পশ্চিমবঙ্গ

শুভেন্দুর ‘চোর’ বনাম মমতার ‘পকেটমার’

কলকাতা, ০৫ ডিসেম্বর – তিন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির বিপুল জয়ের পর উজ্জীবিত হয়ে পথে নামল বিজেপি। তবে তার মূল সুর বাঁধা থাকল তৃণমূল কংগ্রেস তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘চোর’ আক্রমণ করার মধ্য দিয়েই। পাল্টা মুখ্যমন্ত্রীও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নাম না করে ‘পকেটমার’ বলে কটাক্ষ করেছেন। ‘পকেটমার’ উপমা শোনা গিয়েছে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখেও।

বিধানসভা থেকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুকে নিলম্বিত (সাসপেন্ড) করার প্রতিবাদে ও শাসকের ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি’র বিরুদ্ধে সোমবার রেড রোডে আম্বেডকর মূর্তির সামনে ধর্না কর্মসূচি ছিল বিজেপির। তার আগে ঘোষণা মতোই তিন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির জয় উদযাপন করতে বিধানসভার ভিতরে-বাইরে শুভেন্দুর নেতৃত্বে বিরোধী বিধায়কেরা লাড্ডু বিলি করেন। তার পরে বিধায়কদের সঙ্গে নিয়ে ‘চোর মমতা’ টি-শার্ট পরে ধর্না মঞ্চে আসেন শুভেন্দু। সেখান থেকেই দুর্নীতি নিয়ে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করে বিরোধী দলনেতা বলেন, শুধু পার্থ চট্টোপাধ্যায় বা অনুব্রত মণ্ডলের জেল-যাত্রাই শেষ নয়, সবংশ জেলে যেতে হবে মমতাকেও।

আক্রমণের জবাবে এ দিন বিধানসভাতেই মুখ খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমি নাকি ওদের কাছে চোর! আমি মানুষের ভোর। মানুষের কাছে তাদের সকাল হয়ে থাকতে চাই।’’ তিনি ফের বলেছেন, ‘‘জীবনে এক পয়সার চা খাইনি। তোমরা কুৎসা করো। পকেটমারই আগে পকেটমার, পকেটমার বলে চিৎকার করে।’’ নাম না করেই বিরোধী দলনেতাকে বিঁধে মুখ্যমন্ত্রীর আরও বক্তব্য, ‘‘বলছে, নাকি সাঁড়াশি অভিযান করবে। ঢ্যাঁড়শ অভিযান করবে! আমি দুর্বল নই। যথেষ্ট স্ট্রং। ব্যক্তিগত আক্রমণ করি না। তোমরা তো চোরের দামোদর! ডাকাতের মরুভূমি! টাকা নিয়ে বিদেশে পাচার করছে আর পুলিশ অফিসারদের ধমকাচ্ছে।’’

মুখ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু আবার বলেছেন, ‘‘ওঁকে চোর বলা হবে না তো কী বলা হবে? ওঁর শিক্ষামন্ত্রী এবং গোটা শিক্ষা দফতর জেলে। প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জেলে। মিড-ডে মিল কেলেঙ্কারিতে সিবিআই তদন্তের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ সব কেলেঙ্কারি মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদনে হয়েছে। ভাইপো নিজে খেয়েছে। তার স্ত্রী, শ্যালিকা, বাবা-মা সবাইকে জড়িয়েছে। এই চোরেদের তাড়ানোর জন্যই আন্দোলন হচ্ছে।’’ অন্য দিকে, বিরোধী দলনেতা এ দিনের ধর্নায় ‘চোর মমতা’ লেখা টি-শার্ট পরায় হেয়ার স্ট্রিট থানায় অভিযোগ করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।

শুভেন্দু প্রসঙ্গে এ দিন সরব হয়েছেন অভিষেকও। উত্তরবঙ্গ যাওয়ার পথে বিমানবন্দরে তাঁর মন্তব্য, ‘‘বিধানসভায় যে চোর, চোর করে চেল্লাচ্ছে, তাকে কাগজে মুড়ে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে ক্যামেরায়। তা হলে চোরটা কে? যে চুরি করে, সে কিছুটা দৌড়ে পালিয়ে গিয়ে চোর, চোর করে চেল্লায়। বিজেপির নেতারা হচ্ছে এই পকেটমার! নারদ-কাণ্ডে মুখ্য চরিত্র যিনি ছিলেন, সেই শুভেন্দুকে কেন গ্রেফতার করা হবে না?’’ যার প্রেক্ষিতে শুভেন্দু ফের দাবি করেছেন, তাঁর কাছে টাকা দিতে এসেছিলেন সেই সময়ের তৃণমূলেরই এক নেতা। দলের তহবিলের জন্য সেই প্যাকেট তিনি নিয়ে পাশে রেখে দিয়েছিলেন। আর গোটা স্টিং অপারেশন করানো হয়েছিল তৎকালীন তৃণমূল সাংসদ কে ডি সিংহের টাকায়, নেপথ্যে ছিলেন ‘ভাইপো’ই।

রেড রোডে আম্বেডকরের মূর্তির সামনে বিজেপির ধর্না-অবস্থানে এ দিন চোখে পড়ার মতো ভিড় হয়েছিল। রেড রোড দিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী এবং শাসক দলের বিধায়কেরা বিধানসভার পথে যাতায়াত করছিলেন। তাঁদের দেখে বিরোধী দলনেতা ‘চোর, চোর’ চিৎকার করতে থাকেন। উত্তেজিত হয়ে পড়েন বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরাও। তাঁরা ‘চোর’ ধ্বনি দিতে দিতে মন্ত্রীদের কনভয়ের দিকে এগিয়ে যান। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ বাহিনী মানব বন্ধন করে দু’পক্ষের মুখোমুখি হওয়া থেকে বিরত করে। ধর্না-মঞ্চে শুভেন্দুর বক্তব্য, ‘‘আমি বলেছিলাম, অধিবেশন শুরু হলে মুখ্যমন্ত্রীকে ‘চোর’ ধ্বনি শোনাব। সেই জন্য পরিকল্পিত চিত্রনাট্য অনুসারে আমাকে সাসপেন্ড করেছে।’’ আর গোটা বিষয়ে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘তৃণমূল লুট-দুর্নীতি করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলে থেকে তাঁর সঙ্গী হিসেবে শুভেন্দু অধিকারী, সবাই অপরাধী। লাল ঝান্ডাকে ওঁরা ভয় পান! এখন একে অপরকে চোর বলছে। আমরা বলছি, দু’পক্ষই চোর। আর মুখ্যমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ থাকল, ‘সততার প্রতীক’ প্রচারটা আবার সারা বাংলায় ছড়িয়য়ে দিন!’’

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন
আইএ/ ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩

Back to top button