জাতীয়

কেরানীগঞ্জে সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে পরামর্শকে ব্যয়ের প্রস্তাব ৩০ কোটি টাকা

হামিদ-উজ-জামান

ঢাকা, ০১ জানুয়ারি- কেরানীগঞ্জের সড়ক উন্নয়নের বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এজন্য হাতে নেয়া হচ্ছে ‘ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ২০ কোটি টাকা। কিন্তু প্রকল্পের আওতায় পরামর্শকের জন্য চাওয়া হয়েছে ৩০ কোটি টাকা। এতে আপত্তি জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

এছাড়া বৈদেশিক প্রশিক্ষণের নামে বিদেশ সফরের জন্য বরাদ্দ ধরা হয় ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। কিন্তু এই ব্যয় বাদ দেয়ার পক্ষে মত দেয়া হয়েছে। গত ৩০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এমন মত দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ওই সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, সভায় পরিকল্পনা কমিশনের যুগ্ম প্রধান (পল্লী প্রতিষ্ঠান) বলেন, কন্সালটেন্সি খাতে ৩০ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। কাজের পরিমাণ বিবেচনায় এ খাতে ব্যয় অতিরিক্ত বলে প্রতীয়মান হয়। এ খাতে একান্ত প্রয়োজন ব্যতিরেকে পরামর্শক ব্যয় বাদ দেয়া যেতে পারে। পরবর্তীকালে বিস্তারিত আলোচনার পর পরামর্শকের জন্য যৌক্তিকভাবে ব্যয় কমিয়ে দিতে বলা হয়েছে।

এছাড়া আরও বলা হয়, পরামর্শকের ধরন, সংখ্যা, জনমাস, সম্মানীর পরিমাণ ইত্যাদি বিস্তারিত ব্যয় বিভাজন দিতে হবে। সেই সঙ্গে পরামর্শকের টার্মস অব রেফারেন্স (টিওআর) ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) জাকির হোসেন আকন্দ বুধবার যুগান্তরকে বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় প্রথমবারের মতো দুটি সড়ক হবে, যেখানে দুই ধারে বিশেষ নালা থাকবে। যার মধ্য দিয়ে সব ধরনের ইউটিলিটি সার্ভিসের তার যাবে। ফলে রাস্তা কাটার প্রয়োজন হবে না। এজন্য একেবারেই পরামর্শক বাদ দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে বিদেশ সফরের প্রস্তাব বাদ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। কেননা যেহেতু পরামর্শক দিয়েই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে তাই সরকারি কর্মকর্তাদের টাকা খরচ করে বিদেশে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে পরামর্শকদের সঙ্গে দেশীয় কর্মকর্তাদের যুক্ত হয়ে কাজ করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যাতে তারা শিখে নিতে পারেন।

এদিকে প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত সড়কের সঙ্গে ব্রিজ বা কালভার্টের কোনো প্রস্তাব দেয়া হয়নি। কেন এমন করা হয়েছে জানতে চাইলে পিইসি সভায় এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলী জানান, প্রকল্পের কলেবর বৃহৎ হয়ে যাওয়ায় ব্রিজ বা কালভার্টের সংস্থান ধরা হয়নি।

এ প্রসঙ্গে সভার সভাপতি পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) জাকির হোসেন আকন্দ বলেন, ব্রিজ বা কালভার্ট ছাড়া শুধু সড়ক প্রশস্তকরণ করা হলে প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। তাই প্রকল্পের মধ্যেই ব্রিজ বা কালভার্টের প্রস্তাব দিতে হবে। প্রকল্পের আওতায় বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বাবদ ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছিল। এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলে পরিকল্পনা কমিশন। পরে বৈশ্বিক করোনা মহামারীর কারণে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ অঙ্গ বাদ দেয়াসহ এ অঙ্গের বরাদ্দ বাদ দেয়ার বিষয়ে একমত পোষণ করা হয়।

পিইসি সভার কার্যপত্রে আরও বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় চার লেন সড়কের যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। এ সময় এলজিইডির পক্ষ থেকে বলা হয়, কেরানীগঞ্জের অধিকাংশ এলাকা অত্যন্ত জনবহুল। এছাড়া প্রকল্পে বিবেচ্য কিছু সড়ক উন্নয়ন করা হলে তা আন্তঃজেলা বাস চলাচলের জন্য উপযোগী হবে এবং নতুন বাইপাস রুট তৈরি হবে।

এ সময় পরিকল্পনা কমিশনের প্রতিনিধি বলেন, প্রস্তাবিত এলাকায় আরএইচডির কোনো সড়ক নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা তা জানা প্রয়োজন। এছাড়া প্রস্তাবিত সড়ক ও ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের মধ্যে সংযোগস্থলে কোনো বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন আছে কিনা তা বিবেচনা করা প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের আওতাভুক্ত সড়কগুলো গতানুগতিক সড়কের মতো না হওয়ায় ডিপিপিতে প্রতিটি সড়ক, ব্রিজ, কালভার্টের বিস্তারিত ডিজাইন এবং ডিজাইনের আইটেমভিত্তিক ব্যয় বিভাজনসহ কিলোমিটার প্রতি ব্যয় এর হিসাব সংযুক্ত করতে হবে। এছাড়া সভায় প্রকল্পের আওতায় প্রাক্কলিত বিভিন্ন ব্যয়ের বিষয়ে পরিকল্পনা উইংয়ের সঙ্গে পরামর্শক করে যৌক্তিকভাবে চূড়ান্ত করার সুপারিশ দেয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রক্রিয়াকরণ শেষে অনুমোদন পেলে প্রকল্পটি চলতি বছর শেষে শুরু হয়ে ২০২৫ সালের অক্টোবরের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। প্রকল্পের আওতায় তিনটি উপজেলা সড়ক মোট ১৫ দশমিক ৬০ কিলোমিটার এবং দুটি গ্রাম সড়ক মোট ৬ কিলোমিটার উন্নয়ন করা হবে। উপজেলা সড়কে ফুটপাত, বাইসাইকেল লেন ও ইউটিলিটি সুবিধা সৃষ্টিসহ প্রশস্ততা যথাক্রমে ৮০ ফুট, ৬৫ ফুট ও ৫৫ ফুট করা হবে। এছাড়া গ্রাম সড়কের প্রশস্ততা যথাক্রমে ৫২ ফুট ও ৩৬ ফুট করা হবে। সেই সঙ্গে প্রকল্পের আওতায় ১৪০ মিটার ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ, ২১ দশমিক ৬০ কিলোমিটার ফুটপাত উন্নয়ন ও নির্মাণ, ৫১ দশমিক ৫২ একর জমি অধিগ্রহণসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।

সূত্র: যুগান্তর
আডি/ ০১ জানুয়ারি

Back to top button