ভ্যানিটি ব্যাগে ব্যানার নিয়ে ঘুরে বেড়ানো সেই শেফালী নৌকার মাঝি হতে চান
ঢাকা, ২০ নভেম্বর – দেড় যুগেরও বেশি সময় আগে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় আওয়ামী লীগের জনসভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় আহত হয়েছিলেন জাকিয়া সুলতানা শেফালী। তিনি বর্তমানে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন চান চাঁদপুর-২ (মতলব) সংসদীয় আসন থেকে।
এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার (২০ নভেম্বর) বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন শেফালী।
এসময় তার সঙ্গে থাকা অন্য নেতাকর্মীরা জানান, জনপ্রতিনিধি না হয়েও গত এক যুগেরও বেশি সময় বিভিন্ন সমস্যায় এলাকার মানুষের পাশে থেকেছেন শেফালী। এখন তিনি দায়িত্ব নিয়ে জনগণের পাশে থাকতে ও সেবা করতে চান।
মনোনয়ন সংগ্রহের বিষয়ে জাকিয়া সুলতানা শেফালী জাগো নিউজকে বলেন, নব্বই পরবর্তী সময় থেকেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সব আন্দোলন-সংগ্রামে আমার সরাসরি ও সরব অংশগ্রহণ ছিল। ২০০১ সালের পাতানো নির্বাচনের পর বিরূপ পরিস্থিতিতেও এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রেখে সংগঠনকে রাজপথে রেখেছি। ১/১১ এর পর যুব রাজনীতির সব কার্যক্রম সংগঠনের পক্ষে পরিচালনা করেছি। নেত্রীর মুক্তি আন্দোলনে পরিচিত মুখগুলোর মধ্যে আমিও ছিলাম।
তিনি বলেন, ২১ আগস্টের নৃশংসতম গ্রেনেড হামলায় আহত হয়ে আজও ভুগছি। বিভিন্ন সময় হামলা-মামলা ও অনেকবার কারাবরণ করতে হয়েছে। কখনো দলের নির্দেশনা ও দলীয় আদর্শের বাইরে কোনো কাজে জড়াইনি। নেত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে এবং নারীর ক্ষমতায়নের অংশ হিসেবে আমার বিশ্বাস নেত্রী আমাকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দেবেন। আমার বিশ্বাস মনোনয়ন পেলে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে চাঁদপুর-২ আসনটি নেত্রীকে উপহার দিতে পারবো, ইনশাল্লাহ্।
ওয়ান ইলেভেনে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হস্তক্ষেপে গ্রেফতার হন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সভাপতির গ্রেফতারের প্রতিবাদে মুহূর্তেই সেদিন রাজপথে নেমে আসে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মী-সমর্থকেরা। গ্রেফতারের প্রতিবাদে সেদিন রাজপথে নামা আওয়ামী লীগের বড় নেতার সংখ্যা তেমন ছিল না। সবাই গ্রেফতার আতঙ্কে গা ঢাকা দিয়েছিলেন। কর্মী-সমর্থকেরাই ছিলেন রাজপথে।
সেদিন রাজপথে থাকা হাতেগোনা কয়েকজন কর্মীর মধ্যে জাকিয়া সুলতানা শেফালী ছিলেন অন্যতম। পরে গণআন্দোলনে রূপ নেয় শেখ হাসিনার মুক্তির আন্দোলন। যুবলীগের মহিলা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শেফালী সেদিন আন্দোলনকে গণআন্দোলনে রূপ দিতে অবদান রেখেছেন। প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান মিয়াজীর কন্যা শেফালী ভ্যানিটি ব্যাগে ব্যানার নিয়ে ঢাকার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে বেড়াতেন। যেখানেই লোক জড়ো হতো ব্যাগ থেকে ব্যানার বের করে ছোট পরিসরে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে ব্যাগেই ভরে ব্যানার নিয়ে চলে যেতেন ঢাকার অন্যকোনো প্রান্তে।
এই নারী নেত্রীর সাহসিকতার উদাহরণ এখানেই শেষ নয়। আওয়ামী লীগের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে প্রয়াত নেতা জিল্লুর রহমানের হাতে লেখা প্রেস রিলিজ পত্রিকা অফিসে গোপনে পৌঁছে দিতেন শেফালী।
সংসদ ভবনে সাব-জেল নির্মাণ করে যেখানে শেখ হাসিনাকে প্রায় এক বছর বন্দি রাখা হয়েছিল, সেখানে পুরো সময় উপস্থিত থাকতে দেখা যেত শেফালীকে। যুবলীগের তৎকালীন চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম পলাতক থাকায় শেখ হাসিনার মুক্তির আন্দোলনে সরাসরি তারা যুক্ত থাকতে পারতেন না। তখন শেফালীই ছিলেন যুবলীগের কঠিন সময়ে ভরসার নাম। তার মাধ্যমে বার্তা আদান-প্রদান করে কর্মসূচি চালিয়ে যেতো যুবলীগ।
সূত্র: জাগো নিউজ
আইএ/ ২০ নভেম্বর ২০২৩