জাতীয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধুকে যে সম্মাননাপত্র দিতে পারেনি

ঢাকা, ১৬ আগস্ট – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে সুপরিচিত ছাত্রদের মধ্যে অন্যতম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ৬১ বছর আগে বহিষ্কার করে যে ‘ঐতিহাসিক ভুল’ করেছিল তা ২০১০ সালের ১৪ আগস্ট সংশোধন করলেও প্রথিতযশা এ বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এই মহান নেতাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মান জানাতে পারেনি।

ঢাবি কর্তৃপক্ষ বঙ্গবন্ধুকে প্রদানের জন্য একটি মানপত্রও প্রস্তুত করেছিল। এ লক্ষ্যে এক বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু তার আগেই সেদিন ভোররাতে বঙ্গবন্ধু তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্য শাহদাৎ বরণ করায় তা আর সম্ভব হয়নি।

শিক্ষক, ছাত্র ও কর্মচারীদের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুকে তৎকালীন উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. আব্দুল মতিন চৌধুরীর এই মানপত্রটি প্রদান করা কথা ছিল। ঢাবি ক্যাম্পাসের শিক্ষক-ছাত্র কেন্দ্র (টিএসসি)-তে ওই অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন চ্যান্সেলর বঙ্গবন্ধুর এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের সামনে বক্তব্য রাখার ও তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করার কথা ছিল।

২০০৯ সালের ২ ডিসেম্বর ঘটনাক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনের একটি কক্ষ থেকে ঐতিহাসিক মানপত্রটির সন্ধান পাওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ডেপুটি রেজিষ্ট্রার মো. আমির হোসেন কক্ষটিতে কিছু অফিসিয়াল নথি খুঁজতে গিয়ে মানপত্রটি দেখতে পান। ওই কক্ষে পুরানো কাগজপত্র এবং নথি সংরক্ষিত ছিল।

তৎকালীন ঢাবি ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বাসসকে বলেন,আমির হোসেন আমার কাছে হাতে লেখা ও কাঠের ফ্রেমে বাঁধানো উদ্ধৃতিটি তুলে দেন। এটি এখন নতুন প্রজন্মের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান।

নথি হস্তান্তরের সময় তার কেমন প্রতিক্রিয়া হয়েছিল জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. আরেফিন বলেন, ওটা হাতে নিয়ে আমি বিস্ময়াভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম। অধ্যাপক মতিন চৌধুরী চারুকলা অনুষদের শিক্ষকদের দিয়ে হাতে লেখা মানপত্রটি প্রস্তুত করেছিলেন। কিন্তু এটা আর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন চ্যান্সেলর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে সুপরিচিত ছাত্র শেখ মুজিবকে প্রদান করা হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আন্দোলনে ভূমিকা রাখায় শেখ মুজিবকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের ছয় দশক পর ২০১০ সালে বঙ্গবন্ধুর ৩৫তম শাহাদাৎ বার্ষিকী পালনকালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে বহিষ্কারের আদেশটিকে ‘অগণতান্ত্রিক ও অন্যায়’ অভিহিত করে বহিষ্কারের আদেশটি প্রত্যাহার করে।

১৯৪৯ সালের ২৬ মার্চ তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে বহিষ্কার করেছিল। বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহারের জন্য কিছু শর্ত জারি করা হয়েছিল। কিন্তু, তৎকালীন ঢাবির আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র বঙ্গবন্ধু সেই শর্ত মেনে নেননি। কারণ তিনি ছিলেন একজন অবিসংবাদিত নেতা এবং সর্বদা দৃঢ় কণ্ঠে যেকোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন।

অধ্যাপক আরেফিন বলেন, বহিষ্কারাদেশটি প্রত্যাহারের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠানটির ৬১ বছর আগের একটি ঐতিহাসিক ভুল সিদ্ধান্তের সংশোধন করেছে।

বঙ্গবন্ধুকে ঢাবির মনোগ্রাম লেখা দুটি রূপার ক্রেস্ট ও একটি কাসকেটও দেয়ার কথা ছিল। মানপত্রটি পাওয়ার কয়েকদিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের একটি সেফ থেকে সেগুলো পাওয়া গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সালে এগুলো স্মারক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করে। এগুলো এখন প্রদর্শনের জন্য ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে রাখা হয়েছে- যা বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের সাক্ষ্য বহন করে। এই বাড়িতে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়।

অধ্যাপক আরেফিন আরো বলেন, ওই অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর জন্য একটি বিশেষ চেয়ার আনা হয়েছিল। ২০১৬ সালের আগ পর্যন্ত সেই চেয়ারটি সম্পর্কে কেউ জানতো না। ২০১৬ সালে ঢাবি শিক্ষক-ছাত্র কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক ড. মহিউজ্জামান চৌধুরী কেন্দ্রের একটি স্টোররুমে এটির সন্ধান পান। সূত্র: বাসস

সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
আইএ/ ১৬ আগস্ট ২০২৩

Back to top button