ঢাকা, ২৭ সেপ্টেম্বর – দেশে ডলার সংকট চলাকালে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে সেটা নির্ভর করছে ঋণের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া শর্ত পরিপালনের ওপর। এখন দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের আগে এক মাস সময় হাতে রেখে শর্তগুলোর প্রতিপালনের অগ্রগতি দেখতে আগামী মাসে ঢাকায় আসছে আইএমএফের প্রতিনিধি দল। সংস্থাটির বিশেষ দল আগামী ৪ থেকে ১৯ অক্টোবর বাংলাদেশ সফর করবে। এ সময় তারা অংশীজনদের সঙ্গে কয়েক দফায় বৈঠক করবে। সেখানে আর্থিক খাতের স্থায়িত্ব, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন, ব্যাংক খাতের সংস্কার, তারল্য ব্যবস্থাপনা, ডলারের বাজারভিত্তিক হারে লেনদেন, ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ গণনা পদ্ধতি, সুদের হার ও মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে বলে অর্থ বিভাগের সূত্র জানিয়েছে।
জানা গেছে, বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় গত ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহিবলের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রকল্পের ৩৮ শর্ত বাস্তবায়ন করতে না পারলে ঋণের কিস্তি আটকে দিতে পারবে আইএমএফ। আরোপিত শর্তগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই পরিপালন করেছে সরকার।
এই অবস্থায় ডলারের বাজারে চলছে অরাজকতা, ব্যাংক খাতের ঋণখেলাপিদের ধরার ঘোষণা দিলেও ধরা সহজ হচ্ছে না। এর মধ্যে গ্যাস-বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ভর্তুকি কমাতে দাম বাড়ানো হয়েছে একাধিকবার। এতে করে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১১ বছরের সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়েছে। নাভিশ্বাস উঠেছে নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের। তবে কৃষি খাতের ভর্তুকি কমানোর বিষয়ে সরকার অবশ্য তা মেনে নেয়নি। রাজস্ব আদায়ও বাড়ানোর কৌশল নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গণনার পদ্ধতি নিয়ে বিপত্তি বাধতে পারে সংস্থাটির সঙ্গে। এটা পরিপালনের ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, অব্যাহত এই ডলার সংকটে আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য ঋণের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া শর্ত খতিয়ে দেখতে আগামী মাসে ঢাকায় আসছে আইএমএফের প্রতিনিধি দল। সংস্থাটির এ সফরসূচি সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংককে ইতোমধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সঙ্গে আলোচনার সূচি নির্ধারণ করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও স্টক মার্কেটের কাছ থেকে শর্ত ও পরামর্শ বাস্তবায়নের হালনাগাদ তথ্য পাঠাতে বলেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এসব তথ্য পাওয়ার পর অর্থ বিভাগ আইএমএফের শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতিসংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রস্তুত করবে।
এই প্রতিনিধি দল ওয়াশিংটনে ফিরে গিয়ে একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করবে সংস্থাটির সদর দপ্তরে। তাদের ওই প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করছে দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়। কোনো কারণে শর্ত পূরণ বিলম্ব হলে দ্বিতীয় কিস্তিও বিলম্ব হতে পারে। শর্ত পূরণ হলে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় করা হতে পারে আগামী নভেম্বরে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আইএমএফের ঋণের প্রথম কিস্তি ৪৭৬ মিলিয়ন বা ৪৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার পেয়েছিল বাংলাদেশ। শর্ত পূরণসাপেক্ষে এই ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ৭০ কোটি ৪০ লাখ ডলার ছাড় করবে আইএমএফ।
জানা গেছে, রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে আইএমএফের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পিছিয়ে আছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। রাজস্ব আহরণ কীভাবে বাড়ানো যায়, এনবিআরের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে আইএমএফের কাছে এ সংক্রান্ত একটি কর্মপরিকল্পনা জমা দেওয়া হয়েছে। গত অর্থবছরে আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী শুল্ক-কর আদায় করতে পারেনি এনবিআর। শুল্ক-কর ছাড় বন্ধে বাজেটে বড় কোনো উদ্যোগও নেওয়া হয়নি। চলতি বছরে বাড়তি যে রাজস্ব আদায় করতে হবে, সে ব্যাপারে এখনো কোনো পরিকল্পনা করা হয়নি। তবে একটি শর্ত পূরণ করতে গিয়ে তাড়াহুড়া করে নতুন আয়কর আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
আইএমএফের শর্ত পূরণে পিছিয়ে থাকার বিষয়ে অর্থ বিভাগের বক্তব্য হচ্ছে, এক্ষেত্রে আইএমএফ যে লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে সেটি নির্দেশক লক্ষ্যমাত্রা। বর্তমানে বাংলাদেশের যে পরিমাণ রিজার্ভ আছে তা দিয়ে পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন নীতি এখনো চলমান। ফলে চলতি মূলধন ঘাটতি অনেক কমে এসেছে। আমদানির পরিমাণও কমেছে। ফলে সামনের দিনগুলোয় পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না পারলেও আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় পেছাবে না। রিজার্ভের বর্তমান বাস্তবতার বিষয়টি আইএমএফও অনুধাবন করতে পারছে।
সূত্র: আমাদের সময়
আইএ/ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩