শেরপুর, ২৫ ডিসেম্বর- বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে শেরপুরের সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় এলাকার তাঁতশিল্প। এক সময় আদিবাসী পল্লীতে দিনরাত এসব তাঁতের খটখট আওয়াজ পাওয়া গেলেও আজ সে শব্দ তো দুরের কথা তাঁতশিল্পের সাথে জড়িত কারিগর এবং তাঁতের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই ভার হয়ে উঠেছে। হঠাৎ দুটি একটি গ্রামে সে তাঁতশিল্পের ধ্বংসস্তূপের মতো পড়ে থাকতে দেখা যায় আদিবাসীদের ঐতিহ্যের ধারক-বাহক তাঁত মেশিনগুলো।
এক সময় এ এলাকার গারো, কোচ, ডালু, বানাই, হদি, বর্মনসহ বিভিন্ন আদিবাসী গোত্রের মানুষ নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক নিজেরাই তৈরি করে ব্যবহার করতো। যাদের তাঁত ছিল না তারা গ্রামের ওই সব তাঁতের তৈরি করা গামছা, লুঙ্গি, দক শাড়ী, দক মান্দা, বিছানার চাদরসহ বিভিন্ন পোশাক কিনে ব্যবহার করতো। কিন্তু এখন কালের কড়াল গ্রাসে সে ঐতিহ্য হারিয়ে তারা বাঙালিদের পোশাক পড়তে বাধ্য হচ্ছে।
শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় এলাকার সীমান্তের নালিতাবাড়ি, ঝিনাইগাতি ও শ্রীবরদীসহ জেলার সদর ও নকলা উপজেলা মিলিয়ে প্রায় ২০ হাজার আদিবাসীর বসবাস। এদের মধ্যে কেউ কেউ শতশত বছর ধরে তাদের ঐতিহ্য ধরে রেখে নিজেদের পোশাক নিজেরাই তৈরি করে ব্যবহার করে আসলেও সম্প্রতি জীবন-জীবিকার তাগিদে তাঁতশিল্প ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গিয়েছে। আবার কেউ কেউ সুতার মূল্য বৃদ্ধিসহ নানা প্রতিকুল পরিবেশের কারণে প্রায় ৮ থেকে ১০ বছর আগেই তাদের তাঁত বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। ওই সব আদিবাসী গারো ও কোচ সম্প্রদায়ের বাড়িতে বিলুপ্তপ্রায় কালের সাক্ষী হিসেবে এখনও দু চারটে ঘুণ ও উইয়ে ধরা কাঠের তাঁত মেশিন চোখে পরে।
এক সময়কার তাঁত শিল্পের সাথে জড়িত গারো ও কোচ তাঁতিরা জানান, তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক শিল্পকে পুনরায় ফিরিয়ে আনতে সরকারী সহযোগিতার একান্ত প্রয়োজন।
ঝিনাইগাতীর রাংটিয়া এলাকার আশির বেশি বয়েসী জাগেন্দ্র কোচ জানান, বেশ কয়েক বছর আগে ওয়ার্ড ভিশন এর সহায়তায় একটি তাঁত কারখানা গড়ে তোলেন তিনি। কিছুদিন ভালোভাবে চলার পর সুতার দর বৃদ্ধি, শ্রমিক সংকটসহ নানাবিধ কারণে প্রায় ৫ থেকে ৬ বছর আগে এই তাঁতশিল্প বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। এখন তার তাঁতের যন্ত্রাংশগুলো অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন : স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার মারধরের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বাবা-মা
তাঁত শ্রমিক এক আদিবাসী নারীরা জানান, এখানে কাজ করে যে মজুরী তারা পেয়েছেন, তা দিয়ে তাদের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা হওয়ায় অনেকেই এ পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন। কেউ কেউ আবার একটু আগ বাড়িয়ে আরও একটু স্বাচ্ছন্দ্যের আশায় নিজ ভিটে মাটি ছেড়ে ঢাকা বা চট্টগ্রামের মত শহরে পাড়ি জমিয়েছেন।
এসব তাঁতে গামছা, লুঙ্গি, মহিলাদের দক শাড়ী, বিছানার চাদরসহ বিভিন্ন পোশাক বুনানো হতো এবং এসব পোশাকের চাহিদাও ছিলো প্রচুর। গ্রাম থেকেই সব বিক্রি হয়ে যেতো। তাঁত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নিজস্ব ঐতিহ্যের পোশাক না পেয়ে বাঙালিদের শাড়ী পড়তে বাধ্য হয়েছেন বলে ক্ষোভ জানিয়েছেন আদিবাসী সম্প্রদায়ের অনেক নারী।
এ শিল্পকে পুনরায় ফিরিয়ে আনতে সরকারের পক্ষ থেকে সকল প্রকার সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ।
সূত্রঃ সময় নিউজ
আডি/ ২৫ ডিসেম্বর