বিচিত্রতা

পাসপোর্ট, ভিসা, টিকেট ছাড়াই যেভাবে বিমানে চড়ে বসল শিশু জুনায়েদ

পরিবারের জিম্মা থেকে ফের পালিয়েছে ১০ বছরের শিশু মো. জুনাইদ মোল্লা। গত সোমবার মধ্যরাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাসপোর্ট-বোর্ডিং পাস না নিয়ে দ্বিধাহীনভাবে কুয়েত এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে উঠে গিয়ে শিশুটি তোলপাড় সৃষ্টি করে। শিশুটির স্বজনদের বরাতে তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিমানে উঠতে আগেও চারবার ঘর ছেড়ে বেরিয়েছে শিশুটি।

সর্বশেষ পঞ্চমবারের চেষ্টায় গত সোমবার বিমানে উঠে পড়তে সক্ষম হয়। এদিকে, এ ঘটনায় বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশ, এভিয়েশন সিকিউরিটি (এভসেক), কুয়েত এয়ারওয়েজ ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং (বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স) প্রতিষ্ঠানের ১০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।বাধা ছাড়া বিমানে শিশু উঠে যাওয়ার ঘটনায় রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন শাহজালাল বিমানবন্দরের ডিউটি সিকিউরিটি অফিসার (ডিএসও) খুরশিদা খাতুন। ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।বিমান থেকে নামিয়ে নেওয়ার পর বয়স বিবেচনায় শিশু জুনাইদকে গত মঙ্গলবার গভীর রাতে তার চাচা মো. ইউসুফ মোল্লার কাছে হস্তান্তর করে বিমানবন্দর থানাপুলিশ। ভবিষ্যতে শিশুটির বিষয়ে আরও যত্নশীল হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

শিশুটির চলাফেরার ওপর তার পরিবার আরও নজর রাখবে বলেও কথা দেয় পুলিশকে। তবে বিমানবন্দর থানার ওসি আজিজুল হক মিয়া জানিয়েছেন, গতকাল বুধবার ফের পালিয়েছে শিশুটি।যদিও এই প্রথম ঘর ছাড়েনি শিশুটি। বিমানে চড়ার অভিপ্রায়ে এর আগেও চারবার বাড়ি ছেড়ে পালায় জুনাইদ। সর্বশেষ পঞ্চমবার ঘর ছাড়ার পর গত সোমবার মধ্যরাতে পাসপোর্ট-বোর্ডিং পাস ছাড়াই শিশুটি কুয়েতগামী ফ্লাইটে উঠতে সক্ষম হয়। বিমানবন্দরে ঢুকে ইমিগ্রেশনসহ প্রায় ৮-১০টি ধাপ পেরিয়ে তবেই চড়তে হয় বিমানে। এর কোনো ধাপে শিশুটিকে না আটকানোর বিষয়টি উদ্দেশ্যমূলক না গাফিলতির বহিঃপ্রকাশ, তা নিয়েও যে প্রশ্ন উঠেছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় বেবিচকের উপ-পরিচালক (পার্সোনেল ও জনসংযোগ কর্মকর্তা) মোহাম্মদ সোহেল কামরুজ্জামান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, অসত্য তথ্য প্রদান করে এবং বয়স কম হওয়ার কারণে চলাচলকারী গ্রুপ প্যাসেঞ্জারদের সঙ্গে মিশে গিয়ে কর্তব্যরতদের নজর এড়িয়ে শিশুটি বিমানে প্রবেশ করে। তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, শিশু জুনাইদের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর থানার বরইহাটির বাঁশবাড়িয়ায়। স্থানীয় একটি মাদ্রাসার ওই শিক্ষার্থী বর্তমানে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিল। ঘটনার ৫ দিন আগে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছিল জুনাইদ। এর আগেও একাধিকবার বাড়ি ছেড়ে পালালেও পরে নিজে নিজে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার কারণে তার বাবা-মা পুলিশকে নিখোঁজের বিষয়টি জানায়নি।

আটকের পর পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে শিশুটি জানায়, গত ৩ মাসে চারবার বাড়ি থেকে পালিয়ে শাহজালাল বিমানবন্দরে আসে। কিন্তু বিমানে চড়তে ব্যর্থ হয়ে আবার বাড়ি ফিরে যায়। গত সোমবার কৌশল পাল্টে বিমানবন্দরে ঢুকে একটি পরিবারের সঙ্গে কথাবার্তার মাধ্যমে মিশে যায় শিশুটি। কৌতূহলবশত বিমান দেখতে শাহজালাল বিমানবন্দরে এসেছিল জুনাইদ। এরপর লোকজনের সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে প্লেনে উঠে গেছে। কেউ তাকে বাধা দেয়নি। এ ধরনের কাজ আর করবে না বলেও পুলিশের কাছে অঙ্গীকার করে জুনাইদ।বিমানবন্দর থানার ওসি আজিজুল হক মিয়া আমাদের সময়কে বলেন, জুনাইদ মোল্লার বাবা ইমরান মোল্লা পেশায় কৃষক। তার বাবা ও মা জেসমিন আক্তারের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়েছে। তারা কেউ এখন শিশুটির খোঁজখবর রাখেন না। তাই চাচার জিম্মায় জুনাইদকে দেওয়া হয়েছে। বুধবার শিশুটি ফের বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে বলে জানা গেছে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান জানান, এ ঘটনায় যাদের গাফিলতি ছিল, প্রত্যেককে সাসপেন্ড করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল গত মঙ্গলবার। তাদের মধ্যে ১০ জনকে চিহ্নিত করে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তারা ইমিগ্রেশন পুলিশ, এভসেক, কুয়েত এয়ারওয়েজ ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলার। এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি তাদের প্রতিবেদনে পুরো ঘটনাটি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরবে।

আইএ

Back to top button