গাজীপুর

আওয়ামী লীগ নেতার জাদুতে সরকারি খাল এখন জমি

ফয়সাল আহমেদ

গাজীপুর, ০৯ জানুয়ারি – বাঁধ দিয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ও গাজীপুর ইউনিয়নের একটি খাল জমিতে রূপান্তর হয়ে গেছে। স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার জাদুতে চেংটির খালের এ রূপান্তর। আর সেই জাদুকর হলেন আক্তাপাড়া গ্রামের মাওনা ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা হান্নান ভূঁইয়া। বাঁধের ফলে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে সরকারি এ খালটি।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, উপজেলার মাওনা ও গাজীপুর ইউনিয়নের চারগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত এ খাল দীর্ঘদিন ধরেই অর্থনৈতিক গুরুত্ব বহন করে আসছে। সালদহ নদী থেকে এ খালের উৎপত্তি। পরে লবলঙ্গ খালে সংযুক্ত হওয়া খালটির দৈর্ঘ্য প্রায় ছয় কিলোমিটার। বিভিন্ন সময় দখলের ফলে বেশ কয়েক বছর ধরেই খালটির পানিপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। কয়েক দিন ধরেই গাজীপুর-আক্তাপাড়া সড়কের চেংটি খালে নির্মিত সেতুর পশ্চিম পাশে সরকারি খালের গতিপথ বন্ধ করে জমিতে রূপান্তর করছেন অভিযুক্ত হান্নান ভূঁইয়া।

নীজমাওনা গ্রামের কৃষক মফিজউদ্দিন বলেন, উপজেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই চেংটির খাল। এ খালকে কেন্দ্র করেই আক্তাপাড়া, নীজমাওনা ও গাজীপুর গ্রামের কৃষি অর্থনীতি পরিচালিত হতো। কিন্তু যেভাবে বাঁধ তৈরি করে খালের গতিপথ বন্ধ করা হয়েছে, এতে অস্তিত্বই থাকবে না এ খালের। তিনি আরও বলেন, খালে বাঁধ তৈরি করার আগেই দুপাশের পানির প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই খালে পানিপ্রবাহ না হলে কৃষকদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে। অন্তত কৃষকদের বাঁচাতে এ খালটি রক্ষার দাবি তার।

আরও পড়ুন : অভিযুক্ত দিহানের আইনজীবী দেয়নি পরিবার

আক্তাপাড়া গ্রামের যুবক আলী নূরের ভাষ্য, নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এ খালটিতে সারাবছরেই পানিপ্রবাহ হতো। চলতি বছরও ভালো মাছ পাওয়া গিয়েছিল। স্থানীয় কৃষকদের কৃষিকাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি দেশীয় মাছের উৎস ছিল খালটি। বর্তমানে খালের প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়ায় স্থানীয় হাজারো মানুষের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

গাজীপুর গ্রামের ব্যবসায়ী ফারুক আহমেদ বলেন, এ খালের কারণেই এলাকার অতিবৃষ্টির পানি দ্রুত খালে নেমে যেত, জলাবদ্ধতার কবল মুক্ত ছিল খালের আশপাশের কয়েকটি গ্রাম। খালের প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়ায় এখন তো জলাবদ্ধতার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এলাকার লোকজনের স্বার্থে দ্রুত খালটির পানিপ্রবাহ চলমান করে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

মাওনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম খোকন বলেন, প্রাচীনতম এ খালটি এলাকার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এলাকার মানুষের সঙ্গে খালকে বাঁচাতে হবে। এ খালের প্রবাহ বন্ধের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি খালটি বাঁচাতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত হান্নান ভূঁইয়া বলেন, এ জমিটি তার। খালের গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় তিনি এই খালে বাঁধ তৈরি করে তার জমিটি উদ্ধার করেছেন।

শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা নাসরিন বলেন, সরকারি খালের গতিপ্রকৃতি বা প্রবাহ বন্ধ করার কোনো সুযোগ নেই। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে তাকে কেউ অবহিত করেননি। তবে তিনি খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন।

সূত্র : আমাদের সময়
এন এ/ ০৯ জানুয়ারি

Back to top button