জাতীয়

‘আমি ভারতের প্রার্থী’: মেহেরপুরের অধ্যাপক মান্নানের বিরুদ্ধে মামলা

মেহেরপুর, ১০ জানুয়ারি – দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মেহেরপুর-১ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী অধ্যাপক আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে নির্বাচন কমিশন।

সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দোলন কান্তি ভট্টাচার্য্য বাদী হয়ে সোমবার মেহেরপুর মুখ্য বিচারিক হাকিম আবু বকর সিদ্দীকির আদালতে মামলাটি করেন। মঙ্গলবার আদালত শুনানি শেষে অধ্যাপক আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে সমন জারি করে।

মেহেরপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পল্লব ভট্টাচার্য্য তরুণ সাংবাদিকদের বলেন, ‘১৯ ফেব্রুয়ারি আসামিকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি করেছেন বিচারক।’

তিনি আরও জানান, একটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮ এর ১১(ক) লঙ্ঘনের দায়ে মামলার নির্দেশ দিয়েছে। সেই অনুযায়ী মামলা হয়েছে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মেহেরপুর-১ আসনে নৌকার প্রার্থী ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ৯৪ হাজার ৩০৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রফেসর আব্দুল মান্নান ট্রাক প্রতীকে পেয়েছেন ৫৭ হাজার ৬৮২ ভোট।

এ নির্বাচনের প্রচারের সময় ১৭ ডিসেম্বর ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল মান্নান সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অলোক কুমার দাসকে মোবাইল ফোনে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছিল।

সেসময় দুজনের কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল।

১ মিনিট ৫ সেকেন্ডের অডিওতে অধ্যাপক আব্দুল মান্নান চিকিৎসক অলোক কুমার দাসকে মোবাইলে বলছেন, ‘হ্যালো ডাক্তার অলোক, (পাশে আওয়াজ) এই আস্তে (ধমক)। আমি প্রফেসর আব্দুল মান্নান কথা বলছি। তুমি বাইরে থেকে এসে মেহেরপুরে বেশ আরামেই আছ। বাড়িঘর করে পয়সা-টাকা অনেক কামাই করেছ। আমি কিন্তু যেমন ভালো লোক, তেমনি খারাপ লোক। তোমাকে মন্ত্রী (ফরহাদ) প্রমোশন করেনি। বাংলাদেশ গর্ভমেন্ট তোমার প্রমোশন করি দিইছে।’

তিনি বলেন, ‘মন্ত্রীকে ভোট দেওয়ার ব্যাপারে যদি আর একটা কথা শুনি, মন্ত্রীকে ভোট দেওয়ার ব্যাপারে, তাহলে আমি এমপি হই আর না হই, তোমার মেহেরপুরের বাসা আমি উঠিয়ে দেব। আর তুমি যদি সাবধান হয়ে যাও, তাহলে আমার প্রিয় পাত্র হয়ে থাকবে। এইটুকু তোমাকে আমি বললাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘তুমি পারলে তোমার মন্ত্রীকে বলো। পারলে তোমার যেখানে শেখ হাসিনাকে বলো। আমি শেখ হাসিনার প্রার্থী। এটা তোমাকে মনে রাখতে হবে। আমি ভারতের প্রার্থী। এটা তোমাকে মনে রাখতে হবে। আমি এখানে হারার জন্য আসিনি। সাবধান হয়ে যাও তুমি।

আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমি তোমার কোনো কথা শুনবো না। আমি যে রিপোর্ট পেয়েছি। আমি খুব অসন্তুষ্ট তোমার উপরে। তুমি সাবধান হয়ে যাও।’

অভিযোগের বিষয়ে সেসময় জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মান্নান বলেছিলেন, ‘মূলত বলেছি আমি ভারতের প্রার্থী না। অথচ ‘না’শব্দটি কেটে ফেলা হয়েছে। এখন এই ইস্যুটিকে পুঁজি করে প্রতিপক্ষ প্রার্থী জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী আমাকে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে প্রকাশ্য নির্বাচনি সভায় বক্তব্যে দিয়ে বেড়াচ্ছেন।’

চিকিৎসক আলোক কুমার দাস সেই অডিওসহ নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির কাছে অভিযোগ করেছিলেন। কমিটি তথ্য-প্রমাণসহ বিষয়টি নির্বাচন কমিশনে পাঠায়। পরে নির্বাচন কমিশন মামলা দায়েরের জন্য উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।

সূত্র: যুগান্তর
আইএ/ ১০ জানুয়ারি ২০২৪

Back to top button