরুয়া শিবিরে স্বাগত জানাল বিজেপি

কলকাতা, ১৩ জানুয়ারি – দিঘা–শংকরপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে শিশির অধিকারীর অপসারণ নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে তাঁর গড়েই। তারইমধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। একাংশের দাবি, এটা হওয়ারই ছিল। এসব নিয়ে জল্পনার মাঝে ‘কিছু জানা নেই’ বলেই দায় এড়ালেন শিশির অধিকারী। দুই ছেলে বিজেপিতে গিয়েছেন৷ এটাই যেন তাঁর ‘অপরাধ’৷ ছয় দশকেরও বেশি রাজনৈতিক জীবন পেরিয়ে এখন তাই নিজের দলের কাছে শুনতে হচ্ছে উপসর্গহীন বেইমানের মতো কটাক্ষ৷

মঙ্গলবারই শুধু তিনি বলেন, ‘‌আমি কিছুই জানি না। আমায় জানান হয়নি।’‌ আর সূত্রের খবর, ঘনিষ্ঠ মহলে শিশির অধিকারী ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন, ‘‌দলের কেউ খোঁজ নেয় না।’‌ তবে এখন সব মুখ বুজে সহ্য করছেন কাঁথির শান্তিকুঞ্জের প্রবীণতম সদস্য। শিশির অধিকারীর ঘনিষ্ঠরা বলছেন, কাঁথির সাংসদ এর পরেই দলবদল করবেন!‌

এদিকে নতুন দায়িত্ব পেয়ে অখিল গিরি বলেন, ‘‌শিশিরবাবু কোনওদিন কোনও কাজ করেননি। তাই সম্ভবত এই সিদ্ধান্ত।’‌ ছেলের জন্যই শিশিরবাবুকে এহেন পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে বলে কটাক্ষ করে তৃণমূল কংগ্রেস। কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‌ছেলের জন্য শিশিরদা অত্যন্ত লজ্জিত।’‌ তৃণমূলের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘‌দলে অনেকদিন ধরেই কোনও গুরুত্ব পাচ্ছিলাম না।’‌

আরও পড়ুন : ‘সুযোগ পেলে আমিও স্বাস্থ্যসাথী কার্ড করবো’, বললেন দিলীপ

এই বিষয়ে মুকুল রায় বলেন, ‘‌শিশিরদা প্রবীণ মানুষ। দীর্ঘদিন সাংসদ ছিলেন। জীবনের শেষলগ্নে এসে এটা না হলেই বোধহয় ভালো হত।’‌ তাঁর সঙ্গে কথা হবে বলেও জানিয়েছেন মুকুল রায়। তবে কুণাল ঘোষের করা মন্তব্য নিয়ে শিশির ঘনিষ্ঠরা পালচা বলছেন, ছেলেদের বিরুদ্ধে যেমন শিশিরবাবু মুখ খোলেননি, তেমনই তৃণমূল নেতারা অধিকারী পরিবারের সদস্যদের লাগাতার ব্যক্তিগত আক্রমণ করে গেলেও মুখ বুজে তা সহ্য করেছেন শিশির অধিকারী৷ দলের নেতাদের আক্রমণে যন্ত্রণা পেয়ে ঘনিষ্ঠ মহলে দুঃখ করলেও প্রকাশ্যে একটা শব্দও উচ্চারণ করেননি তিনি৷ এই বয়সে রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা বা ব্যক্তিগত ক্যারিশমা প্রমাণের প্রয়োজন নেই শিশিরের৷ ছয় দশকের বেশি বর্ণময় রাজনৈতিক কেরিয়ারে বারবার নিজের দাপট এবং প্রয়োজনীয়তা প্রমাণ করেছেন৷ গত দু’‌দশকে তার যথেষ্ট সুফল পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসও৷

এবার কি শিশির অধিকারীও যোগ দেবেন বিজেপি শিবিরে? অপসারণের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর বঙ্গ–বিজেপির নেতাদের এই প্রশ্ন করা হলে তাঁরা বলেন, ‘‌শুভেন্দু এসেছেন এটাই আমাদের কাছে অনেক বড় পাওয়া। ওঁকেও আমন্ত্রণ জানাব। আসবেন কি না সেটা ওঁর সিদ্ধান্ত।’‌

উল্লেখ্য, কাঁথি, অবিভক্ত মেদিনীপুর আর শিশির অধিকারী রাজ্য রাজনীতিতে এক সময় সমার্থক হয়ে উঠেছিল৷ শিশিরের হাত ধরেই উত্থান শুভেন্দুর৷ ১৯৬৩ সালে প্রথমবার তৎকালীন পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় কাঁথির ভবানীচকে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছিলেন শিশির অধিকারী৷ ১৯৬৯ সালে প্রথম কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন কাঁথি পুরসভায়৷ পরের বছরই কাঁথির পুরপ্রধান নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি৷তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বাম আমলেও দশকের পর দশক কাঁথির গড় আগলে রেখেছিলেন শিশির৷ ১৯৮২ সালে কংগ্রেসের টিকিটে প্রথমবার দক্ষিণ কাঁথি থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি৷ কিন্তু ১৯৮৭ সালে দলীয় কোন্দলের জেরে তাঁকে টিকিট দেয়নি কংগ্রেস৷ কিন্তু কাঁথিতে তাঁর প্রভাব বোঝাতে অসুবিধা হয়নি শিশিরের৷ খোদ রাজীব গান্ধী প্রচারে এসেও কংগ্রেস প্রার্থীকে জেতাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন।

এখানেই শেষ নয়। কংগ্রেসে থাকাকালীন ১৯৯৮ সালে লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী নীতীশ সেনগুপ্তের হারে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন শিশির অধিকারী৷ আবার ১৯৯৯ সালে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর বিজেপি–তৃণমূল জোট প্রার্থী হিসেবে সেই নীতীশ সেনগুপ্তকেই কাঁথি থেকে জিতিয়ে এনেছিলেন তিনি৷ তৃণমূলের টিকিটে ২০০১ সালে ফের বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি৷ ২০০৬ সালে যখন তৃণমূলের বিধায়ক সংখ্যা কমে ৩০ হয়েছিল, সে বছরও নিজের দাপটে তৎকালীন বাম মন্ত্রী সিপিআইএমের প্রবোধ সিনহাকে এগরা থেকে হারিয়ে দিয়েছিলেন শিশির৷ ছেলে শুভেন্দুকে তুলনামূলক নিরাপদ আসন দক্ষিণ কাঁথি ছেড়ে দিয়ে প্রবোধ সিনহার গড় এগরাতে গিয়ে তাঁকে হারিয়ে এসেছিলেন শিশির৷ ২০০৮ সালে শুভেন্দুকে সঙ্গে নিয়ে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদ তৃণমূলের হাতে তুলে দেন শিশির অধিকারী৷ এরপর ২০০৯, ২০১৪, ২০১৯ সালে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন শিশির৷

সূত্র : হিন্দুস্থান টাইমস
এন এ/ ১৩ জানুয়ারি

Back to top button