‘ড. ইউনূসের পক্ষে নোবেলজয়ীদের বিবৃতি, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার উপর অযাচিত হস্তক্ষেপ’
ঢাকা, ২৯ আগস্ট – শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহম্মদ ইউনূসের পক্ষে শতাধিক নোবেল বিজয়ীসহ ১৭৫ জনেরও বেশি বিশ্বনেতাদের বিবৃতিকে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার উপর অযাচিত হস্তক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম। এ সময় বিশ্বনেতাদের বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে দুদক আইনজীবী আদালতে এসে নোবেলজয়ীদের বিচার পর্যবেক্ষণের আহ্বান জানান। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে এনেক্স ভবনের সামনে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিশ্বনেতারা বাংলাদেশের আইন বিচার বিভাগকে না জেনে, পর্যালোচনা না করে অযাচিতভাবে বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ করছেন। তারা আদালতে ড. ইউনূসের মামলা নিয়ে এত মাতামাতি করছেন কেন আমার বুঝে আসে না।
বিশ্বনেতাদের বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে খুরশীদ আলম খান বলেন, বাংলাদেশে আসুন, দেখুন কত স্বচ্ছতার সাথে ড. ইউনূসের মামলার বিচারকাজ চলছে। শুধু ড. ইউনূসের কথায় বাংলাদেশের বিচার বিভাগ নিয়ে বিরূপ ধারণা পোষণ করবেন না।
গতকাল সোমবার (২৮ আগস্ট) নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বর্তমান বিচারিক কার্যক্রম স্থগিতের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর খোলা চিঠি পাঠিয়েছেন ১৭৫ জন বিশ্বনেতা। ওই চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে ১০০ জনেরও বেশি নোবেল বিজয়ীসহ রাজনীতি, কূটনীতিক, ব্যবসা, শিল্পকলা ও শিক্ষাক্ষেত্রের অগ্রগণ্য ব্যক্তিবর্গ রয়েছে।
সোমবারের ওই চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের একজন, রেজাল্টস অ্যান্ড সিভিক কারেজের প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ডেলি-হ্যারিস এক বিজ্ঞপ্তিতে চিঠিটি প্রকাশ করেছেন।
চিঠিতে সই করা বিশ্বনেতাদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট হোসে রামোস-হোর্তা, আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসন, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, মেক্সিকোর সাবেক প্রেসিডেন্ট ভিসেন্ট ফক্স, সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর, রোটারি ইন্টারন্যাশনালের প্রধান নির্বাহী জন হিয়োকো, উইকিপিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা জিমি ওয়েলসের মতো আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব।
এছাড়াও স্বাক্ষরদাতা নোবেলজয়ীদের মধ্যে রয়েছেন শান্তিতে শিরিন এবাদি, অ্যালবার্ট আর্নল্ড গোর জুনিয়র, তাওয়াক্কোল কারমান, নাদিয়া মুরাদ, মারিয়া রেসা, অস্কার আরিয়াস সানচেজ, রসায়নে পিটার অ্যাগ্রে, টমাস আর চেচ, মার্টিন চালফি, অ্যারন সিচানোভার, জোয়াকিম ফ্রাঙ্ক, ওয়াল্টার গিলবার্ট, রিচার্ড হেন্ডারসন, অর্থনীতিতে অলিভার হার্ট, ফিন ই কিডল্যান্ড, পল আর মিলগ্রম, সাহিত্যে হার্টা মুলার, ওরহান পামুকসহ অন্যান্যরা।
চিঠির শুরুতে ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’ সম্বোধন করে লেখা হয়েছে- আমরা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, নির্বাচিত কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের নেতার পাশাপাশি বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে লিখছি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে আপনাদের জাতি যেভাবে প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে আমরা তার প্রশংসা করি।
কিন্তু, সম্প্রতি বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি যে হুমকি দেখেছি তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা বিশ্বাস করি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া এবং নির্বাচনে প্রশাসন দেশের সব বড় দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগের দুটি জাতীয় নির্বাচনে বৈধতার অভাব ছিল।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে মানবাধিকারের প্রতি যে হুমকি আমাদের উদ্বিগ্ন করে তা হলো- নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের মামলা। আমরা উদ্বিগ্ন, সম্প্রতি তাকে টার্গেট করা হয়েছে। এটা ক্রমাগত বিচারিক হয়রানি বলেই আমাদের বিশ্বাস। এর আগে ৪০ জন বিশ্বনেতা তার নিরাপত্তা এবং স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে আপনার কাছে যে আবেদন করেছিলেন এই চিঠিটি তার ওপর ভিত্তি করে গড়ে তোলারই চেষ্টা।
আমরা বিনীতভাবে অনুরোধ করছি, আপনি অবিলম্বে অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে বর্তমান বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করুন।
তারপর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আইন বিশেষজ্ঞদের ভূমিকা রাখার সুযোগসহ আপনার দেশের মধ্য থেকে নিরপেক্ষ বিচারকদের একটি প্যানেল দ্বারা অভিযোগের পর্যালোচনা করা হবে। আমরা নিশ্চিত, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতিবিরোধী এবং শ্রম আইনের মামলাগুলোর যে কোনো পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনার করলে তিনি খালাস পাবেন। আপনি জানেন, ‘কীভাবে সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ আন্তর্জাতিক অগ্রগতির জন্য একটি শক্তি হতে পারে’- এ নিয়ে প্রফেসর ইউনূসের কাজ আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণামূলক।
সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশিরা কীভাবে বৈশ্বিক অগ্রগতিতে অবদান রেখেছেন তিনি তার একটি প্রধান উদাহরণ। আমরা আন্তরিকভাবে কামনা করি তিনি যেন নিপীড়ন বা হয়রানি মুক্ত হয়ে তার উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
চিঠির সমাপ্তি টানা হয়েছে এভাবে ‘আমরা আশা করি, আপনি এই আইনি সমস্যাগুলোর সমাধান একটি সমীচীন, নিরপেক্ষ এবং ন্যায়সংগত পদ্ধতিতে নিশ্চিত করবেন। এর পাশাপাশি আসছে দিনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন এবং সব ধরনের মানবাধিকারের প্রতি সম্মান (প্রদর্শন) নিশ্চিত করবেন। সামনের দিনগুলোতে কীভাবে এই বিষয়গুলোর সমাধান করা হয় তা ঘনিষ্ঠভাবে নজরে রাখার জন্য আমরা বিশ্বের লাখ লাখ উদ্বিগ্ন নাগরিকদের শিবিরে যোগ দেব।
সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
আইএ/ ২৯ আগস্ট ২০২৩