জাতীয়

রাজউকে ঠিকাদারের তাণ্ডব: চরম আতঙ্কে প্রকৌশলীরা

ঢাকা, ১২ অক্টোবর- সরকারি ক্রয়-নীতিমালার নিয়ম ভেঙে কাজ না দেয়ায় রাজউকে তাণ্ডব চালিয়েছেন ঠিকাদার মীর মঞ্জুর হোসেন। একই সাথে দুই প্রকল্প পরিচালকসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রাণনাশের হুমকি দেন তিনি।

এ ঘটনার পর থেকে প্রকৌশলীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বাধ্য হয়ে মতিঝিল থানায় ৫২৭ ও ৫২৯ নম্বর দুটি জিডি করা হয়েছে বলে রাজউক সূত্র জানায়।

জানতে চাইলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) চেয়ারম্যান সাঈদ নুর হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে আমার সংবাদকে বলেন, ‘রাজউকে আক্রমণ, সরকারি কাজে বাধা প্রদান, প্রকল্প পরিচালক মো. আবদুল আওয়াল ও প্রকল্প পরিচালক মো. নুরুল ইসলামকে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেয়ায় হামলাকারী ঠিকাদার মীর মঞ্জুর হোসেনের বিরুদ্ধে গত বৃহস্পতিবার মতিঝিল থানায় দুটি জিডি করা হয়েছে।

একই সাথে তার ঠিকাদারি লাইসেন্স বাতিল করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, ‘সরকারি কাজে বাধা দেয়ায় সরকারি সিস্টেমে মেসার্স রাজিন ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মীর মঞ্জুর হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পের রাজউক প্রকল্প পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের পাঁচটি সড়কের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর শেষ সময় ছিলো। তাতে প্রায় ৫০টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে।

কিন্তু রাজিন ইন্টারন্যাশনালের মীর মঞ্জুর হোসেন অংশ নেয়নি। তারপরও বৃহস্পতিবার আনুমানিক আড়াইটায় মীর মঞ্জুর হোসেন পরিকল্পনা করে নাটকীয় স্টাইলে এনেক্স ভবনের ৫১৬ নং রুমে হঠাৎ করে ১০ থেকে ১২ জনের ক্যাডার বাহিনী নিয়ে আমার অফিসে প্রবেশ করেই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। কিছু বলার আগেই অফিসের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে তারা।

এমনকি টেন্ডার বাতিল করে আমাকে কাজ না দিলে তোকে মেরে কেটে ফেলা হবে। তোর পরিবারকে বিদায় করা হবে বলে প্রাণনাশের হুমকি দেন ঠিকাদার মীর মঞ্জুর হোসেন। আমি যেটা বলি সেটাই রাজউকের আইন। তোকে সে কাজ করতে হবে বলেও হুমকি দেয় মঞ্জুর হোসেন।’ না মানলে খবর আছে।

এ ঘটনার পর কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মতিঝিল থানায় ৫২৯ নং সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। এ ঘটনার পর ঠিকাদার মীর মঞ্জুর হোসেন উত্তরা আদর্শ আবাসিক (তৃতীয় পর্ব) প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. আবদুল আউয়ালের রুমে আক্রমণ করেন।

পিডি মো. আবদুল আউয়াল বলেন, ‘কিছু বুঝে উঠার আগেই কলাবাগনের ৬৩/সি লেক সার্কাসের মেসার্স রাজিন ইন্টারন্যাশনালের মীর মঞ্জুর হোসেন ১০ থেকে ১২ জন ক্যাডার বাহিনী নিয়ে অফিসে ঢুকেই আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। একই সাথে প্রাণনাশের হুমকিও দেয় সে। বাধ্য হয়ে মতিঝিল থানায় ৫২৭ নং জিডি করা হয়েছে।’

এ ঘটনার পর রাজউকের প্রকৌশলীরা চরম আতঙ্কে রয়েছেন। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা। তারা বলছেন, প্রতিদিন হাজার হাজার কোটি টাকার কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। রাজউকে তালিকাভুক্ত ৪৩১ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশের প্রায় দুই হাজার ঠিকাদার বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে অংশ নিয়ে থাকে। রাজউকের ইসিহাসে এ ধরনের ঘটনা কোনো ঠিকাদার ঘটায়নি।’

আবদুল আউয়াল বলেন, ‘দায়িত্ব পালনকালে সরকারি অফিসে এসে তারা যদি এভাবে কাজে বাধা দেয়, প্রাণনাশের হুমকি দেয় তাহলে কিভাবে চলাফেরা করবো। আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?’ বর্তমানে পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি বলে তিনি জানান।

নুরুল ইসলাম বলেন, ‘অফিসে যদি ক্যাডারবাহিনী নিয়ে মঞ্জুর প্রকাশ্যে প্রাণনাশের ভয়ভীতি দেখায় তাহলে বাইরে কিভাবে চলাফেরা করবো। আমাদের নিরাপত্তা কোথায়, পরিবারের নিরাপত্তা কোথায়? সরকারি ক্রয়-নীতিমালার নিয়ম ভেঙে অনৈতিকভাবে ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পে কাজ না দেয়ার সে এভাবে আফিসে এসে আক্রমণ করেছে। রাজউকের এসে সে চাঁদা দাবি করে। তাহলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়।’

আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা সমস্যায় আঞ্চলিক নিরাপত্তার ঝুঁকি বাড়বে

পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী উজ্জল মল্লিক বলেন, ‘আমরা সরকারি দায়িত্ব পালনকালে যদি এভাবে হামলার স্বীকার হই তাহলে কাজ করবো কিভাবে। কালকে (আজ) পূর্বাচলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবাষির্কী উদযাপন উপলক্ষে ‘বঙ্গবন্ধু স্কয়ার’ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উদ্বোধন করা হবে। কিন্তু আমাদের মধ্যে চরমভাবে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কাজে মন বসাতে পারছি না।

এ ধরনের অপরাধীদের শাস্তি না হলে ভয় হচ্ছে, আমাদেরও আক্রমণ করতে পারে দুষ্কৃতকারীরা। জানতে চাইলে ঠিকাদার মঞ্জুর আমার সংবাদকে বলেন, ‘তার সাথে আমার বাগ্বিতণ্ডা হয়েছে। তবে প্রাণনাশের হুমকি দেইনি, মেরে ফেলবো, কেটে ফেলবো এ ধরনের কিছু বলিনি। ঠিকাদার আবুল ফজলের লোক অফিস ভাঙচুর করেছে, পুলিশ তা তদন্ত করছে।’

রাজউকে ঠিকাদার মঞ্জুর হোসেনের এ ধরনের হামলা ও প্রাণনাশের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)। সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. সাহাদত হোসেন শীবলু দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে কঠিন শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। প্রকৌশলী উজ্জল মল্লিক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্কয়ার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।

সচিব মো. শহীদ উল্লাহ খন্দকারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি থাকবেন রাজউক চেয়ারম্যান সাঈদ নুর আলম, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি আসম আমিনুর রহমান।

সূত্র : আমারসংবাদ
এম এন / ১২ অক্টোবর

Back to top button