জাতীয়

যে কারণে নৌকার মাঝি হলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শাহজাহান

ঢাকা, ৩০ নভেম্বর – কারামুক্ত হয়েই ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীরউত্তম।

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কাওরানবাজারের ইউটিসি ভবনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছেন। আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন।

এছাড়া মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন বৃহস্পতিবার অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে শাহজাহান ওমর বলেন, পাকিস্তান মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে জিয়াউর রহমান আমার শিক্ষক ছিলেন। তিনি আমাকে স্নেহ করতেন, উনার ডাকে আমি সাড়া দিয়েছি। বেগম জিয়াও আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করেন। খুব ভালো জানেন। তিনি এখন অসুস্থ। জিয়াউর রহমানের রাজনীতি করেছি সে ভালো মানুষ ছিল, একজন মুক্তিযোদ্ধা, বীরউত্তম, সে আমার শিক্ষক ছিল তার সঙ্গে রাজনীতি করা সাজে। বেগম জিয়ার সঙ্গেও সাজে। এরপর কতটুকু সাজে তা তো আপনারা ভালোই জানেন।

তিনি বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার অহংকার আছে, কিন্তু বিএনপির এখনকার রাজনীতির সঙ্গে আমার টালি করে না। এরআগেও আমি কয়েকবার দলের মহাসচিবকে বলেছি ‘আমি রিজাইন করব’। কিন্তু মহাসচিব আমাকে বলেছেন, ‘ভাই এটা করবেন না’।

নির্বাচন আবার আসছে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, দেখেন আমার বয়স ৭৭। বিএনপি এবার নির্বাচনে যাচ্ছে না। যেসব শর্তাবলী তারা দিয়েছে তা তো কারও পক্ষেই শতভাগ মানা সম্ভব না।

২৮ অক্টোবরের সহিংসতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সেদিন থার্ড পার্টি বা যুবকরা যারাই ওই কাজগুলো করে থাকুক না কেন, বিএনপির রাজনীতি কি যুবকরা নিয়ন্ত্রণ করবে নাকি অভিজ্ঞরা। এখানে রাজনৈতিক সচেতনরা রাজনীতি করবে। এখানেই আমার মতবিরোধ। আমি দেখি রাজনীতি যারা সচেতন, অভিজ্ঞ, রাজনৈতিক চর্চা করে, রাজনৈতিক ভাষা জানে তারা রাজনীতিতে নাই। রাজনীতিতে আছে কচিকাচার দল। এখানেই আমি অ্যাডজাস্ট করতে পারি না।

জিয়ার রাজনীতি ছেড়ে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিতে আসাকে প্রমোশন হিসেবে অভিহিত করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, জিয়ার রাজনীতি চেয়ে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি ভালো।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আজ দেখা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেখা হতেই পারে।’

এর আগে বিএনপির নেতা শাহজাহান ওমরকে গত ৪ নভেম্বর রাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন তাকে ঢাকার নিউমার্কেট থানার বাসে আগুন দেওয়ার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে পুলিশ। ওই মামলায় তাকে তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়।

গতকাল বুধবার ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে জামিন পান শাহজাহান ওমর। সন্ধ্যার পরই কেরানীগঞ্জে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।

এদিকে শাহজাহান ওমর আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা দেওয়ার পর তাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে গুরুতর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। তাই বিএনপির গঠনতন্ত্র মোতাবেক মুহাম্মদ শাহজাহান ওমরকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ঝালকাঠি–১ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত যে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তাতেও এই আসনে বজলুল হকের নাম রয়েছে।

শাহজাহান ওমর ছাড়াও বিএনপির সদ্য বহিষ্কৃত নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার আবুল কাশেম ফখরুল স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঝালকাঠি-১ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। ব্যারিস্টার আবুল কাশেম ফখরুল মানবতাবিরোধী অপরাধের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী ছিলেন। সেই মামলায় নথি ফাঁসের ঘটনায় ৩৮ মাস জেল খেটেছেন। তিনি সম্প্রতি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন। এরপর তাকে বহিষ্কার করে বিএনপি।

সূত্র: আমাদের সময়
আইএ/ ৩০ নভেম্বর ২০২৩

Back to top button