জাতীয়

একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়ে নতুন বছরে মাঠে থাকবে বিএনপি

হাবিবুর রহমান খান

ঢাকা, ০১ জানুয়ারি- নতুন বছরে নবোদ্যমে রাজনীতির মাঠে ঘুরে দাঁড়ানোর কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছে বিএনপির হাইকমান্ড। এ নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও আলোচনা হয়েছে। সবার মতামত নিয়ে বছরব্যাপী দলের করণীয় নিয়ে একগুচ্ছ পরিকল্পনা তৈরি করা হবে।

স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতা জানান, পৌরসভা নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলকে চাঙ্গা করা, চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন, সাংগঠনিক পুনর্গঠন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তি, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনসহ আরও কিছু বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে সাজানো হচ্ছে এসব পরিকল্পনা। বিভিন্ন ইস্যুতে দলের মধ্যে সৃষ্ট কোন্দল কাটিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনার ওপরও দেয়া হচ্ছে গুরুত্ব। পাশাপাশি ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও নতুন নির্বাচনের দাবি জোরালো করার কথাও ভাবছেন দায়িত্বশীল নেতারা। নতুন বছরে বিএনপির কর্মসূচি মূলত স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে ঘিরেই। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও অনাড়ম্বরভাবে তা উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। গত ১ নভেম্বর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে আহ্বায়ক ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালামকে সদস্য সচিব করে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। সাত সদস্যের একটি স্টিয়ারিং কমিটিও করেছে দলটি।

এছাড়া কর্মসূচি সফল করতে বিষয়ভিত্তিক ১৫ ও বিভাগভিত্তিক ১০টিসহ মোট ২৫টি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বছরব্যাপী কর্মসূচি নিয়ে একটা ক্যালেন্ডার তৈরি করা হচ্ছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে থাকবে, বিষয়ভিত্তিক রচনা প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, চিত্রপ্রদর্শনী, বিষয়ভিত্তিক প্রকাশনা যেমন- গণতন্ত্র, মানবাধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন, বৈদেশিক নীতি, সমাজতন্ত্র থেকে মুক্তবাজার অর্থনীতি, অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিএনপির ভূমিকা, শহীদ জিয়াউর রহমানের কর্মসূচিভিত্তিক কর্মশালা, বিএনপির শাসনামলের সাফল্য, পুস্তিকা প্রকাশ, লিফলেট বিতরণ, ডকুমেন্টারি নির্মাণ, নৃত্যনাট্য, পথনাটক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনী, বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা, স্বনির্ভর বাংলাদেশ গঠনে বিএনপির ভূমিকা, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী দর্শন, দেশ গঠনে জিয়ার ১৯ দফার ভূমিকা, শহীদ জিয়ার উন্নয়নের রাজনীতি প্রভৃতি বিষয় আলোচনা সভা এবং ছয়টি বিষয়ভিত্তিক প্রকাশনা।

গেল বছরের ভুল-ত্রুটিগুলো পর্যালোচনা করে তা সংশোধনে বিশেষ নজর দেয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে দলের নেতাদের মধ্যে নানা ইস্যুতে সৃষ্ট দূরত্ব ঘুচিয়ে আনার ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। যে কোনো মূল্যে দলে ‘চেইন অব কমান্ড’ ধরে রাখতে চায় হাইকমান্ড। সরকার পতনে তৃতীয় শক্তির সঙ্গে যেসব নেতার আঁতাতের অভিযোগ রয়েছে তা নিয়ে এখনও ভাবনায় তারা। বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের ওই প্রক্রিয়া থেকে সরে আসার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। কোনোভাবেই দলের মধ্যে যাতে বিভেদ সৃষ্টি না হয় সেদিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তবে সবকিছুর পরও হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কেউ দলের শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করলে তাকে রেহাই দেয়া হবে না। যত বড় নেতাই হোক প্রয়োজনে তাকে দল থেকে বহিষ্কারেও পিছপা হবে না হাইকমান্ড। এমন বার্তা সিনিয়র নেতাসহ সব স্তরে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গেল বছরটি আমাদের সবার জন্য একটা কষ্টের ও বেদনার বছর ছিল। করোনা মহামারী সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে। এখনও করোনার থাবা বন্ধ হয়নি। এমন একটা পরিস্থিতিতে আমরা নতুন বছর শুরু করতে যাচ্ছি। এ বছরটি সবার জীবনে প্রশান্তি বয়ে আনুক এ প্রার্থনাই করছি।

তিনি বলেন, নতুন বছর ঘিরে আমাদের দলেও বেশকিছু পরিকল্পনা রয়েছে। এ বছর আমাদের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এবার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। সুবর্ণজয়ন্তী ঘিরে সারা বছর আমরা নানা কর্মসূচি নিয়েছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যতটা জাঁকজমকভাবে সুবর্ণজয়ন্তী পালন করা যায় তার সব রকম চেষ্টাই আমরা করব। এছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলকে উজ্জীবিত করার চিন্তাভাবনাও রয়েছে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পুরোপুরি মুক্তির বিষয়টিকে আমরা সর্বাধিক গুরুত্ব দেব। পাশাপাশি একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে চলমান আন্দোলনকে আরও জোরদার করার পরিকল্পনা রয়েছে।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের পাশাপাশি নতুন বছরে দল পুনর্গঠনেও বিশেষ গুরুত্ব দেবে বিএনপি। একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই নতুন করে সংগঠন গোছানোর কার্যক্রম শুরু করে দলটি। কিন্তু গেল বছর করোনার কারণে সব ভেস্তে যায়। স্থবির হয়ে পড়ে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া। প্রায় ছয় মাস স্থগিত থাকার পর গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে সাংগঠনিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা হয়। এ সময় চট্টগ্রাম মহানগরসহ পাঁচটি সাংগঠনিক জেলার নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। সবমিলিয়ে ৮২টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে প্রায় অর্ধশত কমিটি এখনও মেয়াদোত্তীর্ণ। গেল বছর যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটির কলেবর বাড়ানো হলেও দুটি কমিটি এখনও আংশিক অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া বেশির ভাগ অঙ্গসংগঠনের কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ। নতুন বছরে এসব কমিটি পুনর্গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে। এ ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকমান্ড।

কমিটি পুনর্গঠনের পাশাপাশি তৃণমূল নেতাকর্মীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার ওপর গুরুত্ব দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে হাইকমান্ডের। এর অংশ হিসেবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পৌর নির্বাচনে নানা অনিয়ম ও কারচুপি হতে পারে জেনেও তারা ভোট থেকে সরে আসবে না। দলটির নেতারা মনে করেন, নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক ভোটকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মধ্যে একটা চাঙ্গা ভাব তৈরি হবে। যারা দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় আছেন তারা সক্রিয় হবেন। সবমিলিয়ে তৃণমূলে গতি ফিরে আসবে।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নেতাকর্মীরা যাতে মাঠে থাকে তা কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। পৌর নির্বাচনের পাশাপাশি জানুয়ারির শেষদিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ভোটকে ঘিরেও ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। ধানের শীষের প্রার্থীকে জয়ী করাতে কেন্দ্রীয় নেতাদের দিয়ে একটি শক্তিশালী সমন্বয় কমিটি গঠন করা হবে। প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে মাঠে নামবেন কেন্দ্রীয় নেতারাও।

জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাজাহান বলেন, গেল বছরটি মহামারীর কারণে সবকিছুর মতো আমাদের দলীয় কর্মকাণ্ডেও এর প্রভাব পড়ে। করোনার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে দল পুনর্গঠন করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, গেল বছরের ভুল-ত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন বছর নবোদ্যমে শুরু করতে চাই। খালেদা জিয়ার পুরোপুরি মুক্তি ও নতুন একটি নির্বাচনেই এখন আমাদের অন্যতম টার্গেট। সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।

সূত্র: যুগান্তর
আডি/ ০১ জানুয়ারি

Back to top button