জাতীয়

রাষ্ট্রপতি কেন শ্রম আইন ফেরত পাঠালেন, তা জানালেন আইনমন্ত্রী

ঢাকা, ০৬ ডিসেম্বর – শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এক ধরনের চাপ রয়েছে বাংলাদেশের ওপর। সন্তুষ্ট না হলে ‌’বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা’ আসতে পারে বলেও গুঞ্জন আছে। তবে বাংলাদেশ শ্রম অধিকারের বিষয়ে আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন মেনে চলছে এবং শ্রম আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হয়েছে বলে জানিয়ে আসছিল।

এর মধ্যে জানা গেল জাতীয় সংসদ থেকে পাস হয়ে যাওয়া শ্রম আইনের সংশোধনী বিলটিতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সই করেননি। তিনি সেটি ফেরত পাঠিয়েছেন। ফলে শ্রম আইনের সংশোধন করা আর হলো না। এই সরকারের আমলে সেটি আর সম্ভবও নয়। কারণ, সংসদ কার্যকর না থাকায় ‌’ত্রুটি’ সারিয়ে সেটি সংশোধনের আর সুযোগ নেই। এমনকি ওই সংশোধনীটি এখন নিয়ম অনুযায়ী তামাদি হয়ে গেছে।

এ নিয়ে দেশে ইতিবাচক-নেতিবাচক দুই ধরনের আলোচনাই চলছে। রাষ্ট্রপতির বিল ‘ফেরত পাঠানো’কে অনেকে ‘অ্যাপ্রিশিয়েট’ (সাধুবাদ) করছেন। অনেকে আবার সংশোধনীটি না হওয়াকে ‘খারাপ খবর’ বলছেন।

এ প্রসঙ্গে আজ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি রাষ্ট্রপতি কেন বিলটি ফেরত পাঠিয়েছেন তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

আইনমন্ত্রীর দাবি, শ্রম আইনে (সংশোধন) ত্রুটির বিষয়টি সরকারই ধরতে পেরেছিল এবং সেটি রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করা হয়। এ কারণেই রাষ্ট্রপতি আইনটিতে সই করেননি।

‘সরকার যখন দেখতে পেল শ্রম আইনে শ্রমিকদের যে অধিকার দেওয়া হয়েছিল তাতে কিছু ত্রুটি হয়ে গেছে, সেটি শ্রমিকদের অধিকার খর্ব করবে। তখন সরকার সেই ত্রুটির বিষয়টি রাষ্ট্রপতির কার্যালয়কে জানায়। রাষ্ট্রপতি তার আইনি বিচারে সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখন এটা আবার সংসদে উপস্থাপন করা হবে’- বলেন আইনমন্ত্রী।

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জানেন, গত সংসদে অনেকগুলো বিল খুব তাড়াতাড়ি পাস হয়েছিল। সে কারণে এ ভুলটা হয়েছে। শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে আইনটি যখন রাষ্ট্রপতির কাছে সইয়ের জন্য পাঠানো হয় তখন ভুলটি পরিলক্ষিত হয়। সেজন্য রাষ্ট্রপতির কাছে ভুলের বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। তখন আইন অনুসারে রাষ্ট্রপতি বিলটিতে সই না করে আবার জাতীয় সংসদে পাঠিয়ে দিয়েছেন। যেহেতু আইনটি সংসদে পাস হয়ে গেছে এবং এই জায়গাটুকু সংশোধন করতে হবে। কাজেই আইনটি সংশোধনের জন্য আবার সংসদে যেতে হবে।’

আইনমন্ত্রী বলেন, ‌’এটা অন্য কোনো ত্রুটি নয়, এটা টাইপিংয়ের ত্রুটি। সেটি হচ্ছে, এক জায়গায় শ্রমিকদের সঙ্গে যদি মালিকরা বেআইনি আচরণ করেন, তাহলে তাদের জন্য একটি সাজার কথা আইনের মধ্যে আছে। সেটি একটু মিস-প্লেসড হয়ে গিয়েছিল। যেটা ২৯৪ ধারার সঙ্গে এক হওয়ার কথা ছিল, সেটি সে রকম না হয়ে, অন্যরকম হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‌’আইনটিতে মালিকদের কিছু আচরণের বিষয়ে ব্যাখ্যা করে দেওয়া আছে। বলা আছে, মালিক কোনো বেআইনি লকআউট শুরু করলে কিংবা চালিয়ে গেলে, অথবা তা এগিয়ে নেওয়ার জন্য কোনো কাজ করলে তিনি ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন, এই সাজাটা ছিল পাঁচ হাজার টাকা। সংশোধনীতে এটা ২০ হাজার টাকা করেছি। কিন্তু টাইপিং এরর-এর কারণে সেটা উল্লেখ নেই। এখানে ত্রুটিটা হয়ে গেছে। এই ত্রুটি যখন শ্রম মন্ত্রণালয় ধরতে পেরেছে, তখন এটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন রাষ্ট্রপতি এটিকে ফেরত দিয়েছেন।’

আনিসুল হক জানান, যেহেতু এখন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে এবং বর্তমান সংসদের আর অধিবেশন হবে না, সেহেতু নির্বাচনের পর যে নতুন সংসদ বসবে সেখানে আইনটি আবার উপস্থাপন করা হবে। পরে ভুল সংশোধন করে শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষিত করা হবে।

উল্লেখ্য, ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) বিল, ২০২৩’ গত ২ নভেম্বর জাতীয় সংসদে পাশ হয়। এরপর ৮ নভেম্বর বিলটিতে রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য পাঠানো হয়। ২০ নভেম্বর সেটি ফেরত পাঠান রাষ্ট্রপতি।

সূত্র: ঢাকা পোস্ট
আইএ/ ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩

Back to top button