জাতীয়

নারীর ইজ্জতকেও ‘গুম’ করছে সরকার

ঢাকা, ১৩ আগস্ট – বিএনপির নারী নেত্রীদের রাত-বিরাতে সাজগোজ করিয়ে বিদেশিদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়- তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের এ ধরনের বক্তব্যের জন্য তার বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করতে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ মহিলাদল নেত্রীদের আহ্বান করবে কি না, সংস্থাটির প্রতি এমন প্রশ্ন রেখেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

দলের নারী নেত্রীদের নিয়ে তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, হাছান মাহমুদ প্রতিনিয়ত মিথ্যা কথা বলছেন। তারপরও ভেবেছি, নামের আগে ডক্টরেট লেখা আছে তাই নারীদের নিয়ে তিনি অশ্লীল কথা বলবেন না। কিন্তু না, নারীকে অপমান করাই যাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও ইতিহাস তাদের যে কোনো নেতা যতই ডক্টরেট ডিগ্রি থাকুক না কেন ওই একই সংস্কৃতিরই।

রোববার (১৩ আগস্ট) বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির নারী নেত্রীদের নিয়ে তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী মহিলাদলের বিক্ষোভ মিছিল-পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রিজভী এসব কথা বলেন।

গত শুক্রবার (১১ আগস্ট) বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় ড. হাছান মাহমুদ বিএনপির নারী নেত্রীদের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, বিএনপি বুঝতে পেরেছে বিদেশিদের পেছনে ছুটে কোনো লাভ নেই। রাত-বিরাতে দলের নারী নেত্রীদের সাজগোজ করিয়ে বিদেশিদের কাছে ধর্না দেওয়া বন্ধ করতে বিএনপির প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

ওই বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বিদেশিদের কাছে নয়, যেতে হলে জনগণের কাছে যেতে হবে। রাত বিরাতে নারী নেত্রীদের সাজগোজ করিয়ে বিদেশিদের কাছে নিয়ে ধর্না দেওয়া দয়া করে বন্ধ করুন। এতে কোনো লাভ হয় না। ওরাসহ (মহিলা নেত্রী) আপনারা যান, আমরা (সরকার) জানি।

তথ্যমন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্যকে ‘অশ্লীল, কুরুচিপূর্ণ ও বিতর্কিত’ আখ্যা দিয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সম্প্রতি তাদের কিছু নেতা প্রতিবেশী দেশ (ভারত) সফর করে এসেছেন। সেখানে আশানুরূপ কিছু পেয়েছেন বলে আমার মনে হয় না। তাই এখন তারা বিএনপির নারী নেত্রীদের নিয়ে খারাপ মন্তব্য করছেন।

রিজভী বলেন, দেশটা এমন পর্যায়ে চলে গেছে মা-বোন, স্ত্রী-কন্যাদের নিয়ে বসবাস করার মত আর অবস্থা নেই। এদেশে যারা নিজেদের মন্ত্রী বলে দাবি করে তারা লাগামহীন। তারা জানে তাদের ভোট করতে হবে না। সুষ্ঠু ভোটের দরকার নেই। জনগণের কাছে যেতে হবে না। তাই তারা যা ইচ্ছা করে, যা ইচ্ছা বলে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে, চৌধুরী আলমকে গুম করেছে, হুমায়ুন পারভেজ, সুমন, জাকিরকে গুম করেছে। গুম করতে করতে তারা এখন নারী সমাজের ইজ্জত গুম করা শুরু করেছে। বাংলাদেশে আজ নারী সমাজ নিরাপদ নয়।

রিজভী বলেন, হাছান মাহমুদকে নিয়ে আমাদের মহিলাদলের নেত্রীরা অনেক মন্তব্য করলেও কখনো অশ্লীল মন্তব্য করেন না। এই হাছান মাহমুদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সিনিয়র একজন নেত্রী প্রয়াত সাজেদা চৌধুরী ‘বেয়াদব’ শব্দটা উচ্চারণ করেছিলেন। সুতরাং, হাছান মাহমুদের কাছ থেকে সভ্যতা ও শৃঙ্খলা জনগণ আশা করতে পারে না। এমনকি আওয়ামী লীগের কাছ থেকেও না।

বিএনপির এ মুখপাত্র আরও বলেন, অহংকার আওয়ামী লীগকে পেয়ে বসেছে। তাদের নেতারা সভা-সমাবেশে অশ্লীল বক্তব্য দিচ্ছেন। কাউকে পরোয়া করছেন না। তারা মনে করছেন, যা বলবেল জনগণ তা-ই বিশ্বাস করবে। আর জনগণ বিশ্বাস না করলেও কিছু যায় আসে না। কীসের বিরোধী দল, কীসের বিএনপি, কীসের মহিলা দল, কীসের নারী নেত্রী, তারা যখন-তখন যা ইচ্ছা করবে, যা ইচ্ছা বলবে।

রিজভী বলেন, অহংকার পতনের মূল। আওয়ামী লীগও এখন পতনমুখী। যে কোনো মুহূর্তে আমরা পতনের ধ্বনি শুনতে পাবো। এরই মধ্যে সেই আওয়াজ ওঠা শুরু হয়েছে।

তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা তিনি আরও বলেন, নারী নেত্রীদের নিয়ে আপনি (হাছান মাহমুদ) যে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন এটি চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ। অনেক নারী নেত্রী আপনার পদত্যাগ দাবি করেছেন। কিন্তু বাস্তবতা উল্টো। আওয়ামী লীগের কোনো নেতা বিএনপিকে নিয়ে অশ্লীল বা কঠোর সমালোচনা করলে তাকে প্রমোশন দেওয়া হয়। আগামীতে তাকেও (তথ্যমন্ত্রী) শেখ হাসিনা প্রমোশন দিতে পারেন। এটাই আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য ও ইতিহাস।

ডিবি কার্যালয়ের একটি ঘটনা উল্লেখ করে রিজভী বলেন, মামলা করতে হলে থানায় অথবা আদালতে যেতে হয়। কিন্তু কয়েকদিন আগে দেখলাম গাড়িবহর নিয়ে অভিযোগ দিতে গেল (হিরো আলম) মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তখন বললেন- আমাদের কাছে অভিযোগ নিয়ে যে কেউ আসতেই পারে। পরে দেখলাম ওই ব্যক্তিকে দিয়ে মানহানি মামলা করানো হলো। আমি মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে বলতে চাই, অশ্লীল বক্তব্যের জন্য হাছান মাহমুদের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করতেও কি মহিলাদল নেত্রীদের আহ্বান বা পরামর্শ দেবে ডিবি। দেখি, ডিবি পুলিশ তার বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করায় কি না।

মহিলাদলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে সংগঠনটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

পরে তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে একটি ঝাড়ু মিছিল দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে নয়াপল্টনে সামনে শেষ হয়। এসময় তথ্যমন্ত্রীর কুশপুত্তলিকা দাহ করেন মহিলাদলের নেতাকর্মীরা।

সূত্র: জাগো নিউজ
আইএ/ ১৩ আগস্ট ২০২৩

Back to top button