জাতীয়

এমরানকে মার্কিন দূতাবাসে জায়গা দেওয়া ঠিক হয়নি

ঢাকা, ১১ সেপ্টেম্বর – বরখাস্ত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) এমরান আহম্মদ ভূঁইয়াকে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসে জায়গা দেওয়াটাই ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন ফকির।

তিনি বলেন, অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া সাধারণ মানুষ তো সেখানে যেতে পারেন না। তাহলে কেন তাকে পরিবারসহ ডেকে নেওয়া হয়েছে। মার্কিন দূতাবাসে নিজ উদ্যোগে তিনি গিয়েছেন। কোনো ভয়-ভীতিতে এ কাজ করেননি সেটা তিনি নিজেই বলেছেন।

সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) ড. ইউনূসের বিচার স্থগিত করে প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠির বিপক্ষে সুপ্রিম কোর্টের ৫১০ আইনজীবীর বিবৃতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি এসব কথা বলেন।

মমতাজ উদ্দিন আরও বলেন, এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস থেকে এ ধরনের বিবৃতি দিতে পারেন না। এটা আইনের লঙ্ঘন। বিতর্ক সৃষ্টি করার জন্যেই তিনি এ কাজ করেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য না। তিনি পরিষদের কেউ না, তাই তাকে বরখাস্ত করারও প্রশ্ন আসে না।

গত ৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে আদালত প্রাঙ্গণে গণমাধ্যমে দেওয়া এক বক্তব্যে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া বলেন, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন সম্মানিত ব্যক্তি, তিনি বিচারিক হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে আমি মনে করি।

তিনি আরও বলেন, ড. ইউনূসের পক্ষে ১৬০ জন বিদেশি ব্যক্তি বিবৃতি দিয়েছেন। তাদের মধ্যে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, হিলারি ক্লিনটনও রয়েছেন। ওই বিবৃতির বিরুদ্ধে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকে প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেওয়ার কথা রয়েছে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ড. ইউনূসের বিপক্ষে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করব না। এ ছাড়া ড. ইউনূসের পক্ষে বিদেশিরা যে বিবৃতি দিয়েছেন, আমি তাদের সঙ্গে একমত।

আইন মন্ত্রণালয় থেকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়াকে বরখাস্তের প্রক্রিয়া ‍শুরু করতে সলিসিটর উইংকে নির্দেশ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী বরখাস্তের প্রক্রিয়াও শুরু করা হয়েছিল।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়ার নিয়োগ বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর অনুবিভাগ।

রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সলিসিটর রুনা নাহিদ আক্তার এ প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন।

বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সই করা ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ ল অফিসার্স অর্ডার, ১৯৭২ (পিও নং- ৬) এর ৪ (১) অনুচ্ছেদ অনুসারে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়ার নিয়োগাদেশ জনস্বার্থে বাতিলক্রমে তাকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো।

এর পরেই শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসে সপরিবারে যান এমরান। এ সময় দূতাবাস বন্ধ থাকায় বাইরের একটি অভ্যর্থনা কক্ষে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত অবস্থান নেন তিনি। পরে দূতাবাসের একটি গাড়িতে চড়ে তারা বাড়ি ফেরত যায় বলে জানা যায়।

এমরান এবং তার পরিবারকে গ্রেপ্তারের শঙ্কা নেই বলে সরকারের পক্ষ থেকে মার্কিন দূতাবাসকে আশ্বস্ত করা হয়। পরে দূতাবাসের কর্মকর্তারা তা জানালে এমরান বাসায় ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

এদিন বিকেলে এমরান আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, আমি মার্কিন দূতাবাসে আজকে পুরো পরিবারসহ আশ্রয়ের জন্য বসে আছি। আজকে আমাকে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। আমার ফেসবুক মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে গত ৪-৫ দিন যাবত অনবরত হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। এই সরকার ভালোবাসার প্রতিদান দেয় জেল দিয়ে। আমার আমেরিকার কোনো ভিসা নেই। স্রেফ তিনটি ব্যাগে এক কাপড়ে আমার তিন মেয়েসহ কোনোক্রমে বাসা থেকে বের হয়ে এখানে বসে আছি। আমাদের জন্য দোয়া করবেন।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি বারাক ওবামা ও হিলারি ক্লিনটনসহ বিশ্বের ১৬০ জন ব্যক্তি ড. ইউনূসের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি খোলাচিঠি দিয়েছেন। ১০০ জনের বেশি নোবেলজয়ীর দেওয়া ওই চিঠিতে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার বিচারকাজ স্থগিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে চিঠিতে বিগত দুটি নির্বাচনের বৈধতার সংকট ছিল জানিয়ে সামনের নির্বাচনের দিকে তাদের নজর রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে এই চিঠির প্রতিবাদ জানিয়ে গত কয়েক দিনে পাল্টা বিবৃতি দিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবীসহ দেশের ৫০ জন সম্পাদক।

সূত্র: আরটিভি নিউজ
আইএ/ ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

Back to top button