ধর্ষিতা নারীর ‘টু ফিঙ্গার’ পরীক্ষা নিষিদ্ধের রায় প্রকাশ
ঢাকা, ৩১ আগস্ট – ধর্ষণ প্রমাণে নারীর শারীরিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে মেডিক্যাল পরীক্ষায় ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ (দুই আঙুলের মাধ্যমে পরীক্ষা) পদ্ধতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। রায় প্রদানকারী বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি একেএম সাহিদুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের সইয়ের পর রায়টি প্রকাশিত হয়েছে।
বুধবার (৩০ আগস্ট) রিটকারী সংগঠন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। ধর্ষণের ভিকটিমদের পরীক্ষার সময় স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা প্রোটোকল কঠোরভাবে অনুসরণ করতে আদালত সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর এবং বিচারপতি এ কে এম শহীদুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চের ৬২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ/চিকিৎসক ভিকটিমকে পরীক্ষা করার সময় এবং তদন্ত কর্মকর্তারা ধর্ষণের মামলার তদন্ত করার সময় ভিকটিমের পূর্ববর্তী যৌন অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করবেন না এবং মেডিকেল রিপোর্টে ‘যৌন সম্পর্কে অভ্যস্ত’- এ ধরনের অবমাননাকর শব্দ মতামত দেওয়া যাবে না।
টু ফিঙ্গার টেস্টের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে ছয়টি মানবাধিকার সংস্থা এবং দুজন চিকিৎসক রিট আবেদন করেন। শুনানি শেষে ২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল হাইকোর্ট টু ফিঙ্গার টেস্ট নিষিদ্ধ করার রায় দেন।
রিট আবেদনকারীরা হলেন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসকে), বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ব্র্যাক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, নারীপক্ষ, ডা. রুচিরা তাবাসসুম নাভেদ এবং ডা. মোবারক হোসেন খান।
রিট আবেদনে তারা বলেন, ধর্ষণের ক্ষেত্রে টু ফিঙ্গার টেস্টের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এটা অপমানজনক, অবমাননাকর এবং নারীদের মর্যাদার মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন। এই পরীক্ষা অসম্মানজনক প্রকৃতির হওয়ায় অনেক নারী এই পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে অস্বীকার করেছেন এবং তারা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
‘Health Response to Gender Based Violence- Protocol to Health Care Provider’-এ প্রোটকলটি সকল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ, ফিজিশিয়ান যারা ধর্ষণের শিকার নারীর ডাক্তারি (মেডিকো-লিগ্যাল) পরীক্ষা করে, পুলিশ কর্মকর্তা যারা ধর্ষণের মামলার তদন্ত করেন এবং নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের মামলার সরকারী প্রসিকিউটর এবং আইনজীবীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে।
হাইকোর্ট আরও বলেছেন, ধর্ষণের পরীক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ মতামতের জন্য ভিকটিমকে অবশ্যই একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠাতে হবে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন ও শারমিন আক্তার। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এএসএম নাজমুল হক।
সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
আইএ/ ৩১ আগস্ট ২০২৩