জাতীয়

নতুন বছরে ষড়যন্ত্র সামলিয়ে দলকে সুশৃঙ্খল করবে আওয়ামী লীগ

হাসিবুল হাসান

ঢাকা, ০১ জানুয়ারি- করোনার সঙ্গে আরও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখেই পথচলা শুরু হচ্ছে আওয়ামী লীগের। ২০২১ সালেও দেশের চলমান অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে চায়।

বছর জুড়ে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনে চিন্তাভাবছে করছে তারা। এছাড়া যেকোনো ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সতর্ক থেকে রাজনীতির মাঠ দখলে রাখতে চায় ক্ষতাসীনরা। অন্যদিকে নতুন বছরের শুরু থেকেই সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে তাদের। এর সঙ্গে রয়েছে জেলা-উপজেলা থেকে শুরু করে ওয়ার্ড ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত চলমান দল গোছানোর কাজ সামনে এগিয়ে নেয়া।

করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মেয়াদোত্তীর্ণ কয়েকটি সহযোগী সংগঠনকেও সম্মেলনের মাধ্যমে ঢেলে সাজাতে চায় তারা। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, নতুন বছরেও করোনা পরিস্থিতি সামলিয়ে যেকোনো ষড়যন্ত্র ও প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা সতর্ক থাকবেন। পাশাপাশি তৃণমূল পর্যন্ত দলকে আরও সুসংগঠিত ও সুশৃঙ্খল করে গড়ে তুলতে চান।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান মঙ্গলবার বিকালে বলেন, প্রতিটি বছরই আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জের। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য। প্রতি বছর ঝড়-ঝঞ্ঝা আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত করে। পাশাপাশি ষড়যন্ত্রকারী মহল আছে, দেশকে ধ্বংস করতেও যাদের কষ্ট হয় না। এর সঙ্গে করোনাভাইরাস তো এখনও রয়েছেই। তিনি বলেন, আমাদের দলীয় কর্মকাণ্ড ও নির্বাচনের অংশগ্রহণ তো চলমান কাজ। নতুন বছরে এর সঙ্গে করোনা মোকাবিলা করে দেশের পদ্মা সেতু-মেট্রোরেল এবং মেগাপ্রজেক্টসহ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো সামনে এগিয়ে নিতে হবে। শিশুদের লেখাপড়ায় যে প্রভাব পড়েছে, সেটা পোষানোর বিষয়টাও গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়ে শুরু হয়েছিল আওয়ামী লীগের ২০২০ সাল। সরকারের পাশাপাশি দল হিসেবে আওয়ামী লীগেরও বছর জুড়ে ছিল নানা পরিকল্পনা ও কর্মসূচি। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে জন্মশতবার্ষিকীর কর্মসূচি স্থগিত ও সংক্ষিপ্ত করতে হয়েছে।

সেই করোনাভাইরাস সংকট সঙ্গে নিয়েই শুরু হচ্ছে ২০২১ সাল। এ বছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে বাংলাদেশ। মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া দল আওয়ামী লীগ এই বছরে নানা কর্মসূচি পালন করবে। এছাড়া স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এই বছরে যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সতর্ক থেকে রাজপথ নিজেতের নিয়ন্ত্রণে রাখবে আওয়ামী লীগ। সরকারবিরোধী কোনো কর্মসূচিতে বড় হতে দেবে না তারা। পাশাপাশি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বিভিন্ন দিবসভিত্তিক কর্মসূচিতে মূল দল আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে রাজপথে ব্যস্ত রাখা হবে।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয়েছে পৌরসভা নির্বাচনের ডামাডোল। প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে ২৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপের ২৪টি পৌরসভার ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বেশিরভাগ জায়গায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছে। নতুন বছরের প্রথম মাসের মাঝামাঝিতেই আগামী ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় এবং ৩০ জানুয়ারি তৃতীয় ধাপের ৬১ ও ৬৪ পৌরসভায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে এই দুই ধাপেও দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। এরপর ধাপে ধাপে তফসিল ঘোষণার পরে বাকি পৌরসভা নির্বাচনী মাঠেও ব্যস্ত থাকতে হবে আওয়ামী লীগকে।

অন্যদিকে ২০২১ সালের প্রথম মাসের শেষে দিকে (২৭ জানুয়ারি) দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া এপ্রিল থেকে শুরু হতে পারে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। ধাপে ধাপে সারা দেশের প্রায় সাড়ে তিন হাজার ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনের বিএনপির অংশগ্রহণ থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে তৃণমূলের এই ভোটও আওয়ামী লীগের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ।

করোনাভাইরাসের কারণে ২০২০ সালের দীর্ঘ সময় দল গোছানোর কাজ স্থগিত রাখতে হয়েছিল আওয়ামী লীগকে। সেপ্টেম্বরের পর থেকে ফের এই কাজ শুরু করে দলটি। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগসহ গত বছরের শেষে দিকে সম্মেলন হওয়া সহযোগী সংগঠনগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় উপ-কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করার কাজও প্রায় শেষের দিকে। চলছে ওয়ার্ড ইউনিয়ন থেকে শুরু করে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা সম্মেলনের কাজও। এখনও দেশের প্রায় অর্ধেকের বেশি জেলা আওয়ামী লীগ মেয়াদোত্তীর্ণ। যে কয়টির সম্মেলন হয়েছে, তার মধ্যে পূর্ণাঙ্গ হয়েছে মাত্র দু-তিনটি। এর সঙ্গে রয়েছে ওয়ার্ড ইউনিয়ন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। ২০২১ সালে এই কাজগুলো সঠিকভাবে শেষ করতে চায় আওয়ামী লীগ।

দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে নতুন বছরে আরও কঠোর থাকার কথা ভাবছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গত বছরের শেষ দিকে দুই জেলার চারজন শীর্ষ নেতাকে অব্যাহতি দিয়েছে তারা। অনুষ্ঠেয় পৌরসভা নির্বাচনে আগের বিদ্রোহীদের এবার আর মনোনয়ন না দেয়ার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। আওয়ামী লীগের এক সাংগঠনিক সম্পাদক যুগান্তরকে বলেন, দলকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সুসংগঠিত করে ঢেলে সাজাতে চান তারা।

এ বিষয়ে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার কঠোর দিক নির্দেশনাও রয়েছে। তিনি দলকে আরও সুশৃঙ্খল হিসেবে গড়ে তুলতে চান। এ বিষয়ে তিনি সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নির্দেশনাও দিয়েছেন। নতুন বছরে আওয়ামী লীগের এই অবস্থান আরও বেশি কঠোর হবে বলেও জানান তিনি।

বর্তমানে আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠন মেয়াদোত্তীর্ণ। ২০২০ সালের মার্চে মেয়াদ শেষ হয়েছে যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ও তাঁতী লীগের। আর কমিটি ঘোষণার দিন ধরে হিসাব করলে জুলাইয়ে মেয়াদ শেষ হয়েছে ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের। এছাড়া দীর্ঘদিন আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই চলছে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ। মেয়াদ শেষের পরেই সম্মেলনের সিদ্ধান্ত থাকলেও করোনার কারণে তা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে মূল দল আওয়ামী লীগের পাশাপাশি সহযোগীরাও ফের শুরু করেছে সাংগঠনিক কার্যক্রম।

ইতোমধ্যে সম্মেলন হওয়া পাঁচ সহযোগী সংগঠনের মধ্যে যুবলীগ ছাড়া চারটির পূর্ণাঙ্গ কমিটিও হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, সংগঠনকে দীর্ঘ সময় মেয়াদোত্তীর্ণ রাখার সুযোগ নেই। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই এই সংগঠনগুলোর সম্মেলনের আয়োজন করা হবে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, ২০২০ সালে করোনাভাইরাসের সময় বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে ছিল। সাংগঠনিকভাবেও আমরা সংগঠনকে আরও বেশি গতিশীল রাখার চেষ্টা করেছি। ২০২১ সালে শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাব। দেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও নির্দেশনায় কাজ করব। এটাই হচ্ছে আমাদের মূল লক্ষ্য।

সূত্র: যুগান্তর
আডি/ ০১ জানুয়ারি

Back to top button