জেলা সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল শিশির অধিকারীকে
কলকাতা, ১৩ জানুয়ারি- এবার পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সভাপতির পদ থেকে শিশির অধিকারীকে সরালো তৃণমূল৷ সোমরাতে রাতে দিঘা-শংকরপুর উন্নয়ন পর্ষদের সভাপতির পদ থেকে শিশির অধিকারীকে অপসারণের নির্দেশিকা জারি করে রাজ্য। দায়িত্ব দেওয়া হয় অখিল গিরিকে। রাজ্যের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই নানা কানাঘুষো শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
এবিষয়ে অখিল গিরি বলেন, “শিশিরবাবু কোনওদিন কোনও কাজ করেননি। সেই কারণেই সম্ভবত এই সিদ্ধান্ত।” এ ব্যাপারে রীতিমতো হুঙ্কার দিয়েছেন শিশির–পুত্র বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলে বিজেপি–র এক মিছিল চলাকালীন এদিন শুভেন্দু বলেন, ‘যাঁরা তাঁকে সরিয়ে দিয়েছেন মে মাসে তাঁদেরই পশ্চিমবঙ্গ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে।’
তৃণমূলের অন্যতম বরিষ্ঠ সাংসদ শিশির অধিকারী ১৯৯৮ সালে তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিতি। তাঁর মেজো ছেলে শুভেন্দু তৃণমূল ছাড়ার আগে পর্যন্ত নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রের আসনের প্রতিনিধি ছিলেন। ১৯ ডিসেম্বর ৬ জন বিধায়ক ও বর্ধমান পূর্বের সাংসদ সুনীল মণ্ডল–সহ শাসকদলের ডজনখানেক নেতাকে নিয়ে বিজেপি–তে যোগ দেন শুভেন্দু অধিকারী। তাঁরা কেন্দ্রীয় স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর হাত থেকে তুলে নেন বিজেপি–র পতাকা।
এর কয়েকদিন পর শুভেন্দুর ভাই সৌমেন্দু অধিকারীকে কাঁথি পুরসভার প্রশাসক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তিনি এর বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে মামলাও করেন। এদিকে, শুভেন্দুর দাদা তথা শিশির অধিকারীর বড় ছেলে দিব্যেন্দু অধিকারী তমলুকের সাংসদ।
ডিসেম্বরের শেষের দিকে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছিলেন যে তাঁর ঘরেতেও পদ্ম ফুটবে। আর ঠিক তার পরের দিনই বিজেপি–তে যোগ দেন তাঁর ভাই সৌমেন্দু। এবার কি শিশির অধিকারীও যোগ দেবেন বিজেপি শিবিরে? তা নিয়ে জোর জল্পনা রাজনৈতিক মহলে৷ সেই জল্পনা বাড়িয়ে রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতা মঙ্গলবার রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতা মুকুল রায় বলেন, ‘উনি তো এসেইছেন। ওঁর ছেলে এসেছে, আবার কী! শিশিরের আসা সময়ের অপেক্ষা। তারপরই পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সভাপতির পদ থেকে শিশির অধিকারীকে সরালো তৃণমূল৷
আরও পড়ুন : মুখেই বিরোধিতা! স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিলেন দিলীপ ঘোষের পরিবারের সদস্যরা
ছেলের কারণেই শিশিরবাবুকে এহেন পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে বলে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। কুণাল ঘোষের কথায়, ‘‘ওঁর দুই পুত্র দলের নামে অনেক কথা বলেছেন। তাতে তৃণমূলের কর্মীরা দুঃখ পেয়েছেন। তাঁদের মনে একটা ক্ষোভ আছে যে, শিশির’দা তো তাঁর ছেলেদের দল-বিরোধী কথাবার্তচার কোনও নিন্দা করলেন না! যদিও এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই। এটা একেবারেই প্রশাসনিক এবং সরকারি সিদ্ধান্ত। শিশির’দাকে আমি শ্রদ্ধা করি। উনিও আমায় খুবই স্নেহ করেন। কিন্তু ওঁর বয়স হয়েছে। সে ভাবে কাজ করতে পারছিলেন না। তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’
এদিকে, দিঘা-শংকরপুর উন্নয়ন পর্ষদের সভাপতির পদ থেকে সরানোর বিজ্ঞপ্তি যখন রাজ্য সরকারে জারি করে তখন রাজারহাটের একটি হাসপাতালে শিশির তৈরি হচ্ছেন চোখের ছানি কাটানোর জন্য। শিশির শুধু বলেছেন, ‘‘আমার কোনও অ্যাকশনও নেই। রিঅ্যাকশনও নেই।’’
সূত্র: কলকাতা২৪x৭
আর/০৮:১৪/১৩ জানুয়ারি