প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন জালিয়াতি ঘটনায় এবার তদন্তে দুদক
ঢাকা, ০১ জানুয়ারি- প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি জালিয়াতি মামলার তদন্তভার অবশেষে পুলিশের কাছ থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে দেয়া হয়েছে। আদালতের এক আদেশে অতি সম্প্রতি এ তদন্তভার হস্তান্তর করা হয়।
এর আগে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নথি জালিয়াতির মতো চাঞ্চল্যকর এমন মামলার প্রতিটি ধাপেই পুরোপুরি ‘দায়সারা’ কাজ করেন সংশ্লিষ্টরা।
শুধু তাই নয়, এখতিয়ারবহির্ভূত তদন্ত করে আদালতে এ মামলার চার্জশিটও (অভিযোগপত্র) দেয়া হয়। মামলার শুরুতেই পুলিশের এখতিয়ারবহির্ভূত তদন্ত ও আদালতে দায়সারা চার্জশিট দেয়ার বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এতে অবশেষে মামলাটির তদন্তভার পেল দুদক। শিগগির তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে কমিশন মামলাটির তদন্তকাজ শুরু করবে।
দুদকের সাবেক মহাপরিচালক (লিগ্যাল) ও সাবেক সিনিয়র জেলা জজ মো. মঈদুল ইসলাম বলেন, চাঞ্চল্যকর মামলাটির স্তরে স্তরে সংশ্লিষ্টদের গাফিলতি ও দায়সারা কাজের প্রমাণ রয়েছে।
মামলাটির পেছনে আট মাস পণ্ডশ্রম দিয়েছে পুলিশ। এরইসঙ্গে আদালতেরও সময় অপচয় হয়েছে। তবে অবশেষে আদালতের আদেশে মামলাটির তদন্তভার সঠিক সংস্থা (দুদক) পেয়েছে।
দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, দুদকের সিডিউলভুক্ত অপরাধের তদন্ত শুধু দুদকই করতে পারে। অন্য কোনো সংস্থা করলে তা আইনানুগ হবে না।
আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে তদন্ত : দুদক আইন-২০০৪-এর ২০(১) ধারায় বলা হয়েছে, ফৌজদারি কার্যবিধিতে যা কিছুই থাকুক না কেন, এ আইনের অধীন ও উহার তফসিলে বর্ণিত অপরাধসমূহ কেবল কমিশন কর্তৃক অনুসন্ধান বা তদন্তযোগ্য হবে।
আর সরকারি সম্পদ বা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক দাফতরিক দায়িত্ব পালনকালে সংঘটিত অপরাধ দুদকের তফসিলভুক্ত।
অথচ প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি জালিয়াতির মামলায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অফিস সহায়ক ফাতেমা খাতুন (সরকারি কর্মচারী) এজাহারভুক্ত আসামি হওয়া সত্ত্বেও এর তদন্ত করেছিল পুলিশ।
গত বছরের ২০ জুন গেজেট আকারে প্রকাশিত দুদক বিধিমালা-২০০৭-এর সংশোধনীর ৪ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে: আইনের তফসিলভুক্ত কোনো অপরাধ সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো ব্যক্তি থানায় অভিযোগ করতে পারবে।
সংশ্লিষ্ট থানা অভিযোগটি পাওয়ার পর উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সেটি দুদকে পাঠাবে। তবে আলোচ্য মামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলার ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি।
এ ছাড়া দুদক আইন, ২০০৪-এর ২৮(১) ধারায় বলা হয়েছে, আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে ভিন্নরূপ যা কিছু থাকুক না কেন, এ আইনের অধীন ও উহার তফসিলভুক্ত বর্ণিত অপরাধসমূহ কেবল স্পেশাল জজ কর্তৃক বিচারযোগ্য হবে।
কিন্তু এ মামলায় পুলিশের দেয়া চার্জশিট আমলে গ্রহণ করে পলাতক আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেছিলেন ঢাকার একজন ম্যাজিস্ট্রেট।
দায়সারা চার্জশিট : প্রধানমন্ত্রীর প্রদত্ত ‘টিক চিহ্ন’ জাল বা টেম্পারিং করা এবং তা সঠিক বলে ব্যবহার করার অভিযোগে মামলাটি করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক (৭) মোহাম্মদ রফিকুল আলম বাদী হয়ে গত ৫ মে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অফিস সহায়ক ফাতেমা খাতুনসহ তিনজনকে আসামি করা হয়। এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে সারসংক্ষেপ প্যাকেটটি খুলেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার (ড. এমদাদুল হকের নামের পাশে) ‘টিক চিহ্ন’ কলম দিয়ে টেম্পারিং করে সেখানে ক্রস চিহ্ন দিয়েছেন।
আর প্রফেসর মো. আবদুর রউফের নামের পাশে ক্রস চিহ্ন এবং এয়ার কমোডর (অব.) এম আবদুস সামাদ আজাদের নামের পাশে ‘টিক চিহ্ন’ দিয়েছেন।
অতি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় নথিটি বাইরে রেখে গত ৮ মার্চ তা রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে জমা দেন। মামলাটির তদন্ত শেষে গত ১১ জুলাই আদালতে এ মামলার চার্জশিট দেয় পুলিশ।
সেখানে ছয়জনকে আসামি করা হয়। এরা হলেন : তরিকুল ইসলাম মুমিন, ফাতেমা খাতুন, তার ছেলে ফরহাদ হোসেন ওরফে মোরশেদ আলম ওরফে মিকি, নাজিম উদ্দিন, মো. রুবেল ও এয়ার কমোডর (অব.) এম আবদুস সামাদ আজাদ।
ঢাকার এক মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এ চার্জশিট গ্রহণ করে পলাতক আবদুস সামাদ আজাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেছিলেন।
এরপর ৪ অক্টোবর তদন্ত কর্মকর্তা তেজগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, ‘হাইকোর্টের আদেশপ্রাপ্ত হয়ে জানতে পারি, ঘটনার তদন্ত ও আসামিদের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে শাহজাহান ও রবিউল আউয়ালের নাম এলেও চার্জশিটে তাদের আসামি করা হয়নি। বিষয়টি ন্যায়বিচারের পরিপন্থী এবং আমার অনিচ্ছাকৃত ভুল।’
প্রসঙ্গত, পুলিশের এখতিয়ারবহির্ভূত তদন্তের বিষয়ে দৈনিক যুগান্তরে ২৫ সেপ্টেম্বর ‘প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি জালিয়াতি, ‘দায়সারা’ কাজ প্রতিটি ধাপেই’ শিরোনামে এবং ৫ অক্টোবর ‘প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি জালিয়াতি: চার্জশিটে নেই স্বীকারোক্তিতে আসা নাম’ শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এ ছাড়াও একাধিক প্রতিবেদনে পুলিশের এখতিয়ারবহির্ভূত এ তদন্তের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।
সূত্র: যুগান্তর
আডি/ ০১ জানুয়ারি