ঢালিউড

২০২০ সালে যেসব তারকাদের হারিয়েছি

ঢাকা, ৩১ ডিসেম্বর- কেমন কাটল ২০২০ সাল? সবার জবাব একটাই – বিষে ভরা বিশ (২০)। পুরো বছরটাই করোনাভাইরাস তাণ্ডবে বিধ্বস্ত। প্রিয়জনদের হারানোর বছর এটি। এই বছরে করোনা মহামারীতে পড়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন দেশে-বিদেশের অনেক তারকা। বাংলাদেশেও করোনা কেড়ে নিয়েছে অনেক কিংবদন্তি তারকাদের।

এছাড়াও নানা রকম অসুখে ভুগে মারা গেছেন নানা শোবিজ অঙ্গনের অনেক তারকা। দেখে নেয়া যাক ২০২০ সালে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন যেসব তারকা ও গুণী মানুষ-

প্লেব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোর

দীর্ঘদিন ধরে ব্লাড ক্যান্সারে ভুগে চলতি বছরেই না মারা গেলেন দেশের ‘প্লেব্যাক সম্রাট’খ্যাত জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর। ৬ জুলাই সন্ধ্যায় রাজশাহী মহানগরীর মহিষবাথান এলাকায় তার বোন ডা. শিখা বিশ্বাসের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই সঙ্গীতশিল্পী। তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।

ক্যারিয়ারে আটবার চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন এই বরেন্য শিল্পী।

১৯৭৭ সালে এন্ড্রু কিশোর আলম খানের সুরে ‘মেইল ট্রেন’ চলচ্চিত্রে ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক যাত্রা শুরু করেন। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।

তার জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে- ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যেখানে’, ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান’, ‘ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’, ‘পড়ে না চোখের পলক’, ‘পদ্মপাতার পানি’, ‘ওগো বিদেশিনী’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’, ‘আমি চিরকাল প্রেমের কাঙ্গাল’ প্রভৃতি।

সুরের যাদুকর আলাউদ্দীন আলী

চলতি বছরের ৯ আগস্ট মারা যান বরেণ্য সুর সম্রাট আলাউদ্দীন আলী । সেদিন সন্ধ্যা ৫টা ৫০ মিনিটে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

দীর্ঘদিন আলাউদ্দীন আলী ফুসফুসের প্রদাহ ও রক্তে সংক্রমণের সমস্যায় ভুগছিলেন। এছাড়া মরণব্যাধী ক্যানসারেও ভুগছিলেন।

বাংলা গান, বিশেষ করে বাংলা চলচ্চিত্রে বহু হৃদয়কাড়া গানের গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন আলাউদ্দীন আলী । একটি দুটি নয় পাঁচ হাজারের বেশি গানে সুর করেছেন। তার সেসব সৃষ্টি মানুষের মুখে মুখে।

২০১৫ সালের জুন মাসে আলাউদ্দীন আলীর শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ে। এরপর থেকে তিনি কয়েক দফায় বিদেশেও চিকিৎসা নিয়েছেন।

তবে এরপর থেকে তিনি আর উঠে দাঁড়াতে পারেননি। ফিরতে পারেননি স্বাভাবিক জীবনে, সঙ্গীতে।

এ পর্যন্ত ৮ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন এই সুরকার।

এর মধ্যে ১৯৭৮ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত টানা তিনবার পুরস্কৃত হয়ে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে রেকর্ড গড়েন। আলাউদ্দীন আলী ১৯৭৫ সাল থেকে সংগীত পরিচালনা করে বেশ প্রশংসিত হন।

‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’ এবং ‘যোগাযোগ’ চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এ ছাড়া ১৯৮৫ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।

এই সুরসম্রাটের অনবদ্য কিছু সৃষ্টির মধ্যে -একবার যদি কেউ ভালোবাসতো, যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়, প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ, ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়, দুঃখ ভালোবেসে প্রেমের খেলা খেলতে হয়, হয় যদি বদনাম হোক আরও, আছেন আমার মোক্তার আছেন আমার ব্যারিস্টার, সুখে থাকো ও আমার নন্দিনী, সূর্যোদয়ে তুমি সূর্যাস্তেও তুমি, জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো, বন্ধু তিন দিন তোর বাড়িত গেলাম দেখা পাইলাম না, যেটুকু সময় তুমি থাকো পাশে, এমনও তো প্রেম হয় চোখের জলে কথা কয়, কেউ কোনোদিন আমারে তো কথা দিল না, আমায় গেঁথে দাও না মাগো একটা পলাশ ফুলের মালা, শত জনমের স্বপ্ন তুমি আমার জীবনে এলে-সহ আরও অসংখ্য গান।

করোনায় মারা গেলেন নাট্ট ব্যক্তিত্ব কে এস ফিরোজ

গত ৯ সেপ্টেম্বর ভোর ৬টা ২০ মিনিটে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মারা যান টিভি নাটকের উজ্জ্বল নক্ষত্র কে এস ফিরোজ। তার পুরো নাম খন্দকার শহীদ উদ্দিন ফিরোজ।

কে এস ফিরোজ ১৯৬৭ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। মেজর হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে ১৯৭৭ সালে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন।

নাট্যদল ‘থিয়েটার’–এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে অভিনয়ে নাম লেখান কে এস ফিরোজ। এই দলের হয়ে তিনি অভিনয় করেছেন ‘সাত ঘাটের কানাকড়ি’, ‘কিং লিয়ার’ ও ‘রাক্ষসী’ নাটকে।

করোনায় হারিয়ে গেলেন সাদেক বাচ্চু

কে এস ফিরোজের শোক মুছতে না মুছতেই খবর আবারও শোকের ছায়ায় ডুবেছিল সিনেমাপাড়া। ১৪ সেপ্টেম্বর মারা যান ঢাকাই ছবির প্রতাপশালী অভিনেতা সাদেক বাচ্চু।

সেদিন দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর।

সাদেক বাচ্চু কোভিড ১৯-এ আক্রান্ত ছিলেন। প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে গত ৬ সেপ্টেম্বর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। এর পর ১২ সেপ্টেম্বর জানা যায়, এ অভিনেতা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। পরে অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে তাকে ইউনিভার্সেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউতে ছিলেন এ অভিনেতা। তাকে কৃত্রিমভাবে শতভাগ অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছিল। তার ফুসফুসের ৮০ শতাংশই কাজ করছিল না। এরপর সেই করোনার শিকারে পরিণত হন তিনি।

মৃত্যুর আগে বেশ কিছু দিন ধরেই অভিনয়ে অনিয়মিত ছিলেন সাদেক বাচ্চু। নব্বইয়ের দশকে পরিচালক এহতেশামের ‘চাঁদনী’ ছবিতে অভিনয় করে পরিচিতি পান তিনি। রেডিও বা টেলিভিশনের আগে তিনি অভিনয় শুরু করেন মঞ্চে। তার নাট্যদলের নাম মতিঝিল থিয়েটার; আমৃত্যু তিনি দলটির সভাপতি ছিলেন।

নারী সমিতির মঞ্চে এক নাটকে সাদেক বাচ্চুর অভিনয় দেখে তাকে বিটিভিতে ডেকে নেন প্রযোজক আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম। ১৯৭৪ সালে বিটিভিতে তিনি অভিনয় করেন ‘প্রথম অঙ্গীকার’ নাটকে। তার অভিনীত নাটকের সংখ্যা হাজারের বেশি। প্রথম অভিনীত সিনেমা শহীদুল আমিন পরিচালিত ‘রামের সুমতি’।

বহুমাত্রিক এই অভিনেতার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে– ‘জজ ব্যারিস্টার পুলিশ কমিশনার’, ‘জীবন নদীর তীরে’, ‘জোর করে ভালোবাসা হয় না’, ‘তোমার মাঝে আমি’, ‘ঢাকা টু বোম্বে’, ‘ভালোবাসা জিন্দাবাদ’, ‘এক জবান’, ‘আমার স্বপ্ন আমার সংসার’, ‘মন বসে না পড়ার টেবিলে’, ‘বধূবরণ’, ‘ময়দান’, ‘আমার প্রাণের স্বামী’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘প্রিয়জন’, ‘সুজন সখী’ প্রভৃতি।

করোনা কেড়ে নিয়ে ‘বড়চাচা’ আলী যাকেরকেও

ক্যান্সারের সঙ্গে চার বছরের লড়াই শেষে মারা গেলেন অভিনেতা ও নির্দেশক আলী যাকের। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। গত ২৭ নভেম্বর ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে তিনি মারা যান। একুশে পদকপ্রাপ্ত এ অভিনেতার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।

করোনায় আক্রান্ত ছিলেন আলী যাকের। তার ছেলে ইরেশ যাকের ফেইসবুকে এক পোস্টে জানিয়েছেন, মৃত্যুর দুদিন আগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণও ধরা পড়েছিল আলী যাকেরের।

গত শতকের সত্তর থেকে নব্বইয়ের দশকে মঞ্চ আর টেলিভিশনের জনপ্রিয় অভিনেতা ছিলেন আলী যাকের। তিনি ছিলেন বিশিষ্ট অভিনেতা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক, প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা।

১৯৭২ সালের আরণ্যক নাট্যদলের ‘কবর’ নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে পথচলা শুরু করেন এই নাট্যব্যক্তিত্ব। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৩ সাল থেকে কাজ করছেন নাগরিক নাট্যসম্প্রদায় নিয়ে।

প্রযোজক মতিউর রহমান পানুর বিদায়

গত ২৪ মার্চ রাত ১১টা ২০ মিনিটে রাজধানীর উত্তরার নিজ বাসায় মারা যান ‘বেদের মেয়ে জোছনা’খ্যাত প্রযোজক, পরিচালক মতিউর রহমান পানু মারা যান । দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন ‘মনের মাঝে তুমি’ ছবির এই পরিচালক পানু।

৯৬৪ সালে প্রথমে সহকারী পরিচালক হিসেবে সিনেমাপাড়ায় হাতেখড়ি হয় মতিউর রহমান পানুর। ১৯৭৯ সালে তিনি ‘হারানো মানিক’ ছবিটি পরিচালনা করে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

পানু ১৯৯০-১৯৯১ সালে ভারতের কলকাতায় ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ছবিটি নির্মাণ করেন, বছর খানেকের মধ্যেই তার সহকারী তোজাম্মেল হক বকুল বাংলাদেশের পটভূমিতে একই শিরোনামে ছবিটি পুনর্নির্মাণ করেন। ২০০২ সালের শেষ দিকে এসে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ‘মনের মাঝে তুমি’ ছবিটি । ২০০৫ সালে সালাউদ্দিন লাভলু পরিচালিত ‘মোল্লা বাড়ীর বউ’ ছবিটিও তিনি প্রযোজনা করেন।

তার নির্মিত অন্যান্য ছবিগুলো হচ্ছে – আপন ভাই, নাগ মহল, নির্দোষ, সাহস, মান মর্যাদা, নির্যাতন, সাথী,ডাক্তার বাড়ি এবং ওরে সাম্পানওয়ালা।

না ফেরার দেশে নায়িকা জবা

প্রথম ছবি করেই সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন এই অভিনেত্রী। কিন্তু দ্বিতীয় ছবিতে আর দেখা যায়নি তাকে। ৪৫ বছর ধরে তাকে খুঁজে পায়নি সিনেপ্রেমীরা।

গত ৩ মে তার মৃত্যুর খবরে জানা গেল, এতোদিন কোথায় ছিলেন এই অভিনেত্রী।

ঢাকাই ছবির এই চিত্রনায়িকার নাম – জবা চৌধুরী। ১৯৭৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘জিঘাংসা’ছবিতে বিপরীতে অভিনয় করেন তিনি।

৩ মে ভোরে রানী বন্দরে নিজ বাড়িতেই জবা চৌধুরী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বলে জানিয়েছেন জনপ্রিয় পরিচালক ছটকু আহমেদ।

‘জিঘাংসা’ ছবির খুরশিদ আলম ও রুনা লায়লার গাওয়া ‘পাখির বাসার মতো দুটি চোখ তোমার, ঠিক যেন নাটোরের বনলতা সেন’ গানটি তুমুল জনপ্রিয় ছিল সত্তর দশকে। এই গানে পর্দায় ঠোঁট মিলিয়েছিলেন নায়ক ওয়াসিম ও জবা চৌধুরী। তার পারিবারিক নাম জোবায়দা খাতুন। ঢাকায় যোগ দেন মঞ্চনাটকে। সেখানে বেশ কিছু বিখ্যাত নাটকে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেন তিনি। ক্যারিয়ারের মধ্য গগনে থাকা অবস্থায় এক প্রযোজককে বিয়ের পর অভিনয় থেকে দূরে সরে যান জবা। অবশেষে মৃত্যুর পর খোঁজ মিললো তার।

অভিনেত্রী মিনু মমতাজের মৃত্যু

দীর্ঘদিন কিডনি এবং চোখের সমস্যায় ভুগে অবেশেষে পরপারে পাড়ি জমালেন অভিনেত্রী মিনু মমতাজ। গত ২২ সেপ্টেম্বর দুপুর ১টায় রাজধানীর গ্রীন লাইফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। বর্ষীয়ান এই অভিনেত্রী করোনায় আক্রান্ত ছিলেন।

মৃত্যুর পরও অবহেলার শিকার হয়েছিলেন এই অভিনেত্রী।

সে সময় হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, তার ভোটার আইডি কার্ডের নাম জয়নব হাবিব। করোনা সন্দেহে তাকে আত্মীয়রা গত ৪ সেপ্টেম্বর গ্রীন লাইফ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এখানে টেস্ট করার পর তার করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। এরপর তাকে করোনার বিশেষ বিভাগে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল। সেই চিকিৎসা বাবদ প্রায় ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা বিল বাকি ছিল হাসপাতালে। বিল পরিশোধ করতে হবে শুনেই তার মরদেহ নিতে আসছিলেন না তার পরিবারের সদস্যরা। অবশেষে অভিনয় শিল্পী সংঘ ও মিনু মমতাজের এক ভাগ্নির সহায়তায় তার দাফনকার্য সম্পন্ন হয়।

চলে গেলেন সংগীতঙ্গ আজাদ রহমান

চলতি বছরের ১৬ মে মারা যান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী সুরকার, সংগীত পরিচালক ও কণ্ঠশিল্পী আজাদ রহমান । রাজধানী শ্যামলীতে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।

‘জন্ম আমার ধন্য হলো মা গো’, ‘ভালোবাসার মূল্য কত’, ‘ও চোখে চোখ পড়েছে যখনই’, ‘মনেরও রঙে রাঙাব’, ‘ডোরা কাটা দাগ দেখে বাঘ চেনা যায়’সহ অনেক গানে সুর দিয়েছেন তিনি।

১৯৬৩ সালে কলকাতার ‘মিস প্রিয়ংবদা’ চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনার মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে পা রাখেন আজাদ রহমান। এরপর নিজেকে সংগীতের একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।

বাংলাদেশে তিনি প্রথম সংগীত পরিচালনা করেন বাবুল চৌধুরী পরিচালিত ‘আগন্তুক’ ছবিতে। এরপর ‘বাদী থেকে বেগম’, ‘এপার ওপার’, ‘পাগলা রাজা’, ‘অনন্ত প্রেম’, ‘আমার সংসার’, ‘মায়ার সংসার’, ‘দস্যুবনহুর’, ‘ডুমুরের ফুল’, ‘মাসুদ রানা’সহ বহু ছবির সংগীত পরিচালনা করেছেন তিনি।

বাংলা একাডেমি থেকে দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে আজাদ রহমানের লেখা সংগীতবিষয়ক বই ‘বাংলা খেয়াল’। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে তিনি নির্মাণ করেছিলেন ‘গোপন কথা’ নামের একটি সিনেমা।

হারিয়েছি চিত্রনায়ক রানা হামিদকে

চলতি বছরের ১০ মে মারা যান চিত্রনায়ক, প্রযোজক ও পরিচালক রানা হামিদ। রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তিনি কিডনিজনিত রোগে ভুগছিলেন।

‘গ্যাং লিডার’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে পরিচিতি পান তিনি। এ অভিনেতা ‘মা মাটি দেশ’, ‘সবার ওপরে প্রেম’র মতো বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র প্রযোজনাও করেছেন।

এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের (এফডিসি) পরিচালকের দায়িত্বও পালন করেছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্যও ছিলেন তিনি। রানা হামিদ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিরও একজন সদস্য ছিলেন।

এ বছরে আরও হারিয়েছি যাদের

২০ জানুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান অভিনেত্রী, নির্দেশক ও আবৃত্তিশিল্পী ইশরাত নিশাত।

২ মার্চ মারা যান ‘যে মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছে লক্ষ মুক্তি সেনা’সহ একাধিক জনপ্রিয় গানের সুরকার সেলিম আশরাফ। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি শ্বাসকষ্ট ও কিডনির জটিলতায় ভুগছিলেন।

টেলিভিশন নৃত্যশিল্পী সংস্থার সাবেক সভাপতি, দেশের সুপরিচিত নৃত্যশিল্পী এবং নৃত্য পরিচালক হাসান ইমাম ১৫ মে সন্ধ্যায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যান।

চলচ্চিত্র প্রযোজক জনাব মোজাম্মেল হক সরকার ৩১ মে মারা যান। ৬ জুন মারা যান সহস্রাধিক সিনেমার নৃত্য পরিচালক এস আলম।

অনুষ্ঠান পরিকল্পনাকারী, নাট্যশিল্পী স্বপন সিদ্দিকী মারা গেছেন ১০ জুলাই।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২৮ জুলাই ল্যাব এইড হাসপাতালে মারা যান চিত্রপরিচালক আফতাব খান টুলু । তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর।

২৩ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০ টায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরীফউদ্দীন খান দীপু । তার বয়স হয়েছিলো ৬৫ বছর।

গেল ৩ নভেম্বর সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন দেশের নামজাদা চলচ্চিত্র প্রযোজক ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সাবেক সদস্য নাসির উদ্দিন দিলু।

চলতি মাসের ১০ তারিখে সকাল ৬টায় না ফেরার দেশে পাড়ি জমান দেশের ঐতিহ্যবাহী ও বৃহৎ অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সংগীতার স্বত্বাধিকারী সেলিম খান। তার বয়স হয়েছিল ৫৫ বছর।

এর আটদিন পরেই (১৮ ডিসেম্বর) করোনায় প্রাণ হারান ৮ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রসম্পাদক আমিনুল ইসলাম মিন্টু।

আডি/ ৩১ ডিসেম্বর

 

Back to top button