রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত নয় বুয়েটের আটক শিক্ষার্থীরা’
ঢাকা, ০১ আগস্ট – সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে গ্রেপ্তার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা কোনো ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন তাদের অভিভাবকরা।
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেন তারা।
অভিভাবকরা বলেন, আমাদের সন্তানরা রাষ্ট্রীয় কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত নয়। তারা কোনো রাজনীতির সাথেও জড়িত নয়। এ রকম ষড়যন্ত্রমূলক প্রচেষ্টা কারা করছে এবং কোন উদ্দেশ্যে করছে সে বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা দ্রুত তাদের মুক্তি চাই।
অভিভাবকদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আটক শিক্ষার্থী আলি আম্মার মুয়াজের ভাই আলি আহসান জুনায়েদ।
তিনি বলেন, গত ২৯ জুলাই আমাদের সন্তান/স্বজনেরা ক্যাম্পাসের বন্ধুদের সাথে সুনামগঞ্জের টাংগুয়ার হাওরে ঘুরতে যান। ভ্রমণের এক পর্যায়ে ৩০ জুলাই বিকেলে পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। রোববার বিকেল থেকে তাদের ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না। আমরা মনে করেছি ট্যুরে আছে, তাই ব্যস্ত আছে হয়তো। কিন্তু পরে রাতে বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি, ভ্রমণকারী সবাইকে তাহিরপুর থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ। এরপর থেকে তাদের বিষয়ে খোঁজখবর জানার জন্য আমরা ওসি ও এসপিকে বারবার ফোন করেছি, কিন্তু তারা কেউ ফোন রিসিভ করেননি। তাই আমরা জানতেও পারছিলাম না কেন তাদের আটক করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পরশু রাতেই আমাদের সন্তান/স্বজনেরা ফোন করে এনআইডির ছবি চায়। কিন্তু তখনও অভিভাবকেরা জানতেন না যে তাদের আটক করা হয়েছে। তাদের দিক থেকেও আর কিছু বলতে দেয়া হয়নি। সোমবার বিকেলে আমরা জানতে পারি যে, তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দেয়া হয়েছে। তারা নাকি নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনার জন্য সেখানে গেছে।
আমরা মনে করি, এরকম হাস্যকর ও বানোয়াট অভিযোগ সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও দুরভিসন্ধিমূলক। স্থানীয় ওসি এবং এসপিকে ফোন দেয়ার পাশাপাশি আমরা রাত থেকে ভিসি স্যারকেও ফোন দিয়েছি অসংখ্যবার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা কারও সাথেই যোগাযোগে সক্ষম হইনি।
তিনি আরও বলেন, গতকাল সেমাবার সন্ধ্যায় আমরা কয়েকজন অভিভাবক বুয়েটের ভিসি স্যারের সঙ্গে দেখা করতে যাই। সেখানে গিয়ে ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের সাথে দেখা হয় এবং তাকে পুরো বিষয়টি অবহিত করি। আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, ছাত্রকল্যাণ পরিচালক মহোদয় আমাদের জানান যে, তাদেরও পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে গতকাল বিকেল ৪টা বা ৫টার দিকে। এরকম ষড়যন্ত্রমূলক প্রচেষ্টা কারা করছে এবং কোন উদ্দেশ্যে করছে এ বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন এবং আমাদের সন্তানদের শিক্ষাজীবন ও ক্যারিয়ার হুমকির সম্মুখীন সেটা জানিয়েছি আমরা। এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধও জানিয়েছি আমরা। তারা তাদের প্রসিডিওর অনুযায়ী চেষ্টা করবেন বলেছেন।
শিক্ষার্থীদের আটকের বিষয়ে গণমাধ্যমে একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু সাঈদ। এই বিজ্ঞপ্তির একটি অংশে বলা হয়েছে- ঘটনাস্থল থেকে আটক ব্যক্তিদের তল্লাশি করে তাদের কাছ থেকে ৩৩টি বিভিন্ন মডেলের মোবাইলফোন, ছাত্র শিবিরের বিভিন্ন কার্যক্রম সংক্রান্ত স্ক্রিনশটের কপি, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কল্যাণ তহবিল সংক্রান্ত প্রচারপত্র, সদস্য ও সাথীদের পাঠযোগ্য কোরআন ও হাদিসের সিলেবাস, কর্মী ঘোষণা অনুষ্ঠান সংক্রান্ত স্ক্রিনশটের কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
এসব মালামাল জব্দের বিষয়টি বানোয়াট দাবি করে আলি আহসান জুনায়েদ বলেন, একটি বিষয় পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, জব্দকৃত মালামাল হিসেবে কতগুলো জিনিসপত্র তাদের কাছ থেকে উদ্ধারের যে প্রসঙ্গ অবতারণা করা হয়েছে এটি অত্যন্ত হাস্যকর এবং পরিষ্কারভাবে বানোয়াট বিষয়। আর টাঙ্গুয়ার হাওরে গিয়ে কেউ নাশকতার পরিকল্পনা করবে এমন অভিযোগও হাস্যকর। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের সাথে সাক্ষাৎ হলে তারা এটা পরিষ্কার করেছে যে, তাদের কাছে এবং সাথে থাকা মোবাইলে প্রত্যাশিত কিছু না পেয়ে তাদের সামনেই জব্দকৃত মালামাল হিসেবে সেগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে এবং ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড দিয়ে প্রিন্ট করা হয়েছে মামলা সাজানোর জন্য।
রোববার বিকেলে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা এলাকায় টাঙ্গুয়ার হাওরের পাটলাই নদী দিয়ে ট্যাকেরঘাট পর্যটন এলাকায় যাওয়ার পথে বুয়েটের ৩৪ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা সবাই ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মী বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আটকের পর পুলিশ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৩৩টি মোবাইল ফোন, ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কাগজপত্র, সংগঠনের তহবিলসংক্রান্ত প্রচারপত্র, সংগঠনের সাথি ও সদস্যদের পাঠযোগ্য সিলেবাস, কর্মী ঘোষণাসংক্রান্ত কাগজপত্র জব্দ করেছে। পুলিশের দায়ের করা মামলার জব্দ তালিকায় এসবের উল্লেখ রয়েছে।
পুলিশের তথ্য মতে, গ্রেপ্তার ৩৪ জনের মধ্যে ২৪ জন্য বুয়েটের বর্তমান শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছয়জন প্রথম বর্ষ, ছয়জন দ্বিতীয় বর্ষ, পাঁচজন তৃতীয় বর্ষ, পাঁচজন চতুর্থ বর্ষ এবং দুজন স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে পড়ছেন। বাকি ১০ জনের মধ্যে সাতজন বুয়েটের সদ্য সাবেক শিক্ষার্থী। অন্য তিনজনের মধ্যে দুজন এবার এসএসসি পাস করেছেন, একজন বুয়েটের এক শিক্ষার্থীর বাসায় কাজ করেন।
সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) রাজন কুমার দাস বলেন, মামলার তদন্তের স্বার্থেই আসামিদের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করা হবে।
সরকারের বিরুদ্ধে ‘গোপন ষড়যন্ত্র ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করার আশঙ্কায়’ গত রোববার বিকেলে টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে ৩৪ জনকে আটক করা হয়। গতকাল সোমবার বিকেলে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে পুলিশ বাদী হয়ে তাহিরপুর থানায় একটি মামলা করে। এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বিকেলে তাদের আদালতে হাজির করলে আদালতের বিচারক ৩২ জনকে কারাগারে এবং দুজন কিশোর হওয়ায় তাদের কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এদিকে টাঙ্গুয়ার হাওরে রোববার বিকেলে পুলিশের এই বিশেষ অভিযান নিয়ে এলাকায় নানা মহলে আলোচনা চলছে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, হাওরে এই মৌসুমে অনেক পর্যটক আসেন। এদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্যসংখ্যক থাকেন শিক্ষার্থী।
জেলা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত ঢাকা থেকে পাওয়া গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান চালানো হয়েছে। নেয়া হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তাও। পরে তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ ও তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন আলামত জব্দ করার পরই তাদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
আইএ/ ০১ আগস্ট ২০২৩