ইসলাম

ঈদে মিল্লাদুন্নবী (সা.) পালনের ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী?

পবিত্র ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিম বিশ্বের ঈমানি প্রেরনার জয় ধ্বনী নিয়ে প্রতি বছর আমাদের মাঝে আসে রবিউল আওয়াল মাসে।

আরবি ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’র শাব্দিক অর্থ- মহানবীর (স.) জন্মদিনের আনন্দোৎসব। মুসলমানরা ১২ রবিউল আউয়াল মহানবী হয়রত মুহম্মদ (স.) এর জন্ম ও মৃত্যু (ওফাত) দিবস হিসেবে পালন করে। কারণ এ দিনেই রাসুলে করীম (স.) ইন্তেকালও করেন।

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী দিবসটি পালনে যা করণীয়:

মিলাদপূর্ব সামাজিক অবস্থা : সম্মানিত মুসল্লিয়ানে কিরাম! রসুলুল্লাহ (সা.)-এর শুভাগমনের পূর্ব সময়ে আল্লাহর এই প্রিয় জগৎ কলুষতায় ও নোংরামিতে ভরে উঠেছিল। সময়টি ইতিহাসের পাতায় আইয়ামে জাহেলিয়াহ তথা অন্ধকার যুগরূপে চিহ্নিত রয়েছে। আকিদা ও বিশ্বাসে, কর্মে ও আচরণে মানুষ নষ্টামি ও গোমরাহির চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। নির্যাতিত-নিপীড়িত অসহায় মানুষ একজন ত্রাণকর্তা ও মুক্তিদূতের আগমনের অপেক্ষায় ছিল। তারা যেন বলছিল, ‘ওহে প্রভু! জালিমপ্রধান এই জনপদ থেকে আপনি আমাদের মুক্তি দিন আর আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একজন তত্ত্বাবধানকারী ও সাহায্যকারী পাঠিয়ে দিন।

’মহান আল্লাহ অতঃপর বিশ্বমানবতার মুক্তিদূত হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার সুবহে সাদিকের সময় এই ধরাধামে পাঠিয়ে দিলেন।

তিনি এলেন ঘোর তমসা তথা গভীর অন্ধকারে আলো হয়ে। আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষীরূপে, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী রূপে এবং মহান আল্লাহর নির্দেশে তাঁর প্রতি আহ্বানকারীরূপে এবং আলো বিতরণকারী প্রদীপরূপে। ’ (সূরা আহজাব ৪৫:৪৬)।

যেই সময়ে তিনি এলেন সেই সময়ে মা আমিনার ঘর থেকে নূরের জুুলকি বের হয়ে সুদূর সিরিয়া পর্যন্ত আলোকিত করে দিয়েছিল। তখন পারস্য সম্রাট নাশিরাওয়ানের রাজপ্রাসাদ প্রকম্পিত হয়ে ১৪টি পাথর খসে পড়েছিল। অগ্নিপূজকদের আগুন নিভে গিয়েছিল এবং পানিপূজারিদের পানির প্রবাহ থেমে গিয়েছিল।

শুকরিয়া জ্ঞাপন ও আল্লাহর বন্দেগি করা আমাদের কর্তব্য : এ জগতে মহান আল্লাহর নিয়ামতের অন্ত নেই। সব নিয়ামতের সেরা নিয়ামত হলেন প্রিয় নবী (সা.)। সেজন্য নিয়ামতদাতা মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করা আমাদের অলঙ্ঘনীয় কর্তব্য। আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা আমার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর। আমার প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়ো না। ’ (সূরা বাকারা : ১৫২)। মহান আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি ও আনুগত্যে আমাদের জীবন পরিচালনা করা অপরিহার্য দায়িত্ব।

রসুলুল্লাহ (সা.) সম্পর্কে অধিকতর জ্ঞান অর্জন করা : আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একমাত্র মাধ্যম প্রিয় নবী (সা.)। সুতরাং তাঁকে জানা ও চেনা, তাঁর মর্যাদা ও সম্মান বিষয়ে অবগত হওয়া এবং তাঁর সুমহান চরিত্র সম্পর্কে ধারণা লাভ করা আমাদের অবশ্য কর্তব্য।

জন্ম উপলক্ষে আনন্দ প্রকাশ করা : প্রিয় নবী (সা.)-এর শুভাগমনে অকৃপণ ও বিশাল উদারতায় আনন্দ প্রকাশ করা আমাদের জন্য পরম কল্যাণকর। হাদিসে এসেছে। প্রিয়নবী (সা.)-এর জন্মের সংবাদ শুনে তাঁর চাচা আবু লাহাব তার দাসী সুরাইবাকে মুক্ত করে দিয়েছিলেন। তার ফলে এখনো প্রতি সোমবার তার কবরের শাস্তি কিছুটা হালকা ও আসানি হয়। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘বলুন আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ পেয়ে তারা যেন অবশ্যই আনন্দ প্রকাশ করে। তারা যা সঞ্চয় করে তা থেকে এটি বহুগুণে বেশি কল্যাণকর।’ ( সূরা ইউনুস : ৫৮)

রসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি মহব্বত পোষণ করা : বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি মহব্বত ও ভালোবাসা পোষণ করা ইমানের পূর্বশর্ত। এটি আল্লাহর মহব্বত ও ভালোবাসাপ্রাপ্তির একমাত্র মাধ্যম। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ ইমানদার হবে না যতক্ষণ তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সব মানুষের চেয়ে আপন আর বেশি প্রিয় না হই।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ তোমাদের নিয়ামত দান করেন সেজন্য তোমরা তাঁকে ভালোবাসবে আর তাঁর মহব্বত পাওয়ার জন্য তোমরা আমাকে ভালোবাসবে।’

রসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনুসরণে জীবন পরিচালনা করা : প্রিয় নবী (সা.) এর ইত্তিবা ও সর্বাঙ্গীণ অনুসরণ আমাদের কর্তব্য। আল্লাহ কোরআন মাজিদে উল্লেখ করেছেন, ‘বলুন তোমরা যদি আল্লাহকে মহব্বত করে থাকো তাহলে তোমরা আমার ইত্তিবা ও অনুসরণ কর তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করবেন। আল্লাহ মহাক্ষমাশীল ও অপার দয়ালু।’ (সূরা আলে ইমরান : ৩১)।

অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রসুলের আনুগত্য কর তাহলে তোমরা দয়াপ্রাপ্ত হবে। ’ (সূরা আলে ইমরান : ১৩২)।

প্রিয় নবী (সা.)-এর অনুপম আদর্শ অনুসরণ করা প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই রসুলের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখিরাতকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য। ’ (সূরা আহজাব : ২১)।

আইএ

Back to top button