দক্ষিণ এশিয়া

বিয়েতে রাজি না হওয়ায় মেয়েকে খুন, ইতালিতে পাকিস্তানি দম্পতির যাবজ্জীবন

রোম, ২১ ডিসেম্বর – বিয়েতে রাজি না হওয়ায় মেয়েকে হত্যা করেছেন পাষণ্ড বাবা-মা। শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও এমন কাণ্ড করেছেন এক দম্পতি। এজন্য তাদের যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছেন আদালত। বুধবার (২০ ডিসেম্বর) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিবারের পছন্দের পাত্রকে বিয়ে করতে অস্বীকার করেছেন মেয়ে। আর তাতেই চটেছেন বাবা-মা। এমনকি ক্ষুব্ধ হয়ে হত্যা করেছেন মেয়েকে। এমন কাজ করেছেন এক পাকিস্তানি দম্পতি। এজন্য ইতালির আদালত তাদের যাবজ্জীন কারদণ্ড দিয়েছেন।

সামান আব্বাস নামের ওই মেয়েকে ২০২২ সালের নভেম্বরে ইতালির উত্তরাঞ্চলের একটি ফার্মহাউস থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। এর আগে ১৮ মাস ধরে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। এরপর তার বাবাকে পাকিস্তান থেকে আটক করা হয়েছিল এবং চলতি বছরের আগস্টে তাকে বিচারের জন্য হস্তান্তর করা হয়েছিল। তবে বিচার চলাকালে তার মা অনুপস্থিত রয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি পাকিস্তানে পলাতক রয়েছেন।

সামান আব্বাসের এই অনার কিলিংয়ে বিস্মিত ইতালি। তিনি নিখোঁজ হওয়ার পর দেশটির ইসলামী সংগঠনগুলো ফতোয়া জারি করে যে, জোরপূর্বক বিয়েকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর অনার কিলিং হলো একটি পরিভাষা, যার অর্থ হলো পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে কাউকে হত্যা করা। মঙ্গলবার ইতালির উত্তরের শহর রোজিও এমিলিয়ার একটি আদালত তার বাবা-মাকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা করেছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার আদালতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন সামানের বাবা শাব্বার। তিনি আদালতের কাছে আর্জি জানান যে, এ বিচারকার্য সম্পূর্ণ হয়নি। আমি আমার মেয়ের হত্যাকারী কে তা জানতে চাই।

বাবা ছাড়াও হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সামানের চাচা দানিশকেও ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আওতায় ২০২১ সালে ফ্রান্স থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রতিবেদন অনুসারে, সামান কিশোর বয়সে তার পরিবারের সঙ্গে ইতালির নোভেল্লারা আসেন। এরপর তিনি এক ব্যক্তির সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। দেশটির বলোগোনা শহরের রাস্তায় পাকিস্তানি বন্ধুকে চুমু খাওয়ার এক ছবি পরিবারের সদস্যরা দেখে ফেলেন। এরপর তারা ক্ষিপ্ত হয়ে যান।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, সামানের বাবা-মা ২০২০ সালে পাকিস্তানে পছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তবে সামান এতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর ওই বছরের অক্টোবর থেকে তিনি সামাজিক সংগঠনের নিরাপত্তায় থাকতে শুরু করেন। ২০২১ সালে তিনি পরিবারের কাছে ফিরে যান। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন।

আইনজীবীরা বলছেন, পরিবার তাকে ছলনা করে বাড়ি ফিরিয়ে আনিয়েছিল।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ২০২১ সালের ২৯ এপ্রিল সামানের পরিবারের তিন সদস্য শাবল, কোদাল ও একটি নীল ব্যাগ নিয়ে যাচ্ছেন। এরপরের দিন দেখা যায়, সামান তার বাবা-মার সঙ্গে বাইরে যাচ্ছেন।

ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, গলার হাড় ভেঙে যাওয়ায় সামানের মৃত্যু হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে।

সূত্র: কালবেলা
আইএ/ ২১ ডিসেম্বর ২০২৩

Back to top button